বিহারের বন্যার কারণে ভারত ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো গেইট খুলে দেওয়ায় বিপদজনক গতিতে পানি বাড়ছে বাংলাদেশের পদ্মায়।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন জানান, গঙ্গার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে ভারত ফারাক্কা বাঁধের ১০৬টি গেইটের সবগুলোই খুলে দিয়েছে।
এ কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তিনি।
হিমালয় থেকে উৎপন্ন গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, সেখান থেকে নদীটির নাম হয়েছে পদ্মা।
গঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের আগে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় ভারতের ফারাক্কা বাঁধ; যা চার দশক ধরে নানা ধরনের পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনছে বাংলাদেশের জন্য।
রাজশাহী পাউবো বলছে, গত ১৭ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পদ্মায় পানির উচ্চতা ১ মিটার ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা পাঙ্খা পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার, রাজশাহী পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ওই তিন পয়েন্টে বিপৎসীমার যথাক্রমে ১৭, ২২ ও ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হাচ্ছিল পদ্মা।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, “এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে শনিবার রাতে তা বিপৎসীমা (১৮ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার) অতিক্রম করতে পারে।”
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নৈমূল হকও একই কথা বলেছেন।
“যেভাবে পানি বাড়ছে এই ধারা চলতে থাকলে পদ্মা নদীর পানি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করবে। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর শাখা গড়াই নদীতেও পানি বাড়ছে।”
ইতোমধ্যে বুলনপুর এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধের নিচে পদ্মার তীর রক্ষা প্রকল্পের চারটি স্থান সামন্য দেবে গেছে। বাঁধের ভেতরে কিছু নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে; পানি উঠেছে ঘর বাড়িতেও।
মীর মোশাররফ হোসেন বলেন, বুলনপুর পুলিশ লাইনসের সামনে যে দুটি স্থানে পদ্মার তীর রক্ষা প্রকল্প সামান্য দেবে গেছে, তার পাশেই শহর রক্ষা বাঁধ। দেবে যাওয়া অন্য দুটি জায়গা শহর রক্ষা বাঁধ থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে
“পুলিশ লাইনসের সামনে তীর রক্ষা প্রকল্পে ধস নামলে শহর রক্ষা বাঁধে প্রভাব পড়তে পারে। আপাতত পাথর ফেলে ধস ঠেকানোর চেষ্টা হয়েছে। এছাড়া উপরের মাটি যেন সরে না যায়, সেজন্য ফেলা হয়েছে বালির বস্তা।”
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, পদ্মার গোয়ালন্দ পর্যন্ত অংশে পানির উচ্চতা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তে পারে। আর গোয়ালন্দ থেকে পরের অংশে পানির সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে আরও ২৪ ঘণ্টা।
তবে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি কমার প্রবণতা আগামী ৭২ ঘণ্টা এবং মেঘনা অববাহিকার সুরমা, কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল হ্রাসের প্রবণতা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।