জলজ জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণা ও বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের জলজ জীববৈচিত্র্যকে তুলে ধরার জন্য গত ২১ ই ডিসেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের অধীনে প্রতিষ্ঠিত হল আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর “জলজ জীববৈচিত্র্য গবেষণাগার” ।
গবেষণাগারটি তৈরিতে আর্থিক সহযোগিতা করেছে ইয়েওসু কোরিয়া ফাউন্ডেশন দক্ষিণ কোরিয়া ও কারিগরি সহযোগিতা করেছে কোরিয়া মহাসাগর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান (কাইওসট)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্য বিজ্ঞান বিভাগে ল্যাবটি উদ্বোধন করেন উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সেকেন্দার আলী, কোষাধক্ষ্য প্রফেসর ড. আনোয়ারুল হক বেগ, শেকৃবি রির্সাচ সিস্টেমের পরিচালক প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম ও এ ল্যাবের ডিরেক্টর প্রফেসর ড. কাজী আহসান হাবীবসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাবৃন্দ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা মাৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের এই কার্যক্রমকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
এই প্রকল্পের গবেষণাগার পরিচালক ও উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক, শেকৃবি মাৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব বলেন, গবেষণাগারটি আধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত। যুগোপযোগী গবেষণার এক কেন্দ্রে পরিণত হবে এই ল্যাবরেটরি । আমরা আমাদের গবেষণাগারে জলজ জীববৈচিত্র্যের প্রজাতি নির্ণয় এবং মলিকুলার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের জন্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করেছি।ডিএনএ বারকোডিং এর মাধ্যমে খুব সহজেই নির্ণয় হবে জলজ প্রাণীর পরিচয়।
বর্তমানে এই গবেষণাগারে সুন্দরবনে প্রাপ্ত জলজ জীববৈচিত্র্যের শ্রেণিবিন্যাস ও তালিকা হালনাগাদের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। আধুনিক শ্রেণিবিন্যাসের অংশ হিসাবে বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের পাশাপাশি এখানে মলিকুলার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রজাতি নির্ণয় করা হচ্ছে।নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং এর মাধ্যমে সুন্দরবনের নদীর পানিতে প্রাপ্ত zooplankton ও মাছের ডিমের মলিকুলার জেনেটিক পরীক্ষা করা সম্ভব। এছাড়াও ডিএনএ বারকোডিং এর মাধ্যমে মাছ, শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া ইত্যাদির ডিএনএ সিকোয়েন্স নির্ণয় করা হচ্ছে। সুন্দরবনের পানিতে কোন নতুন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে কিনা সে বিষয়ে গবেষণা চলছে । এই প্রকল্পের কৌশলগত সহযোগী হিসাবে রয়েছে বাংলাদেশ বন বিভাগ।
অধ্যাপক ড. কাজী আহসান হাবীব আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমে যখন মাছের প্রধান প্রজনন কাল সেই সময় যথাপোযুক্ত গবেষণা নৌযান না থাকার কারণে আমরা সুন্দরবনের নিচের দিকে অর্থাৎ সাগরের দিকে কাজ করাটা খুবই বিপদজনক। কারণ বর্ষা মৌসুমে নদীর পানিতে প্রচুর স্রোত থাকে। তারপরেও আমরা যান্ত্রিক পর্যটন নৌকা ভাড়া করে আমাদের গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এই প্রকল্পের আওতায় আমরা বেশ কিছু নতুন কাঁকড়া সুন্দরবন অঞ্চলে নতুন। এছাড়াও শেকৃবির এই “জলজ জীববৈচিত্র্য গবেষণাগারে” আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের পপুলেশন জেনেটিক্স নিয়েও কাজ চলছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের আশেপাশের দেশ গুলোতে ইলিশের কতগুলো জেনেটিক স্টক রয়েছে তা জানা যাবে। পরিবেশগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ইলিশের জিনগত বিবর্তন জানা যাবে । এটিতে আর্থিক সহযোগিতা করেছে শিক্ষা মন্ত্রনালয়।
আধুনিক বিজ্ঞানের এইসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের গবেষণা এগিয়ে যাবে বিশ্বের উন্নত দেশ গুলোর সাথে সমভাবে। নতুন নতুন প্রজাতি নির্ণয় ও এইসব প্রজাতির সংরক্ষণে ভবিষ্যতে এই গবেষণাগারটি দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যাবে এমনটি আসা করেন শেকৃবির মননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।