চিকিৎসকদের ‘সেবার মনোভাব নিয়ে’ মানুষের পাশে থাকার তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “বিত্তবানদের সংখ্যা বাড়ছে। এই অর্থ-সম্পদ নিজের কাছে না রেখে চিকিৎসা সেবায় যথেষ্ট অনুদান দিতে পারেন। নিজের নামে একটা ওয়ার্ড করে দিতে পারেন, অ্যাম্বুলেন্স দিতে পারেন। লাইব্রেরিটা উন্নত করে দিতে পারেন।”
চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “একজন ডাক্তারের ওষুধের থেকে মুখের কথায় অর্ধেক অসুখ ভালো হয়ে যায়। আমরা তো রুগী হই মাঝে মাঝে, আমরা বুঝি।
“এই কথাটা মনে রেখে আপনাদের এই মহৎ পেশাটা সততার সাথে করবেন, মানুষকে সেবা করার মনোভাব নিয়ে কাজ করবেন।”
রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বুধবার এই অনুষ্ঠানে ডিগ্রিপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের জীবনে এ দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
“একটি মহৎ পেশায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করতে যাচ্ছেন। মানবতার সেবায় নিবেদিতপ্রাণ হয়ে মানুষের কল্যাণে আপনারা কাজ করবেন।”
আজকের নবীন চিকিৎসকদের সামনে বক্তব্য দিতে এসে ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর তখনকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসকদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃত করেন তার বড় মেয়ে হাসিনা।
জাতির পিতার সেই কথাগুলো ‘স্মরণ রাখার’ আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সব থেকে মেধাবী যারা, তারাই তো মেডিকেলে পড়তে যায়। মেধাবীরা তাদের মেধা দিয়ে, আমরা দেশটাকে কীভাবে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব, সেই সহযোগিতাটা করবেন।”
তিনি আরও বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছিলাম। সেজন্য আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রতিটি হাসপাতালে ওয়েবক্যাম লাগিয়ে দিয়েছি। এছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ক্ষমতায় এসে মোবাইলকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। কারণ এর আগে বিএনপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যবসা করতেন। আমরা এটা উন্মুক্ত করার পর জনগণ মোবাইলে চিকিৎসা সেবা নিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে আমরা ক্ষমতায় আসার পর ১২ হাজার ৭২৮ জন সরকারি সার্জন ও ১০৮ জন ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দিয়েছি। আরও নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালগুলোয় উন্নত মানের সেবা দিতে নার্সদের সিঙ্গাপুরের মতো দেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হচ্ছে। যাতে তারা দেশের মানুষের সেবা করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব জায়গায় রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আর শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে মাতৃত্বকালীন ছুটি বাড়িয়ে ছয় মাস করা হয়েছে। এছাড়া দেশকে পোলিওমুক্ত ও টিটেনাসমুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও উন্নত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছ। আর সেবার মান বাড়াতে বিশেষায়িত হাসপাতাল যেমন চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পুলিশের জন্যও আলাদা করে হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।