মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের স্ত্রীসহ দলের নেতারা হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে সন্দেহ করলেও এই সংসদ সদস্যের বোনেরা তদন্তে সব বিষয়কেই মাথায় রাখতে বলছেন।
তার আগে লিটনের স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি সাংবাদিকদের বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে জামায়াতই তার স্বামীকে হত্যা করেছে বলে তার ধারণা।
আওয়ামী লীগের নেতারাও সেই সন্দেহের কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন। তবে জামায়াত এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, প্রকৃত খুনিদের আড়াল করতে তাদের উপর দোষ চাপানো ।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নে শাহাবাজ গ্রামে লিটনের বাড়িতে ঢুকে গত শনিবার তাকে গুলি করে যায় কয়েকজন দুর্বৃত্ত। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরপরই তার মৃত্যু ঘটে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন লিটনের বোন ফাহমিদা। বেশ কয়েকজনকে আটক করলেও তবে তিন দিনেও খুনিদের শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার লিটনের বাড়িতে দোয়া মাহফিল হয়। এর মধ্যেই সাংবাদিকদের সামনে আসেন লিটনের দুই বোন ও স্ত্রী। তাদের চোখে মুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ; আতঙ্কিত যে তা লুকানোর চেষ্টাও তারা করেননি।
তৌহিদা বুলবুল বলেন, “শুধু জামায়াত-জামায়াত করলে তো হবে না। যদি জামায়াত হয়, জামায়াত। যদি আওয়ামী লীগ হয়, আওয়ামী লীগ। যদি আমি হই, আমি। এনি বডি। আমরা তার পানিশমেন্ট চাই। আমাদের আর কিছু চাওয়ার নেই।”
গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বলেন, “পারিবারিক, স্থানীয় রাজনীতির বিভেদ, ব্যবসাগত অর্থনৈতিক লেনদেন, জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিসহ সকল বিষয় মাথায় রেখে পুলিশ তদন্ত করছে। আমরা আশা করছি, খুব শিগগিরই খুনি ধরা পড়বে।”
লিটন হত্যাকাণ্ডের দিন তার বাড়িতে স্ত্রী স্মৃতি ও শ্যালক বেদারুল আহসান বেদারসহ দুই-একজন ছাড়া আর কোনো স্বজন ছিলেন না। বেশ কয়েকজন গৃহকর্মী ও গাড়িচালক ছিলেনও তখন বাড়িতে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, সেদিন সন্ধ্যায় পাঁচজন ঘাতক দুটি মোটর সাইকেলে এসেছিলেন। তাদের মধ্যে দুজন লিটনের সঙ্গে কথা বলে তার বৈঠকখানায় ঢুকেছিলেন। এরপরই গুলির শব্দ আসে।
ফাহমিদা বলেন, “এইভাবে গ্রামের মধ্যে এসে হত্যা করে যাওয়া এবং সেই সুযোগটা পাওয়া সব মিলিয়ে সব অ্যাঙ্গেল থেকে পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। প্রত্যেকটা অ্যাঙ্গেলে তারা সার্চ করুক। আসলে কী ঘটনাটা।”
“লিটন আমার ভাই। হত্যাকারীর বিচার তো আমি চাইতেই পারি। যতদিন বেঁচে আছি। যতদিন বিচার না হয়, তত দিন বিচার চাইব,” বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন ফাহমিদা।
বড় বোন তৌহিদা বুলবুল বলেন, “একবারে বাড়ি এসে মেরে যাওয়া। এটা সহ্যও করতে পাচ্ছি না। আবার কিছুটা ভয়ও পাচ্ছি। আবার ও (কাকলী) বাদী হয়েছে। ওকে আবার টার্গট করবে কি না?
“আমাদের এক তরফ থেকে বলাও হয়েছে- ‘আপনারা ভাই-বোনেরা একটু সেইফ থাকেন।”
লিটনের স্ত্রী জানান, বাড়িতে তখন তিনি, তার ভাই বেদার, ভাগ্নি মারুফা সুলতানা শিমু, চাচি শামীম আরাসহ কয়েকজন গৃহকর্মী ছিলেন।
“আমি ও আমার ভাই উঠানের রান্না ঘরের কাছে ছিলাম। তখন গুলির শব্দ শুনতে পাই। তিনি (লিটন) ঘর থেকে ভেতর দরজা দিয়ে বেরিয়ে এসে বলে, ওরা আমাকে গুলি করেছে, আগে ওদের ধর। তিনি বুকে হাত দিয়ে ছিলেন, বুকের বাম পাশ দিয়ে রক্ত ঝরছিল।”
লিটনের চিৎকার শুনে গাড়িচালক ফোরকান মিয়া হামলাকারীদের ধরতে গিয়েছিলেন বলে স্মৃতি জানান। লিটনকে নিয়ে স্মৃতি, ইসমাইল ও বেদার বেরিয়ে আসেন। গাড়ি ও চালক না থাকায় একটি মোটর সাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে লিটনকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হন তারা। কিন্তু এর মধ্যে গাড়িচালক ফিরে আসে।