ডা.এম.এ.মান্নান নাগরপুর(টাংগাইল)সংবাদদাতা:
আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমােক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়ােজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্ব সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলাে। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন।
এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যােগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে।
অতঃপর ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস, ২০২৫ যথাযােগ্য মর্যাদায় দেশব্যাপী উদযাপন উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নিম্লরূপ: “অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন” নারী দিবস হচ্ছে- জাতিগত, গোষ্ঠীগত, ভাষাগত, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কিংবা রাজনৈতিক সব ক্ষেত্রে বৈষম্যহীনভাবে নারীর অর্জনকে মর্যাদা দেয়ার দিন।
এদিনে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাসকে স্মরণ করে এবং ভবিষ্যতের পথ পরিক্রমা নির্ধারণ করে, যাতে আগামী দিনগুলো নারীর জন্য আরও গৌরবময় হয়ে ওঠে। বাধা ঠেলে এগিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের নারীরা দৃষ্টান্ত। এ নিয়ে তর্কবিতর্কের সুযোগ নেই। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নারীদের ভূমিকার কথা একবার চিন্তা করুন। সন্তান, সম্পদের সুরক্ষা তাে বটেই, দুর্যোগের ঝুঁকি মােকাবিলায় নারীর অবদান সারা বিশ্বে স্বীকৃত।
মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে ছাত্রীরা ভালাে করছে। শুধু তা-ই নয়, চাকরি ও সেবা খাতেও তাদের এগিয়ে যাওয়া লক্ষণীয়। খেলাধুলায় পরপর সাফল্য এসেছে মেয়েদের হাত ধরে। এবার এই অগ্রগতির উল্টোপিঠটা দেখি। আমাদের সংবিধান পাঁচ মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সংবিধানে জাতি, ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে সমানাধিকার নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এতগুলাে বছর পরও নারীদের প্রতি বৈষম্য কি ঘুচল?ধরুন, খাদ্য।
ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকার কিশােরী ও নারীরা আছে পুষ্টি-সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ইউনিসেফ বলে, এ দেশের মেয়েরা অপুষ্টির দুষ্টচক্রে আটকা পড়েছে। শিক্ষাব্যবস্থার মূল ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। প্রত্যেক শিশু জন্মগ্রহণ করার পর থকে শিক্ষিকা হিসেবে পায় তার মাকে। সেখান থেকেই তার জীবনযুদ্ধের প্রারম্ভ। শিশু চারপাশের পরিবেশকে চিনতে শিখে মায়ের সহায়তায়।
সে জীবনে প্রথম বাইরের পৃথিবীকে বিস্ময়ে অবলোকন করে মায়ের মাধ্যমে। এই শিশুর প্রথম শিক্ষার স্তর হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। নারী শিক্ষকগণ একদিকে নিজের মায়ের মতাে শিক্ষার্থীদের আদর-যত্ন করে শিক্ষাদান করেন। একজন শিশুর সব চাহিদা একমাত্র তার মা-ই বোঝে। তাই প্রাথমিক শিক্ষায় নারী শিক্ষকের গুরুত্ব অপরিসীম।
আমি ২৪/০১/২০২৩ ইং তারিখে বর্ধমানকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের মাধ্যমে আমার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধকরণের দায়িত্বে নিয়োজিত আছি। নারী দিবসে আমার প্রত্যাশা একদিন নারী দিবস পালন করা হয়তো একটু আনুষ্ঠানিকতা করা, কিন্তু আমরা নারীরা যদি নিজেদের পূর্ন অধিকার আদায় করে নিতে পারি, পরিবারে ও সমাজের সমগ্র বিচরন ক্ষোত্রের সার্বিক মর্যাদা পাই, তাহলে প্রতিটি দিনই আমাদের নারী দিবস আর বিশ্ব নারী দিবস পালিত হবে অধিকার আদায়ের জন্য নয় শুধুমাত্র আনন্দ উপভােগ করার জন্য।
শুধু ৮ মার্চ নারীর প্রতি সমানুভূতি প্রদর্শন না করে, বছরের বাকি ৩৬৪ দিনও জেন্ডার সমতার কথা মাথায় রেখে কাজ করুন। কারন, নারীর জন্য বিনিয়ােগ মানে দেশ ও জাতির জন্য বিনিয়োেগ। এটাই আমার প্রত্যাশা।