টুং-টাং শব্দে মুখরিত ভোলার কামার শিল্প

11
আসন্ন কুরবানির  ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন ভোলার কামার শিল্পীরা। কোরবানি পশুর জবাই ও মাংস প্রস্তুতির জন্য সারাদিন তপ্ত ইস্পাত গলিয়ে তৈরি করছেন চাপাতি, দা, ছুরি, বটি সহ নানা ধরনের হাতিয়ার। কাক ডাকা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত টুং-টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠছে ভোলার প্রতিটি কামারপট্রিগুলো।
তবে কয়লা, লোহাসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লাভ তেমন হয়না বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তবে পূর্ব পুরুষের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান।
সরজমিন ভোলার  বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কামাররা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
দোকানের জ্বলন্ত আগুনের তাপে কামারদের কপাল থেকে ঝরছে ঘাম। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। তবুও থেমে নেই তারা। সকাল পেরিয়ে রাত পর্যন্ত চলবে হাতুড়ি পেটার কাজ।
তারপরও কোরবানির ঈদের কথা মাথায় রেখে নতুন আশায় বুক বেঁধে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পীরা।ঈদের দিন ভোরবেলা পর্যন্ত চলবে এমন ব্যস্ততা।
 কামার রুকুন ও অমল কর্মকার বলেন, ‘কয়লার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে বেড়েছে দা-বটি বানানোর লোহা আর ইস্পাতের দাম। ফলে এখন কাজ করে আগের মতো লাভ হচ্ছে না। আগে হোটেল, বাসা-বাড়ি থেকে কয়লা সংগ্রহ করা হতো। এখন হোটেল বা বাসাবাড়িতে রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহার হয়। কয়লা পেতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ভোলা সদর ইলিশা বাজারের  পরিমল কর্মকার বলেন, এক সময় লোহা দিয়ে হাতিয়ার তৈরির জন্য আমাদের কদর বেশি ছিল। বর্তমান তা আর নেই। তাই সারা বছর তেমন কোনো কাজ থাকে না। ধান কাটার মৌসুমে আর এই ঈদের সময়টুকুই আমরা অনেকটায় ব্যস্ত থাকি।
ভোলা পৌরসভার কামারপট্রি বাজারের সদীফ কর্মকার বলেন, সারা বছর আমরা ছোট-খাটো কাজ করি। কিন্তু কোরবানি ঈদে আমরা বেশি কাজ করে থাকি। যারা কোরবানি করেন তাদের দা, বটি, ছুরি তৈরির জন্য অনেকেই আসেন।এময় কাজের চাপ বেশি থাকে।
দৌলতখান বাংলাবাজারের রমেস ও রুপন কর্মকার জানান, বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও ঈদুল আজহায় আমাদের কাজ বেড়ে যায়। আর বর্তমানে লোহা ও কয়লার যে দাম তা দিয়ে আমাদের ব্যবসা করতে কষ্ট হচ্ছে।
ক্রেতা নাফিজ ও আশরাফুল জানান, ঈদের দিন যতই সামনে এগিয়ে আসছে দোকানে ভিড় বাড়ছে। যদিও গত বছরের তুলনায় এবারে দামটা বেশি  তবুও প্রয়োজনীয় যন্ত্র কিনে নিলাম।
 ক্রেতা শাহিন জমাদার বলেন, ‘লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় কামাররা সবকিছুর দাম বেশি চাচ্ছেন। তাই নতুন কেনার বদলে গত বছরের বানানো দা, বটি আর চাকু কামারের কাছে ধার করতে আনছি।
অন্যদিকে মাংস বানানোর কাজের জন্য গাছের গুঁড়ির চাহিদাও ব্যাপক বেড়েছে।
আবদুল হান্নান /এবিএইচ