শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪

আবার ভারতে মোদি সরকার!

যা যা মিস করেছেন

মূল স্লোগান ছিল ‘ফির একবার, মোদি সরকার’। স্লোগান নয়, অঙ্গীকার। একেবারে অক্ষরে অক্ষরে সেই অঙ্গীকার যে এভাবে মিলে যাবে, বুথ ফেরত সমীক্ষায় তার স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল। সেই সমীক্ষা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। প্রশ্নও উঠেছিল অনেক। জন্ম নিয়েছিল অনেক অবিশ্বাস, সংশয় ও সন্দেহ। কিন্তু গণনা শুরু হওয়ার সামান্য সময়ের মধ্যেই বোঝা গেল, পাঁচ বছর আগের ভোটের রায়ের সঙ্গে এবারের রায়ের অমিল বলতে প্রায় কিছুই নেই। পাঁচ বছর আগে দেশের মানুষ চোখ বুজে নরেন্দ্র মোদির হাতে ভারতের ভার তুলে দিয়েছিল। পাঁচ বছর পরেও সেই আস্থা অটুট।

বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ পাঁচ বছর আগে ৩৩৬ আসন জিতেছিল। বেলা বারোটা পর্যন্ত ভোট গণনার যে প্রবণতা, তাতে স্পষ্ট, এবারেও তারা ওই সংখ্যার খুবই কাছাকাছি থাকছে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ ২০১৪ সালে ৫৯টি আসন জিতেছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল মাত্র ৪৪টি। এখনো পর্যন্ত ছবিটা যা, তাতে কংগ্রেস ও তার জোট কিছুটা ভালো করলেও বিজেপির কপালে তা ভাঁজটুকুও ফেলতে ব্যর্থ।

কংগ্রেসের ভরসা ছিল রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের ওপর। মাত্র কয়েক মাস আগে এই তিন রাজ্যে বিজেপিকে সরিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ওই তিন রাজ্যও তাদের হতাশ করেছে। ছত্তিশগড়ে কিছুটা লড়লেও অন্য দুই রাজ্য কংগ্রেস সমর্পণ করেছে বিজেপির কাছে। কিংবা গুজরাট। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কংগ্রেস ওই রাজ্যে বিধানসভার ভোটে বিজেপিকে জোর ধাক্কা দিলেও লোকসভার ভোটে তারা বিজেপির কাছে গুটিয়ে গেল। বিজেপি বলাটা ভুল হচ্ছে, ওই চার রাজ্যের মানুষ দেশের নেতা হিসেবে নরেন্দ্র মোদিকে বেছে নিতে ভুল করেনি। চার মাস আগে পালাবদলের সময়েই তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। দ্বিধা ছেড়ে ওই রাজ্যের মানুষজন বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁদের পছন্দ মোদি। লোকসভার ভোটে সেটাই প্রমাণিত। কংগ্রেসের ভরসা ছিল কর্ণাটকের ওপরেও। অথচ দেখা যাচ্ছে, জেডিএসের সঙ্গে জোট সত্ত্বেও কংগ্রেসের ফল ওই রাজ্যেও হতাশ জনক।

ভোটের প্রচারে শাসক দল বারবার প্রশ্ন তুলেছিলেন, মোদির বিপরীতে কে? প্রশ্নটি মানুষকে ভাবিয়েছে। ভোটের ফল ও গতিপ্রকৃতি দেখে সেটাই বোঝা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী পদে মানুষ যে মোদিকেই বেছে নিয়েছে, ওডিশা তার প্রমাণ। এই রাজ্যে লোকসভার পাশাপাশি বিধানসভারও ভোট হয়েছে। বিধানসভায় রাজ্যের মানুষ বিজু জনতা দলের নেতা মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের ওপর আস্থা রাখলেও প্রধানমন্ত্রী পদে তারা মোদিকে বেছে নিয়েছে। রাজস্থান, গুজরাট, মধ্য প্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের ভোটারদের মানসিকতার সঙ্গে ওডিশার ভোটারদের মনের মিল এখানেই।

এবং এটাই সত্য হয়ে দেখা দিয়েছে দেশের প্রায় সর্বত্র। উত্তর প্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খন্ড নিয়ে বিরোধীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তিন রাজ্যে বিরোধীরা জবরদস্ত জোট বেঁধেছিলেন। উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী ও বহুজনের জোট, বিহারে কংগ্রেস ও আরজেডির জোট, ঝাড়খন্ডে কংগ্রেস ও জেএমএম জোট। মনে রাখা দরকার, হিন্দি বলয়ের এই রাজ্যগুলোয় প্রতিটি ভোটে জাতপাতের সমীকরণ বড় হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালে সমীকরণের পাটিগণিতকে চাপিয়ে উঠেছিল মোদির রসায়ন। এবারেও যা প্রবণতা, তাতে বোঝা যাচ্ছে, মোদির পক্ষেই এই তিন রাজ্যের মানুষ থাকতে চেয়েছে। এই পছন্দের কারণ প্রথমত, ভোটটা ছিল প্রধানমন্ত্রী বাছার। দ্বিতীয় কারণ, মোদির তুলে দেওয়া জাতীয়তাবাদ ও নিরাপত্তার প্রশ্ন।

পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশার প্রতি এবার বাড়তি নজর দিয়েছিল বিজেপি। এখন পর্যন্ত গতিপ্রকৃতি যা, তাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কপালের ভাঁজ গাঢ় হতে বাধ্য। একই আভাস ওডিশাতেও। মোদি ম্যাজিক কীভাবে কাজ করেছে এই দুই রাজ্য তার প্রমাণ। উত্তর পূর্বাঞ্চলের পর পূর্ব ভারতে স্পষ্ট পায়ের ছাপ ফেলতে পারলে আগামী দিনে বিজেপির নজর পড়বে দক্ষিণ ভারতে।

কংগ্রেস গতবারের চেয়ে সামান্য ভালো করলেও রাহুল গান্ধী কি নিজের সম্মান রাখতে পারবেন? বেলা বারোটা পর্যন্ত মেলাতে তিনি স্মৃতি ইরানির চেয়ে ৭ হাজার ভোটে পিছিয়ে। শেষ পর্যন্ত মেলাতে হেরে গেলে তাঁর পক্ষে ওই অসম্মান হজম করা কঠিন হবে।

নরেন্দ্র মোদির মোকাবিলা কীভাবে করা যায়, বিরোধীদের এবার নতুনভাবে সেই চিন্তা করতে হবে। তার আগে কংগ্রেসের বড় চিন্তা মধ্য প্রদেশ ও কর্ণাটকের সরকার বাঁচানো। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মোদি-শাহ জুটির প্রথম কাজ হবে ওই দুই রাজ্য থেকে কংগ্রেসের পাততাড়ি গোটানো। গণনার শুরুর আগেই ওই দুই রাজ্য থেকে সেই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security