শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪

গ্যাসের দাম বাড়ছে

যা যা মিস করেছেন

gas-the-mail-bd

গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে হিসাবনিকাশ চূড়ান্ত করেছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। পেট্রোবাংলা ও এর অধীন সংস্থাগুলোর প্রস্তাব এবং তার ওপর অনুষ্ঠিত গণশুনানির আলোকে বিইআরসি বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। এতে পেট্রোবাংলা ও এর অধীন সংস্থাগুলো যতটা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল, তার চেয়ে অনেক কম বাড়বে বলে জানা গেছে। 

বিইআরসির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পেট্রোবাংলা প্রথমে প্রস্তাব দিয়েছিল গড়ে ৯০ শতাংশের বেশি দাম বাড়ানোর। কিন্তু শুনানির সময় তা কমিয়ে ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর সংশোধিত প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাবের ওপর শুনানিতে অনেক বিষয় উঠে আসে, যাতে ৬৫ শতাংশ দাম বাড়ানোরও যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়নি। কাজেই ওই প্রস্তাব অনুযায়ী দাম বাড়ছে না।

ওই সূত্র জানায়, গ্যাসের দাম যতটাই বাড়ানো হোক না কেন, এর প্রধান কারণ হবে গ্যাসের দামের ওপর থেকে সরকারের শুল্ক ও কর সংগ্রহের সিদ্ধান্ত এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি। সরকার যদি শুল্ক ও কর সংগ্রহের হার কিছুটা কমায়, তাহলে দাম অনেক কম বাড়বে।

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে বিইআরসির আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে উল্লেখ করে সূত্রটি জানায়, সংস্থার সর্বশেষ চেয়ারম্যান  মেয়াদ শেষে অবসরে গেছেন। এখন কমিশনে কেবল দুজন রয়েছেন। কিন্তু বিইআরসি আইনে বলা আছে, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কমিশনের সভার কোরাম পূর্ণ হতে অন্তত তিন সদস্যের উপস্থিতি অপরিহার্য। তাই কোরাম পূর্ণ করে কমিশনের সভা করা এখন সম্ভব হচ্ছে না। নতুন একজন সদস্য নিয়োগ করা হলেই এ সমস্যা কেটে যাবে।

সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলো জানায়, গ্যাস খাত থেকে বিভিন্ন নামে প্রায় ৮১ শতাংশ অর্থ শুল্ক ও কর হিসেবে সরকার নেয়। যদি এর অর্ধেক শুল্ক ও কর সরকার কম নেয়, তাহলেই এখন গ্যাসের দাম না বাড়ালেও চলে। গত ৭ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত গণশুনানির বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কেনার জন্য পেট্রোবাংলার বছরে ৯০০ কোটি টাকা বাড়তি অর্থ দরকার। এতে গ্যাসের দাম সামান্য কিছু বাড়ালেই হয়। কিন্তু সরকারি কোষাগারে ৮১ শতাংশ অর্থ দিতে হলে গ্যাসের দাম অনেকটাই বাড়াতে হবে।

বর্তমানে গ্রাহকের কাছ থেকে বছরে গ্যাস বিল আদায় হয় ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর ওপর প্রায় ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। তাতে বর্ধিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তবে শুনানিতে পাওয়া তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে বিইআরসি দেখেছে যে প্রকৃতপক্ষে পেট্রোবাংলার যে পরিমাণ বাড়তি অর্থ দরকার, এর সংস্থানের জন্য গড়ে ৬৫ শতাংশ বাড়ানোর দরকার নেই। আরও অনেক কম বাড়ালেও চলে।

