বড় হয়ে কী হবে? বাবার মতো হবে নাকি মায়ের মতো? ছোটবেলায় বোধহয় সবাইকেই এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। তখন নিজের স্বপ্নের কথা বললেও অনেক সময় মা-বাবা তা মানতে চান না। শেষ পর্যন্ত অভিভাবকের স্বপ্নপূরণের পথেই দৌড়াতে হয়।
কিন্তু সন্তানের মনে যে স্বপ্ন থাকে, তা হয়তো অজানাই রয়ে যায় অভিভাবকের। জানলেও অনেক সময় তাঁরা নিজের সিদ্ধান্ত সন্তানের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেন। কিন্তু সন্তানেরও যে স্বতন্ত্র ইচ্ছা-অনিচ্ছা আছে, আলাদা ব্যক্তিসত্তা আছে, এটি অভিভাবকেরা বুঝতে পারেন না।
তাঁরা নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা বা স্বপ্ন সন্তানের মধ্য দিয়ে পূরণের চেষ্টা করেন। আমাদের আশপাশে প্রায়ই ঘটছে এমন ঘটনা। কিন্তু এটি সন্তানের স্বাভাবিক বিকাশকে ব্যাহত করে।
অভিভাবকেরা সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন এটি যেমন সহজাত, তেমনি সন্তানের চাওয়ার বিষয়টি তাঁদের বুঝতে হবে।
অভিভাবকের যে সিদ্ধান্ত সন্তান স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করছে, তা ঠিক আছে। কিন্তু চাপিয়ে দেওয়া কোনো কিছুতে ভালো ফল আসে না। সন্তান যদি সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে, তাহলে তাকে সাহায্য করা যেতে পারে।
কোনো বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকলে তা সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করুন। খেয়াল রাখবেন, সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে কি না। সন্তান কী হতে চায়, তা শুনুন। তার পরিকল্পনার কথা জেনে নিন।
সফলভাবে যেন সে তার ভবিষ্যৎ গড়তে পারে, সে বিষয়ে সহযোগিতা করা উচিত অভিভাবকদের। তা না হলে শিশুর মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। তা ছাড়া সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে ভবিষ্যতে আশানুরূপ ফল করতে না পারলে দোষারোপের বিষয়টি চলে আসবে, যা পারিবারিক অশান্তি তৈরি করবে। এ জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করুন সন্তানকে।
সরাসরি শিশুদের ওপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়। শিশুর মন খুব সূক্ষ্ম আর সংবেদনশীল। তাদের মনে আঘাত দেওয়া ঠিক নয়।
কোনো বিশেষ চরিত্র বা মানুষকে তাদের সামনে উপস্থাপন করা যেতে পারে। গল্পের ছলে আপনার পছন্দের ব্যক্তিত্ব ও তাঁর জীবনী ওদের সামনে তুলে ধরুন। তাতে যদি সে উৎসাহিত বোধ করে, তাহলে সে বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হবে।
ওরা অনুকরণপ্রিয়। সেই পথে চলতে ইচ্ছুক হলে মা-বাবার স্বপ্নও পূরণ হবে। শিশু স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারবে।
‘তবে শিশুকে তার স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে হলে আমাদের সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।
একধরনের নিরাপত্তাহীনতা থেকে অভিভাবকেরা অনেক সময় নিজের সিদ্ধান্ত সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেন। কিন্তু সন্তান যদি তার বেছে নেওয়া বিষয়ে ভালো করে, সটিই আসল কথা।’
ওদের সামনে নানা ধরনের সুবিধা দেওয়া উচিত। সেখান থেকে তারা নিজেদের মতো করে বিষয় বেছে নেবে। মনের আনন্দ নিয়ে কোনো কাজ করলে তাতে সফলতা আসবেই।
অনেককে দেখা যায়, লেখাপড়া হয়তো মা-বাবার পছন্দের বিষয়ে করে। কিন্তু যখন ওর নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসবে, তখন তার মতো চলবে। ভিন্ন কোনো পেশায় চলেও যেতে পারে।
তার শেখার আগ্রহ, বিশ্লেষণী ক্ষমতাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে হবে। আর শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে তাকে আবদ্ধ করা উচিত নয়। সব ধরনের জ্ঞান নিতে হবে। তাহলে সে জীবনমুখী জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। এ নিয়ে মা-বাবার অনর্থক দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।