...
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও আমাদের ভাবনা

যা যা মিস করেছেন

সারাবিশ্ব এখন একটি প্রযুক্তিগত বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। যে বিপ্লব পাল্টে দেবে মানুষের দৈনন্দিন জীবন ব্যবস্থার চিরচেনা রূপকে। এতটাই পরিবর্তন আসবে যা মানুষ আগে কল্পনাও করতে পারেনি। জীবন মান উন্নত হবে, আয় বৃদ্ধি পাবে সকল পেশার মানুষেরই। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা কাজে লাগিয়ে পরিবতিত-পরিবর্ধিত হবে শিল্প-অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রই। প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে চলমান এই বিপ্লবেই হচ্ছে “ চতুর্থ শিল্পবিপ্লব”।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই ধারনাটি প্রথম দিয়েছেন বিশ্ব অর্থনীতি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াব। ক্লাউস শোয়াব তার লেখা বই “দ্যা ফোর্থ ইন্ডাস্টিয়াল রেভুল্যুশানে” এই প্রযুক্তিগত বা ডিজিটাল বিপ্লবের ধরণ ও অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই বইটি এখন আমাদের অনেক ভাবাচ্ছে। প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে সমাজও বদলাচ্ছে। পৃথিবীতে এক সময় আদিম সাম্যবাদী সমাজ ছিল। পরবর্তীতে, লাঙ্গল আবিস্কার হলো, কৃষির প্রচলন ঘটল, সেখান থেকে এলো সামন্ততন্ত্র।

এই সময়ে বিজ্ঞানী জেমস ওয়াট ১৭৮৪ সালে বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিস্কারের মাধ্যমে প্রথম শিল্পবিপ্লবের সূচনা করেন। মানবসভ্যতার ইতিহাসে এটি প্রথম শিল্পবিপ্লব নামে পরিচিত। দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব উনিশ শতকের শেষার্ধে শুরু হয়ে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত চলেছিল। তড়িৎ ও অ্যাসেম্বলি লাইনের মাধ্যমে ব্যাপক উৎপাদন এ বিপ্লবের উল্লেখ্যযোগ্য অবদান। তৃতীয় শিল্পবিপ্লব শুরু হয় ১৯৬০ সালে। সেমিকন্ডাক্টর, মেইনফ্রেম কম্পিউটার, পিসি বা পার্সোনাল কম্পিউটার ও ইন্টারনেট আবিস্কার করার মাধ্যমে এই বিপ্লব তৃরান্বিত হয়েছিল। তবে, আগের তিনটি বিপ্লবকেই ছাড়িয়ে যেতে পারে ক্লাউস শোয়াব নিদেশিত এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। এ নিয়েই এখন সারা দুনিয়ায় তোলপাড় চলছে।

ডিজিটাল বিপ্লব বা চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কি? এই নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে আমরা দেখতে পাবো ইন্টারনেট অব থিংস, আপনার বাসার সকল আসবাব ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের সাথে যুক্ত। এই সিস্টেমকেই বলা হয় ইন্টারনেট অব থিংস। যেমন-আপনার বিদ্যুৎতের বিল দেয়া নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না, বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে আপনার স্মার্টফোনে, বাসার কি বাজার নেই তা জানিয়ে দেবে ফ্রিজ। আপনার শরীরে কি পুষ্টি উপাদান বাকী তাও জানিয়ে দেবে আপনার স্মার্টফোনের স্কিন। রোবটিকস দূর নিরাপত্তা, কারখানার বিপদজনক কাজ, স্থাপনার শ্রমিক, কিংবা শ্রেফ নিরাপত্তা প্রহরী বা গৃহস্থালি কাজ সবকাজই করতে শুরু করবে রোবট।

অটোমেশন কারখানার সবগুলো মেশিন এমন একটি সিস্টেমেরে সাথে যুক্ত থাকবে যেটি স্বয়ংক্রিয় চালনা থেকে শুরু করে উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করবে একই বলা হয় অটোমেশন। এতে বাঁচবে শ্রম খরচ, কমবে মানবিক ত্রুটি। একাধিক কাজ যখন একটি যন্ত্র করতে পারবে তখন খরচ নিয়েও আর ভাবতে হবে না।

