দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন: নেত্রকোনার মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয় বাউন্ডারির ভেতরে বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে মাটি ভরাটের নামে অর্থ নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। দুই-একটি প্রকল্পের অর্থ নতুন কার্যালয়ের সামনে স্বল্প পরিমাণ মাটি ভরাট করা হলেও বেশি ভাগ প্রকল্পের বিপরীতে মাটিই ভরাট করাই হয়নি।

এবিষয়ে উপজেলার ইউএনও মো. শাহ আলম মিয়া ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. হুমায়ুন কবীর প্রতিবেদকের কাছে সঠিক তথ্য উপস্থাপন বা বক্তব্য দিতে গড়িমসি করেন। প্রকল্পের তথ্য চেয়ে ইউএনও’র বরাবরে তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের প্রেক্ষিতে কালক্ষেপন শেষে আংশিক তথ্য প্রদান করলেও অধিকাংশ তথ্যই গোপন করারও অভিযোগও রয়েছে। পরে প্রতিবেদক তথ্য অবমুক্তকরণ নির্দেশিকা, ২০১৫ (তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর আলোকে প্রণীত) এর ১৩ নং ক্রমিকে (ধারা) প্রতিকার চেয়ে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের কাছে আপীল দায়ের করেন।

তথ্য অনুসন্ধানে, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কারের আওয়তাধীন সাধারণ ও বিশেষ ক্যাটাগরীতে কাবিখা (চাল), কাবিখা (গম), কাবিটা ও টিআর এবং ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের কাবিখা প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বাউন্ডারীর ভেতরে বিভিন্ন কার্যালয়ের সামনে ও পেছনে মাটি ভরাটের নামে ১০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বরাদ্দকৃত প্রকল্পে নগদ অর্থসহ চাল ও গমের মূল্য প্রতি মে.টন আনুমানিক ৩০ হাজার টাকা গড় মূল্য ধরে নেওয়া হলে ১০টি প্রকল্পের অনুকুলে আসে ১৬ লক্ষ টাকার বেশি। কিন্তু মাটি সরবরাহকারী নজরুল ইসলামের ভায্য মতে তিনি তিন লক্ষ ৬০ হাজার টাকার মাটি ইউএনও’র বাংলোসহ উপজেলার পাবলিক হল ও ইউএনও অফিসের নতুন ভবনের আশপাশে ভরাটে মাটি সরবরাহ করেছেন।

সরেজমিনে, গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার কাবিটার আওতায় ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের প্রথম পর্যায়ে ‘পুরাতন নির্বাহী অফিসের কার্যালয়ের পেছনে মাটি ভরাট’ প্রকল্পে দুই লক্ষ টাকা ও তৃতীয় পর্যায়ে ‘পুরাতন ইউএনও অফিসের সামনে মাটি ভরাট’ প্রকল্পের জন্য আরও দুই লক্ষ টাকার বিপরীতে পুরাতন ইউএনও অফিসের সামনে বা পেছনে মাটিই ফেলানো হয়নি। আবার একই অর্থ বছরে কাবিখার আওতায় তৃতীয় পর্যায়ে ‘উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস মাঠে মাটি ভরাট’ প্রকল্পে পাঁচ দশমিক তিন ছয় মে.টন গম ও কাবিটার আওতায় ‘উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনে মাটি ভরাট’ প্রকল্পে আরও এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং কাবিখার আওতায় ‘উপজেলা কোয়ার্টারের সামনে মাটি ভরাট’ কাজে পাঁচ দশমিক তিন ছয় মে.টন চাল ও কাবিটার আওতায় ‘উপজেলা কোয়ার্টারের সামনে মাটি ভরাট’ কাজে এক লক্ষ ৬০ হাজার টাকার প্রকল্পগুলোর বিপরীতে কোন প্রকার মাটি ভরাটের কাজ হয়নি। অথচ ওই সকল প্রকল্পগুলোর অবস্থান পুরাতন ইউএনও অফিসের সামনের ও পেছনে অবস্থিত।

২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে টিআর কর্মসূচীর আওতায় এক লক্ষ টাকা বরাদ্দে বিপরীতে ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাংলোয় মাটি ভরাট ও ড্রেইন নির্মাণ’ কাজে ইউএনও’র বাংলোয় বিভিন্ন প্রকার বৃক্ষগুলোর গোড়ালীতে কিছু পরিমাণ মাটি দেওয়ার অস্তিত্ব থাকলেও নতুন ড্রেইন নির্মাণ হয়েছে তা চোখে পড়েনি। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় পাঁচ মে.টন খাদ্য বরাদ্দের বিপরীতে ‘সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসের গর্ত (জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পেছনে) ভরাট’ কাজে এখানেও মাটি ভরাট করা হয়নি।

