নারায়ণগঞ্জে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন এবং সাবেক র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় ছিলেন নির্লিপ্ত।
সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জনাকীর্ণ এজলাসে বিচারক রায় পড়ার সময় নূর হোসেনের দুই সহযোগী কাঁদতে শুরু করলে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত এই নেতা তাদের ‘কিছু হবে না’ বলে সান্ত্বনাও দেন।
এ সময় তাদের একজনকে তারেক সাঈদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, “শালা, তোদের জন্য আজকে আমাদের এই অবস্থা।”
সংক্ষিপ্ত রায়ে নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন আসামিদের যে সাজা ঘোষণা করেন, তাতে নূর হোসেন ও সাবেক তিন র্যাব কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে দেওয়া হয় মৃত্যুদণ্ড। মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে বাকি নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন তিনি।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ ডুবিয়ে দেওয়া হয় শীতলক্ষ্যা নদীতে।
নিহত নজরুল ও মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন দুজনেই ছিলেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা। কাউন্সিলর নূর হোসেন এলাকায় আধিপত্য নিয়ে বিরোধ থেকে নজরুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে র্যাব সদস্যদের দিয়ে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে।
সকাল ১০টার দিকে এজলাসের সামনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, আরিফ হোসেন এবং এম এম রানাকে। আর প্রধান আসামি নূর হোসেনসহ বাকি ২০ জনকে রাখা হয় আদালতকক্ষের ভেতরে গ্রিলঘেরা গারদে।
বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন এজলাসে আসেন সকাল ১০টার পর। আসামিদের অপরাধের বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ অংশ বাদ দিয়ে কেবল সাজাপ্রাপ্তদের নাম ও দণ্ডের পরিমাণ পড়ে শোনান তিনি।
রায় ঘোষণা শুরুর আগে বিচারক বলেন, সাত খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হলেও রায়ের ফলাফল এক ও অভিন্ন। কেবল একটি মামলায় রায় ঘোষণা করা হলে ‘স্বাভাবিকভাবে’ অন্যটি চলে আসবে।
বিচারক বলেন, সাতজনকে অপহরণ, খুন, লাশ গুম, ষড়যন্ত্র ও আলামত নষ্টের অভিযোগ ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় দেওয়া হচ্ছে।
আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ সৈনিকদের রোষ থেকে বাঁচাতে এর আগে একবার আদালত কক্ষে খাবার নিয়ে মারামারির কারণে র্যাব কর্মকর্তাদের গ্রিলের বাইরে রাখা হয়।
এ আদালতের পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, “যে কোনো নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামির সংখ্যা বেশি হলে মাস্টারমাইন্ড যারা থাকে, তাদের উপর অন্যরা চড়াও হতে পারে। এ কারণে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে আলাদা রাখা হয়েছিল।”
ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ্জালাল মুন্সীসহ দুইজন গ্রিলের বাইরে ছিলেন সাবেক র্যাব কর্মকর্তাদের পাহারায়।
এ রায় ঘিরে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শফিউদ্দিন জানান, আদালত এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাঁচ শতাধিক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।