সুস্থতায় বংশগত রোগ কমাতে আসবে নিরোগ জীন, কঠিন অসুখের প্রতিষেধক। আর সূক্ষাতিসূক্ষ্ন অস্ত্রোপচার করতে ছুরিকাচিঁ ছাড়া কম্পিউটারের দক্ষ হাতের বহুল ব্যবহার শুরু হবে এই বিপ্লবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং পৃথিবীর বিপুল জনসংখ্যা নিয়ে ভিন্ন গ্রহে বসতি গড়তে মানুষকে আর মাথা ঘামাতে হবে না। মানুষকে নিরাপদ রাখতে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন শক্তিশালী কোয়ান্টাম কম্পিউটিং। ডিজিটাল বিপ্লবের বা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই শক্তির চিত্রটি বিশ্বব্যাংকের ২০১৬ সালে প্রকাশিত “ডিজিটাল ডিভিডেন্ডস” শীর্ষক এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে।

এতে, বলা হয়েছে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন একদিনে বিশ্বে-২০ হাজার ৭০০ কোটি ই-মেইল পাঠানো হয়, গুগলে ৪২০ কোটি বিভিন্ন বিষয় খোঁজা হয়। একযুগ আগেও তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে এ পরিবর্তনগুলো ছিল অকল্পনীয়। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের বড় প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে সারাবিশ্বের বিক্রয় ও বিপনন ব্যবস্থায়। এই যুগে সকল কিছুই বিক্রয়যোগ্য। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্যাক্সি কোম্পানি উবারের নিজস্ব কোনো ট্যাক্সি নাই, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিডিয়া ফেসবুকের নিজস্ব কোন কন্টেন্ট নেই, পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শপগুলোর একটি আলীবাবার কোনো গুদাম নেই। সকল বিষয় সম্ভবাপর হয়েছে এই প্রযুক্তিগত বিপ্লবের কারণে।

আসলেই এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আমাদের সমাজবিজ্ঞানী এবং দার্শনিক হারবার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান উল্লেখিত বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ ধারণার সন্নিকটে নিয়ে এসেছে। সারাবিশ্বই এখন একটি গ্রামে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে, আমরা কি প্রস্তুত চতুর্থ এই শিল্পবিপ্লব এগিয়ে নিতে? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এখন আমরা সকলে নিয়ত ভাবছি। সমালোচকরা বলছেন, এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বিশ্বের আসাম্য ও দারিদ্র্য পরিস্থিতিকে অতিমাত্রায় বাড়িয়ে দিবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কর্মসংস্থানের পরিমাণ কমে যাবে। রোবট ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সম্পন্ন করা হবে কাজ। শ্রম বাজারে অল্প কর্মদক্ষ শ্রমিকদের চাহিদা ও বাজার কমে যাবে যা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

তারা আরো বলছেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মানুষের ভাবনায় ফেলবে তাদের তথ্য নিরাপত্তাকেও। তবে আমরা যারা আশাবাদীদের দলে তারা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নেতিবাচক দিকগুলো উত্তরণের পন্থা নিয়ে ভাবতে চাই এবং এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে চাই। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর উচিত হবে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগগুলোকে কিভাবে যথাযোগ্যভাবে ব্যবহার করে লাভবান হওয়ায় যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলা করার জন্য প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ কর্মীবাহিনী তৈরি করতে হবে। প্রযুক্তিগত পণ্য উৎপাদন ও বিপনন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।

যদিও বাংলাদেশ এরই মধ্যে তথ্য প্রযুক্তিতে অনেক ভালো করেছে এবং বর্তমান বিশ্বের আধুনিক সব তথ্য-প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ই-গর্ভনেন্স ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৪টি জেলার ৪৫০১ টি ইউনিয়ন পরিষদের সবকটিই ডিজিটাল নেটওয়ার্কের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দক্ষ কর্মীবাহিনী তৈরি করার জন্য। দেশের তরুণ প্রজন্মকে ডিজিটাল শিক্ষায় দক্ষ করার জন্য কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে আইসিটি বিভাগ। যার মধ্যে রয়েছে লানিং ল্যান্ড আনিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় ৫০ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ করতে পারবেন দেশের তরুণেরা।

পাশাপাশি, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন ও সাবমেরিন ক্রয়ের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন একধাপ এগিয়ে। আশা থাকবে, সামনের দিনগুলোতেও সরকারের ও জনগণের যৌথ উদ্যোগে আমরা এই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগগুলো নিয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধিকে টেকসই করবো।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.