এছাড়াও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে টিআর কর্মসূচির আওতায় ১ম পর্যায়ের জেলা প্রশাসকের বরাদ্দকৃত ‘মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ির গ্যারেজ সংস্কার’ ৯০ হাজার টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ইস্যুকৃত ৫১.০১.৭২০০.০১৫.৪১.১২৩.২৩-৪৮৬নং স্মারক পত্রের ২নং শর্তাবলি অনুযায়ী ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের ১ম পর্যায়ের বরাদ্দের বিপরীতে গ্যারেজ সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও এই কাজ গত ৩০ জুন গ্যারেজটি সংস্কার কাজে হাত দেন। কাজ না করে সরকারি বরাদ্দের ৯০ হাজার টাকা কীভাবে মজুত করে রাখার বিধান রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

তবে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে কাবিখা কর্মসূচীর আওয়তায় ‘উপজেলা পরিষদে নতুন ভবনের সামনে মাটি ভরাট’ কাজে পাঁচ দশমিক এক আট তিন তিন মে.টন চাল ও ‘উপজেলা পরিষদের পাবলিক হলের চতুর্দিকে মাটি ভরাট’ কাজে পাঁচ দশমিক এক আট তিন তিন মে.টন গম এই দুটি প্রকল্পের বিপরীতে মাটি ভরাটের সত্যতা মিলেছে। স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, বর্তমানে নব নির্মিত পাবলিক হলটি যে স্থানে সেখানে উঁচু ভিটায় বড় পরিসরে টিন শেড ঘর ছিল। পাবলিক হল নির্মাণের পূর্বে পুরাতন টিনের ঘরের টিন, ইট ও ঘরের অন্যান্য সামগ্রী নিলামে বিক্রি করার পর থেকে যাওয়া ভিটার মাটি ইউএনও নতুন কার্যাালয় ও পাবলিক হলের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলানো হয়েছিল।

এ বিষয়ে মাটি সরবরাহকারী উপজেলার কাইটাল গ্রামের নজরুল ইসলাম জানান, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের মদন ইউএনও অফিসের নতুন গেইট থেকে নতুন ভবনের আশপাশের বিভিন্ন স্থানে তিন লক্ষ ৬০ হাজার টাকার মাটি সরবরাহ করি। এর বিপরীতে সাবেক পিআইও শওকত জামিল দুই লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ও তারই (পিআইও) অফিসের সহকারি রাসেলের মাধ্যমে ২০ বিশ হাজার টাকা সব মিলিয়ে দুই লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পেয়েছি। বাকি টাকার জন্য ইউএনও শাহ আলম মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করলে ইউএনও বলেন শওকত জামিলের কথা। পিআইও বলেন ইউএনও মহোদয়ের কথা। গত ঈদে বাকি টাকা দিবেন বলে আশ্বস্থ করেছিলেন ইউএনও। কিন্তু ঈদ চলে গেলেও টাকা পায়নি।

বর্তমান পিআইও মো. হুমায়ুন কবীর জানান, এই সকল কাজ তার আমলে নয়। কিছু জানা ও বলার থাকলে ইউএনও মহোদয়েরর সাথে কথা বলেন। সাবেক পিআইও শওকত জামিল বদলী হয়ে অন্যত্র থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

মদনের ইউএনও মো. শাহ আলম মিয়ার বক্তব্যের জন্য ১০টি প্রকল্পের নামসহ হোয়াটস্ অ্যাপ মেসেঞ্জারে তথ্য প্রেরণ এবং বক্তব্য দেওয়ার জন্য একাধিকবার অনরোধ করে খুদে বার্তাও প্রেরণ করা হয়। বহুবার সরকারি মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে গত মঙ্গলবার তার কার্যালয়ে গিয়েও সাক্ষাত পাওয়া যায়নি। ইউএনও’র বাংলোয় গেলে দায়িত্বরত আনসার সদস্যকে প্রতিবেদকের পরিচয় নেন। পরে ইউএনও’র সাথে দেখা করে ফিরে এসে আনসার সদস্য বলেন আপনাকে (প্রতিবেদক) অফিসে যেতে বলেছেন। সেখানে কথা বলবেন স্যার। সারাদিন ইউএন’র অফিসের অবস্থান করে বিকেল সোয়া ৫টার পর্যন্ত অপেক্ষা করে ইউএনও’র সাক্ষাত মেলেনি। এরপর মোবাইলে অনেকবার ফোন দেওয়া এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, যেসব প্রকল্পগুলোর কথা বললেন তা কিসের আলোকে তৈরী করা তা এই মুহুর্তে ফোনে কিছু বলা সম্ভব না। তবে একই বিষয়ে প্রকল্প নেওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে। সাংবাদিকের ফোন কেন ধরবেন না তা আমি মদনের ইউএনওকে বলে দিচ্ছি।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version