ভারতের বলিউডের গ্ল্যামার দুনিয়ায় নতুন সেনসেশন তিনি। উনত্রিশ বছরের এই সুন্দরী উচ্চশিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসে হিন্দি সিনেমার জগতে পা রেখেছেন, আর আবির্ভাবের প্রায় আট বছর পর বলিউড যেন তাকে আজ নতুন করে আবিষ্কার করছে।
আজ শুক্রবার, ভারতে মুক্তি পাচ্ছে স্বরা ভাস্করের আলোড়ন ফেলা নতুন ছবি ‘আনারকলি অব আরা’। এই ছবিতে বিহারের এক পিছিয়ে পড়া এলাকায় গ্রাম্য জলসার লাস্যময়ী নর্তকীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন স্বরা, আর সেখানে তার সাহসী দৃশ্যে অভিনয় নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
কিন্তু এই ছবির প্রচারণার সময় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেই আর একটা সাংঘাতিক বোমা ফাটিয়েছেন স্বরা– জানিয়েছেন এর আগে তার একটা ছবিতে বাংলাদেশের জন্য চূড়ান্ত অপমানজনক একটা ডায়ালগ তাকে বলতে বলা হলেও পরিচালকের সে কথায় তিনি রাজি হননি।
স্বরা ভাস্করের নিজের কথাতেই, “আমার ক্যারিয়ারে এর আগে একটা ছবিতে এমন একটা সংলাপ ছিল, যেখানে আমার চরিত্রটা বলবে ‘বাংলাদেশি আর কুত্তে কঁহি পর ভি ঘুষ যাতে হ্যায়!’ – অর্থাৎ এই বাংলাদেশিগুলো ঠিক কুকুরের মতো, যেখানে-সেখানে ঢুকে যায়।
ফিল্মি সংলাপটা যাতে রিয়ালিস্টিক বা বাস্তবসম্মত শোনায় সে জন্যই সংলাপটা ওভাবে লেখা হয়েছিল, আর কেউ তাতে আপত্তি করার কিছু খুঁজেও পায়নি। কিন্তু আমি ওটা শোনার পর কিছুতেই সেটা ফিল্মে বলতে রাজি হইনি, কারণ আমার মনে হয়েছিল এই ধরনের একটা সংলাপ ভীষণ অবমাননাকর!’’
ভারতের বিভিন্ন বড় শহরে, বিশেষ করে মুম্বইয়ে, কথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির চেষ্টা অতীতে বহুবার হয়েছে। শিবসেনার মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল তাদের রাজনৈতিক প্রচারে নানা সময়ে বলেছে, মুম্বইয়ে অপরাধের মাত্রা বাড়ার পেছনে আছে অবৈধ বাংলাদেশিরাই।দিল্লিতেও অনেকটা একই ধরনের কথা বহুবার বলেছে বিজেপি-ও!
এই বাংলাদেশিরাই নাকি দলে দলে বেআইনিভাবে ভারতে ঢুকে এসে মুম্বইয়ের বস্তি বা চাউলগুলো ছেয়ে ফেলেছে, করছে অরাজকতা- শিবসেনা নেতারা এমন অভিযোগও বহুবার করেছেন কোনও প্রমাণ ছাড়াই। ফলে সেই শহরের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও বাংলাদেশিদের অপদস্থ করে সংলাপ যে দু’একজন লিখবে, এতে বোধহয় আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু আশ্চর্য যেটা, তা হল বলিউডের একজন নামজাদা অভিনেত্রী সেই সংলাপের প্রতিবাদ করেছেন জোর গলায় – সেই সংলাপ বলতেও অস্বীকার করেছেন। সমাজ-রাজনীতি-কূটনীতি সম্পর্কে এ ধরনের সংবেদনশীলতা বলিউডে বিরল বললেও বোধহয় কম বলা হয়।
স্বরা স্ক্রল পোর্টালকে আরও বলেছেন, ‘প্রগতিশীল ধ্যানধারণা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক রূপান্তরের প্রক্রিয়া নিয়ে আমার যে নিজস্ব চিন্তাভাবনা বা অভিজ্ঞতা – সেটাই চিরকাল আমার চয়েস বা পছন্দকে প্রভাবিত করে এসেছে। সাহিত্য বা সমাজতত্ত্বের শিক্ষায় আমার যে ব্যাকগ্রাউন্ড সেটাই চিরকাল আমার রোলগুলোর জন্য আমি কীভাবে প্রস্তুত হব, তার জন্য আমাকে পথ দেখিয়েছে।’
এর পরই তিনি সেই ঘটনাটার উদাহরণ দিয়েছেন – যেখানে তিনি বাংলাদেশের জন্য চূড়ান্ত অবমাননাকর সংলাপটি বলতে রাজি হননি।
স্বরা ভাস্করকেই বোধহয় এমন কথা বলা মানায়, কারণ তিনি উঠে এসেছেন অনন্য এক শিক্ষা-সংস্কৃতির পরিবেশ থেকে।
‘আনারকলি কি আরা’র আগে স্বরা তার আট-নয় বছরের কেরিয়ারে ‘গুজারিশ’, ‘তনু ওয়েডস মনু’, ‘তনু ওয়েডস মনু রিটার্নস’, ‘রানঝানা’, ‘আওরঙ্গজেব’, ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’, ‘চিল্লার পার্টি’, ‘নিল বাট্টে সানাট্টা’-র মতো বেশ কিছু সফল ছবিতে অভিনয় করেছেন। কিন্তু এর মধ্যে কোনওটায় তাকে সেই বিতর্কিত সংলাপ বলতে বলা হয়েছিল?