শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪

শেকল বন্দী শিল্পী সাত বছর পর মুক্ত হলেন

যা যা মিস করেছেন

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃথিমপাশার ইউপির শিল্পী বেগম (৪০) দীর্ঘ সাত বছর পূর্বে হঠাৎ করে মানসিক রোগে আক্রান্ত হন। তখন তিনি নববধূ। মানসিক রোগে আক্রান্ত হবার পর স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। শিল্পী সংসারে হয়ে পড়েন একা। ফিরে আসেন বাবার বাড়িতে।

সেখানে তার মানসিক সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। তিনি সহসাই ভায়োলেন্স হয়ে যেতেন, এদিক সেদিক চলে যেতেন।

সংসারের লোকজন উপায়ান্তর না দেখে তাকে শিকল বন্দী করে ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। সে অবস্থায় তাকে পরিচর্যা করা হতো। খাইয়ে পরিয়ে দেওয়া হতো। শিকল খুললেই শিল্পী উধাও হয়ে যেতো বিধায় তারা তাকে শিকলে বেঁধে ঘরবন্দী করে রাখতেন।

এভাবেই অন্ধকার ঘরে লোহার শিকলে বন্দী হিসেবে কাটে শিল্পীর জীবনের দীর্ঘ সাতটি বছর।

এসময় বেশ কয়েকবার শিল্পীকে তার মা, বাবা, ভাইবোন মিলে নানান জনের পরামর্শে দেখান ভন্ড মোল্লা, কবিরাজ, সাধু সন্ন্যাসী। কিন্তু এদের অপচিকিৎসা আর প্রতারণার ফাঁদে পরে সে সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা তার অবস্থা আরো দিন দিন খারাপ হতে থাকে। এসব ভন্ডরা তাবিজ, তেল পড়া আর যাদুর ছাড়ানোর নামে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।

অত:পর দুই মাস আগে সিলেট থেকে সুস্থ হওয়া একজন মানসিক রোগীর কাছ থেকে শিল্পীর অভিভাবকরা জানতে পারেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ব্রেইন স্নায়ু ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাঈদ এনাম এর কথা।

পরে তারা শিল্পীকে নিয়ে আসেন সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. সাঈদ এনাম এর কুলাউড়ার সাপ্তাহিক চেম্বার “ব্রেইন কেয়ার” এ শিকল বন্দী হিসেবে।

শুরুতে সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. সাঈদ এনাম এর তত্ত্বাবধানে শিল্পীর ‘মানসিক রোগের’ আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া হয়।

চিকিৎসা শুরুর মাত্র তিন দিনের মাথায় শিল্পীর হাতে পায়ের শিকল খুলে দেন তার অভিভাবকরা। সে সুস্থ হতে থাকে। প্রতিবেদকের সাথে এক সাক্ষাৎকারে শিল্পী ও তার মা সাইকিয়াট্রিস্ট এর প্রতি অশ্রুসিক্ত নয়নে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান শুধুমাত্র অজ্ঞতার জন্যে এতোদিন তাদের মেয়ের সুচিকিৎসা সম্ভব হয়নি। মানসিক রোগের বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা তারা জানতেন না।

এ ব্যাপারে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাঈদ এনামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান,”শিল্পীর গুরুতর ব্রেইন স্নায়ু ও মনোরোগ ‘সিজোফ্রেনিয়া’ তে আক্রান্ত ছিলেন। অসচেতনতায় তাঁকে দীর্ঘ দিন শিকল বন্দী করে রাখার বিষয়টি দু:খজনক। তিনি আরো বলেন, সিজোফ্রেনিয়া রোগ ভালো হয়। চিকিৎসা, ঔষধ ও এখন সহজ লভ্য। প্রয়োজন কেবলমাত্র সচেতনতা। মানসিক রোগ নিয়ে সচেতনতা কম। সচেতনতায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসা উচিত”।

প্রথিতযশা সাইকিয়াট্রিস্ট আমেরিকান সাইকিয়াট্রি এসোসিয়েশন এর একজন গর্বিত ইন্টারন্যাশনাল ফেলো মেম্বার। মানসিক রোগ নিয়ে তার গবেষণা দেশ বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে নিয়মিত প্রকাশ হয়। তিনি কুলাউড়ার সন্তান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security