বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪

গুলিস্তানের তামার কয়েন ‘প্রত্নতাত্ত্বিক’ বলে ৫ কোটি টাকায় বিক্রি

যা যা মিস করেছেন

রাজধানীর গুলিস্তান থেকে কেনা হয় তামার কয়েন। যার দাম ৪০-৫০ টাকা। এরপর সেসব কয়েন প্রত্নতাত্ত্বিক দাবি করে বিক্রি হতো কোটি টাকায়। টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে ভুয়া সেসব কয়েনের দরদাম চলতো পাঁচতারকা হোটেলে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা নিজেদের লোকদের বিক্রেতা, রসায়নবিদ ও দালাল সাজিয়ে এমন পরিবেশ তৈরি করতেন যে, যার ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেকেই।

সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের তিন দালাল ও কথিত এক রসায়নবিদকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। যারা তামার তৈরি ৫০ টাকার কয়েন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে বিক্রি করে আসছিলেন কোটি টাকায়। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪২টি ধাতব মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।

পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাভারে অভিযান চালিয়ে চক্রের আরেক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জের একটি বাঁশঝাড় থেকে উদ্ধার করা হয় ১১ লাখ টাকা।

গ্রেফতাররা হলেন- সাইফুল ইসলাম ওরফে বিষ্ণু মালো ওরফে শঙ্কর মালো ওরফে শংকর ওরফে স্বপন, সাইদুল ইসলাম জিহাদ ওরফে রাজা, সৈয়দ মুস্তাকিন ওরফে অহিদুজ্জামান ও মতিন মোল্লা ওরফে মোল্ল্যা আতিক।প্রতারণার ধরন প্রসঙ্গে ডিবি জানায়, এসব কয়েন ক্রেতার সামনে স্কচটেপে মোড়ানো প্যাকেট থেকে খোলা হয়। কার্বন কাগজের আরেকটি প্রলেপ ছিঁড়ে কয়েন বের করে ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে পরীক্ষা করেন কথিত রসায়নবিদ।

সাজানো পরীক্ষায় সেই রসায়নবিদ চার ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করেন। নিখুঁত পরীক্ষার পর তিনি জানান, এর মধ্যে দুটি কয়েন আসল। ক্রেতা-বিক্রেতা ও দালালের উপস্থিতিতে দুটি কয়েনের দাম নির্ধারণ হয় পাঁচ কোটি টাকা। কথিত ৪০০ বছরের পুরোনো দুটি কয়েনের দামে ক্রেতা সন্তুষ্ট হয়ে ৪০ লাখ টাকা অগ্রিম দেন। এরপর বাকি টাকা পরিশোধের তারিখ ঠিক করে নেন বিদায়।

নির্দিষ্ট তারিখে বাকি টাকা পরিশোধ ও কয়েন নিতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। খোঁজ নেই দালাল বা বিক্রেতার। এরপর বাধ্য হয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন ক্রেতা।

প্রতারিত হওয়া এক ক্রেতা বলেন, কয়েন বিক্রির কথা বলে আমাকে নিয়ে গেছে। তখন আমার কাছে বিক্রির কথা বলে স্ট্যাম্প করে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছে। এই ভণ্ড-প্রতারকরা এমন পরিবেশ তৈরি করে যে, মানুষের তখন আর বিবেক-বুদ্ধি কাজ করে না।পুলিশ জানায়, শত বছরের পুরোনো কয়েন দরকার- এমন লোকদের টার্গেট করে চক্রটি। পরে নিজেরাই দালাল ও বিদেশি ক্রেতা সেজে কোনো তারকা হোটেলে বসে দরদাম ঠিক করে।

পুলিশ জানায়, আসলে কয়েনগুলো পুরোনো নয়। এগুলো গুলিস্তান থেকে কিনে আনা হয়, যা শুধু তামা দিয়ে তৈরি।

এ বিষয়ে ডিবির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মশিউর রহমান বলেন, সাধারণত তামা দিয়ে এসব কয়েন তৈরি হয়। যাতে লিখে দেওয়া হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাম। এই কয়েনগুলো একদল প্রতারক গুলিস্তান থেকে কিনে নেয়। তারপর চক্রটি বাংলাদেশি সরলমনা, কিন্তু লোভী টাইপের লোকদের বিভিন্ন হোটেলে নিয়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে দেখায় এবং একেকটির দাম হাঁকে ৪-৫ কোটি টাকা।

ডিসি আরও বলেন, আসলে এই কয়েনের মূল্য ৪০-৫০ টাকা। কিন্তু সেটার জন্য প্রতারকরা কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, এরকম প্রতারক চক্র বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। এমন অস্বাভাবিক কোনো প্রলোভন থেকে সবাইকে সাবধান হওয়া জরুরি।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security