গ্যাস বিক্রি থেকে সরকার যেসব নামে শুল্ক ও কর নিচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে সম্পূরক শুল্ক ৪০ শতাংশ। মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ১৫ শতাংশ। অগ্রিম আয়কর ৩ শতাংশ। গ্যাস বিক্রি থেকে কোম্পানিগুলোর মুনাফার ২০ শতাংশ ডিভিডেন্ট, যা মোট রাজস্বের ২ শতাংশ। গ্যাসের ওপর যে সম্পদমূল্য আরোপ করা হয়েছে, তা থেকে ১৬ শতাংশ এবং গ্যাস উন্নয়ন তহবিল (জিডিএফ) থেকে প্রায় ৫ শতাংশ।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সরকার সম্পূরক শুল্ক সাধারণত এমন খাতে ধার্য করে, যে বিষয়ে সরকার নিরুৎসাহ করতে চায়। আমদানি করা শৌখিন দ্রব্যাদিই সাধারণভাবে এই শুল্কের আওতায় ফেলা হয়। গ্রাহকদের কাছ থেকে পাওয়া গ্যাসের দাম থেকে কেন সম্পূরক শুল্ক নেওয়া হবে, তা বোধগম্য নয়।

পেট্রোবাংলার সূত্র বলেন, ১৯৯৮ সালের আগ পর্যন্ত গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে উপরিউক্ত সব ধরনের শুল্ক ও কর সরকারি কোষাগারে যেত। ১৯৯৮ সালে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তির (পিএসসি) অধীনে দেশের কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্রে কর্মরত বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি দামে গ্যাস কেনা শুরু হয়। ফলে সরকারকে ওই সব শুল্ক ও কর দিয়ে অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে গ্যাস কেনা এবং ক্রয়মূল্য থেকে কম দামে বিক্রি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

তখন পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে বিষয়টি সরকারি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উপস্থাপন করে বলা হয়, সরকার যদি গ্যাস বিক্রির অর্থ থেকে সম্পূরক শুল্ক ও মূসক বাবদ ৫৫ শতাংশ রাজস্ব না নেয়, তাহলে অপেক্ষাকৃত বেশি দামে গ্যাস কিনে কম দামে বিক্রির চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা সম্ভব। সরকার তখন ওই ৫৫ শতাংশ রাজস্ব না নিয়ে গ্যাস খাত পরিচালনায়, তা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত দেয়। সে অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২২৭ নম্বর এসআরও জারি করে।

কিন্তু গত বছরের শুরুতে এনবিআর ওই এসআরও স্পষ্টীকরণ করে পেট্রোবাংলাকে জানায়, যেহেতু গ্রাহকের কাছ থেকে সরকারি রাজস্ব হিসেবেই ওই ৫৫ শতাংশ অর্থ নেওয়া হচ্ছে, সেহেতু তা সরকারি কোষাগারে দিতে হবে। শুধু তা-ই নয়, ১৯৯৮ সাল থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব দেওয়া হয়নি, তা-ও সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। সে অনুযায়ী পেট্রোবাংলা গত এপ্রিল থেকে ওই রাজস্ব এনবিআরকে দিতে শুরু করে এবং গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়।

সেই প্রস্তাবে আবাসিকে দুই চুলার জন্য মাসিক বিল ১ হাজার ২০০ টাকা, এক চুলার জন্য ১ হাজার ১০০ টাকা, আবাসিকে মিটারযুক্ত গ্রাহকের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটারের বর্তমান দাম ৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৫৩ পয়সা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রায় ৩২ শতাংশ, সারে প্রায় ৩৬ শতাংশ, ক্যাপটিভ বিদ্যুতে ১২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, শিল্পে প্রায় ৫৬ শতাংশ, বাণিজ্যে ৬৭ শতাংশ চা–বাগানে ৬৮ শতাংশ এবং সিএনজিতে ৪৮ দশমিক ১৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছিল।

এর আগে, গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবাসিকসহ কয়েকটি শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তখন দুই চুলার বিল ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫০ এবং এক চুলার বিল ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০০ টাকা করা হয়েছিল। আর সব গ্রাহকশ্রেণির গ্যাসের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security