আরিফুর রহমান,(ঝালকাঠি প্রতিনিধি): আদালতে মামলা মোকদ্দমা দায়েরে জাতীয়পরিচয়পত্র অথবা জন্মনিবন্ধনের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার দাবিতে ঝালকাঠিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হযেছে।
একটি মিথ্যা মামলায় দুই বছর ভোগান্তির পর অব্যহতি পেয়ে রোববার ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সমম্মেলন করেন ওয়ার্ল্ড নিম অর্গানাইজেশন (বম্বে ভারত) ভাইসচেয়ারম্যান (পরিচালক এশিয়া) ও নিম অর্গানিক লিমিটিড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ নিম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল হাকিম মন্ডল ওরফে ড. নিম হাকিম।
উল্লেখ্য ঝালকাঠির বাদল চন্দ্র মন্ডল (৪৫) নামে এক ব্যাক্তি ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ড. নিম হাকিমের নামে ছয়লাখ টাকা প্রতারনার মিথ্যা অভিযোগ এনে গত ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি নালিশী মামলা দায়ের করে (মামলা নং সিআর ২১৭/১৮)। মামলা দায়েরের সময় ড. নিম হাকিমের স্বাক্ষরিত একটি ভুয়া চুক্তিপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। ওই সময়ের ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ড. নিম হাকিমের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। মামলার কথিত ভুয়া বাদি কৌশলে সমন চাপা দিয়ে পরবর্তিতে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারি করাতে সক্ষম হন।
ঢাকার বাসিন্দা ড. নিম হাকিম সংবাদ সম্মলনে জানান, ঢাকার কাফরুল থানার মাধ্যমে গ্রেফতারী পরওয়ানার খবর পেয়ে তিনি গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠির আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন লাভ করেন। আদালত থেকে মামলার কাগজপত্র সংগ্রহ এবং স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন ঝালকাঠির নবগ্রাম এলাকার ব্রজেন্দ্র নাথ মন্ডলের ছেলে বাদল চন্দ্র মন্ডল তার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা মামলা দায়ের করছেন। পরবর্তীতে নবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জানতে পারেন নবগ্রাম গ্রামে বাদল চন্দ্র মন্ডল নামে কোন লোক ওই গ্রামে বসবাস করে না। খোজ খবর নিয়ে ড. হাকিম জানতে পারেন ঝালকাঠি শহরের মহিলা কলেজ সড়কে বাদল চন্দ্র মন্ডল, পিতা ব্রজেন্দ্র নাথ মন্ডল নামে এক ব্যক্তি রয়েছেন এবং তিনিই মিথ্যা ঠিকানা ব্যবহার করে এ মামলা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে ড. নিম হাকিম অভিযোগ করেন, তার প্রতিষ্ঠিত নিম অর্গানিক কোম্পানীর পন্য মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হয়। অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়ায় এসব পন্য নকল করে বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে আসছিল ঢাকার মগবাজার এলাকার ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান এবং ঢাকায় অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিক রাসেন্দ্রা সিং ভবানী ঠাকুর। তিনি এই দুই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ঢাকায় ফৌজদারী মামলা দায়ের করলে সিআইডি পুলিশ তদন্ত করে ওই দুই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ মামলায় মাহবুবুর রহমান এবং রাসেন্দ্রা সিং ভবানী কিছুদিন হাজতবাস করে জামিনে মুক্তি পেয়ে তাদের নিয়োজিত ঢাকার আইনজীবীর আত্মীয়র মাধ্যমে ঝালকাঠিতে ভুয়া বাদি বানিয়ে ছয়লাখ টাকা আত্মসাতের মিথ্যা মামলা দায়ের করান।
ড. হাকিম বলেন, ১০০ ভাগ মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে সাজা দেয়া যায় না, তবে হয়রানী করা যায়। কথিত মামলায় যেদিন তাকে ঝালকাঠি এসে বাদল মন্ডলের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা নেয়ার তারিখ দেখানো হয়েছে সেদিন তিনি ইন্দোনেশিয়ায় ছিলেন। আর মামলার হাজিরা দেওয়া ছাড়া তিনি কোনদিন ঝালকাঠি আসেন নি। বিদেশ থাকার প্রমানসহ আদালতে ফৌজদারী কার্য্যবিধির ২৪১ (ক) ধারা অনুযায়ী মামলার অভিযোগ থেকে অব্যহতির প্রার্থনা করলে ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের বিচারক এ.এইচ.এম ইমরানুর রহমান ডা. নিম হাকিমকে মামলার দায় থেকে অব্যহতি দেন। ড. নিম হাকিমের দাবি আদালতে মামলা দায়েরের সময় যদি বাদির জাতীয়পরিচয় বা জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি গ্রহণ করা হতো তাহলে তিনি হয়রানীর শিকার হতেন না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি জানান, যেহেতু সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম শুরু করেছে তাই প্রতিটি আদালতে মামলা দায়েরর সময় জাতীয়পরিচয়পত্র অথবা জন্মনিবন্ধনের ব্যবহার করা হলে মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলায় সাধারণ জনগনের হয়রানী অনেকাংশে বন্ধ হতো।