দেশের প্রথম সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মারা গেছেন, যিনি জাতীয় সংসদে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাতবার।
ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোর রাত ৪টা ১০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার আল ইমরান জানান।
গত বছর মে মাসে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সুরঞ্জিত। পরে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালেও চিকিৎসা নেন তিনি।
শুক্রবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ল্যাবএইডে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে শনিবার রাত ৮টার দিকে তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালের সিসিইউতে; পরে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সকালে হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে তিনি নাম্বার ওয়ান বলে আমার মনে হয়। তার মৃত্যুতে বিরাট শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এটা সহজে পূরণ হবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই।”
সত্তরের প্রাদেশিক পরিষদে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্য; স্বাধীন দেশের প্রথম সংসদসহ চার দশকের প্রায় সব সংসদেই নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। বর্তমান সংসদে তিনি ছিলেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
ষাটের দশকের উত্তাল রাজনীতি থেকে উঠে আসা সাবেক এই বামপন্থি নেতা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন।
তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সকালে হাসপাতালে ভিড় করেন আত্মীয় স্বজনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সকাল ৯টার দিকে হাসপাতাল থেকে সাবেক এই মন্ত্রীর মরদেহ তার জিগাতলার বাসায় নেওয়া হলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, স্থানীয় সাংসদ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মাহমুদ, খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতাকর্মীরা জড়ো হন সেখানে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তার মরদেহ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে নেয়া হয়।
সেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ তার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন।
এরপর বিকাল ৩টার দিকে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেওয়া হবে। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও এমপিরা।
সংবদ ভবন থেকে ঢাকা মেডিক্যালের মরচুয়ারিতে তার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে সোমবার সকাল ১০টায় তার মরদেহ নেওয়া হবে সিলেটে। সিলেট থেকে তাকে নেওয়া হবে সুনামগঞ্জে তার নির্বাচনি এলাকা শাল্লায়, সেখান থেকে দিরাইয়ে নেওয়া হবে। দিরাইয়ে তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।