হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরিয়ে নিচ্ছেন অনেক মালিক। যন্ত্রপাতি সরানোর কাজ চলছে। কাঁচা চামড়া যাতে ঢুকতে না পারে, সে জন্য ট্যানারি এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। প্রবেশপথগুলোতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।
অবশ্য কয়েকটি ট্যানারির মালিক, কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা বলছেন, ৩১ মার্চের পর ট্যানারিগুলোতে নতুন করে আর কোনো কাঁচা চামড়া ঢোকেনি। কয়েকজন পুলিশ সদস্য বলেন, আগে থেকেই বিষয়টি নির্ধারিত ছিল। এ কারণে মালিকেরা সেভাবেই কাজ করেছেন। তবে পুলিশ তৎপর আছে। কোনোভাবেই কাঁচা চামড়া নিয়ে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
হাজারীবাগ থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) বললেন, তাঁরা সব প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসিয়েছেন। পাশাপাশি টহলও চলছে। কাঁচা চামড়া নিয়ে কেউ ঢোকার চেষ্টা করেছেন, এমন খবর তিনি পাননি।
ব্যবসায়িদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেছেন, সরকার যে আলটিমেটাম দিয়েছিল তা বাস্তবায়ন হচ্ছে। এপ্রিল মাসের প্রথম দিন কারখানায় কোনো ধরনের কাঁচা চামড়া প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। যেসব চামড়া আগের দিনে কেনা ছিল সেগুলোও শুক্রবার থেকে হাজারীবাগের কারখানায় ঢুকানো হয়নি। অনেকটা পুলিশি হয়রানির ভয়েই কাঁচা চামড়া ঢুকানো হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। তবে হাজারীবাগে না প্রবেশ করলেও পোস্তায় তা সাময়িক সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে শনিবারও হাজারীবাগ এলাকায় দেখা গেছে, ট্যানারি সরানোর কাজ চলছে। হালকা ও ভারী যন্ত্রপাতি গাড়িতে তুলে সাভারের উদ্দেশে নেয়া হচ্ছে।
হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য একদিকে সরকারের আলটিমেটাম, পরিবেশ দূষণের কারণে হাইকোর্টের নির্দেশ এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে এ শিল্প সাভারে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের ধরে রাখার চেষ্টা। সব মিলিয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে আতঙ্কে আছে ট্যানারি মালিকরা।
তারা বলছেন, সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে ট্যানারি মালিকদের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেখানে সবাই যাবে কিন্তু যেভাবে সরকারের পক্ষ থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে তাতে এ শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশে ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, হাজারীবাগ থেকে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে যাওয়ার প্রক্রিয়া শেষের দিকে। সেখানে কার্যক্রম শুরু করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে যেসব ব্যবসায়ির কাঁচা চামড়া কেনা রয়েছে সেগুলো হাজারীবাগে প্রবেশ করতে দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
এদিকে হাজারীবাগের চামড়া শিল্প প্রতিষ্ঠানের সামনে দিয়ে বারবার পুলিশ টহল দিতে দেখা গেছে। হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, শুক্রবার সকাল থেকে হাজারীবাগে চামড়া প্রবেশ ঠেকাতে আজিমপুর মোড়, ঝিগাতলাসহ চারটি প্রবেশ মুখে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। শুক্রবার সকালে দুই ঠেলাগাড়ি ভর্তি কাঁচা চামড়া হাজারীবাগে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ চেকপোস্ট থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতের নির্দেশে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার ২০০৯ সালে হাজারীবাগের চামড়া শিল্প স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়। এক হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাভারে চামড়া শিল্প নগরী স্থাপন করেছে সরকার। ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২৫০ কোটি টাকা অর্থিক সহযোগিতাও সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে ।
এদিকে চামড়া শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করতে প্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে ইউরোপীয় ক্রেতাদের দিক থেকেও ওই এলাকায় ট্যানারি কারখানাগুলো স্থানান্তরের চাপ রয়েছে। এমনকি পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত শিল্পের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে রফতানি নিষেধাজ্ঞারও আশঙ্কা রয়েছে।
তাই ট্যানারী স্থানান্তর জরুরি বলে মনে করছে সরকার। এ কারণেই দফায় দফায় হাজারীবাগ থেকে ট্যানারীর কাযক্রম বন্ধ করার জন্য আল্টিমেটাম দিচ্ছে সরকার।
শেষ চেষ্টা হিসেবে গত ২৯শে ফেব্রুয়ারি শিল্পমন্ত্রী ট্যানারি স্থানান্তরে ৩১শে মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন মালিকদের। এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে ঢাকার হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।