...
সোমবার, মে ২০, ২০২৪

সাহাবিরা যেভাবে হাদিস বর্ণনা করেছেন

যা যা মিস করেছেন

নবী (সা.)-এর কথা, কাজ এবং তাঁর বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি সবই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত। তাই হাদিস শরিফ হচ্ছে নবী-জীবনের বিশদ বিবরণ। নবী-জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনা বিস্তারিতভাবে হাদিসের কিতাবে বিদ্যমান আছে। হাদিস শরিফ যেমন নবী (সা.)-এর জীবনের বিভিন্ন ঘটনা, তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি, তাঁর আচার-ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়েরও মূল্যবান দলিল, তেমনি তা কোরআনের পরে শরিয়তের বিধি-বিধানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস ও প্রমাণ। কেননা রাসুল (সা.)-এর হাদিস ও সুন্নাহ হলো কোরআনে কারিমের ব্যাখ্যা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আপনার প্রতি নাজিল করেছি কোরআন, যাতে আপনি মানুষকে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে পারেন, যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৪৪)

আর আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি আর আমিই এর হেফাজতকারী।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৯)

ওই আয়াতের ঘোষণায় স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমের হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন কথা হলো যে কোরআনে কারিম শুধু শব্দাবলির নামই নয়, বরং তা শব্দ এবং মর্ম ও ব্যাখ্যা উভয়টির সমন্বয়েই গঠিত। এতে প্রমাণিত হয় যে কোরআনে কারিমের শব্দ এবং মর্ম ও ব্যাখ্যা উভয়টিই মহান আল্লাহ কর্তৃক সংরক্ষিত। অতএব কোরআনে কারিমের মতো রাসুল (সা.)-এর হাদিস ও সুন্নাহও সংরক্ষিত।

নবী (সা.)-এর প্রত্যক্ষ সাহচর্য গ্রহণ করেছেন সাহাবায়ে কিরাম। আর তাঁরাই হাদিস শরিফের প্রথম বর্ণনাকারী। তাঁদের মাধ্যমেই নবী (সা.)-এর জীবন ও আদর্শ সংরক্ষিত হয়েছে। লক্ষাধিক সাহাবি নবী (সা.)-কে দেখেছেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর সাহচর্য লাভ করেছেন। তাঁদের এই সাহচর্য ছিল ওই পূর্ণতম আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে, যা ইসলামী পরিভাষা ছাড়া প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সেটি হচ্ছে ঈমান। অতএব যারা বলে যে ১০০ বছর ধরে হাদিস শরিফ অসংরক্ষিত ছিল, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বরং রাসুল (সা.)-এর যুগ থেকেই লিখনের মাধ্যমে না হলেও বিভিন্ন পন্থায় হাদিস ও সুন্নাহ সংরক্ষণের ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে। এ আলোচনা বোঝার সুবিধার্থে প্রথমেই আমরা বর্ণনাকারীর সংখ্যাভেদে হাদিসের প্রকারভেদ বুঝে নিই।

বর্ণনাকারীর সংখ্যাভেদে হাদিসের প্রকারভেদ : বর্ণনাকারীর সংখ্যাভেদে হাদিসগুলো তিন প্রকার—

এক. মুতাওয়াতির : যে হাদিস রাসুল (সা.)-এর যুগ থেকে অদ্যাবধি প্রতিটি যুগে এমন বিপুলসংখ্যক বর্ণনাকারী বর্ণনা করে আসছেন, যাঁদের মিথ্যার ওপর একত্র হওয়া অসম্ভব, সেগুলোকে মুতাওয়াতির হাদিস বলা হয়। এ ধরনের হাদিস আবার দুই প্রকার—

ক. শাব্দিক মুতাওয়াতির : যে হাদিস উপরোক্ত সংখ্যার বর্ণনাকারীরা এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যে তাঁদের প্রত্যেকের বর্ণনার শব্দও এক ও অভিন্ন হয়, যার শব্দগুলোর মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। উদাহরণত, রাসুল (সা.)-এর হাদিস—যে ব্যক্তি কোনো মিথ্যা কথা বা কাজ আমার দিকে সম্বন্ধ করে ইচ্ছাকৃত বর্ণনা করবে, সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নেয়। (বুখারি, হাদিস : ১১০)

এ হাদিস সহিহ বুখারিসহ হাদিসের অসংখ্য কিতাবে অসংখ্য সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটি প্রায় ৭৪ জন সাহাবি প্রায় একই শব্দে বর্ণনা করেছেন। পরে প্রত্যেক সাহাবি থেকে তাঁদের নিজ নিজ অসংখ্য শাগরেদ বর্ণনা করেন। এভাবে অসংখ্য বর্ণনায় তা আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে।

খ. অর্থগত মুতাওয়াতির : যে হাদিস উপরোক্ত সংখ্যার বর্ণনাকারীরা অভিন্ন শব্দে বর্ণনা না করে থাকলেও সব বর্ণনাকারী এমন একটি বিষয়ে একমত, যা প্রত্যেকের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয়, ওই বিষয়টিই ‘অর্থগত মুতাওয়াতির’ দ্বারা প্রমাণিত। উদাহরণত, নামাজের ওয়াক্ত ও রাকাতসংখ্যা ইত্যাদি প্রতিটি শাব্দিক মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা প্রমাণিত না হলেও এমন বিপুলসংখ্যক বর্ণনাকারীর বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত, যাঁদের শব্দ ও ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন হলেও এ কথার ওপর সবাই একমত যে ফরজ নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত এবং ফজরের ফরজ দুই রাকাত ও জোহরের ফরজ চার রাকাত ইত্যাদি। অতএব এগুলো ‘অর্থগত মুতাওয়াতির’ হাদিসগুলোর দ্বারা প্রমাণিত।

দুই. মাশহুর : যে হাদিস সাহাবায়ে কিরামের যুগে মুতাওয়াতির সংখ্যক বর্ণনাকারীরা বর্ণনা করেননি, বরং কয়েকজন বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন, তবে তাবেয়ি বা তাবে তাবেয়িদের যুগ থেকে অদ্যাবধি মুতাওয়াতির সংখ্যক বর্ণনাকারীদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়ে আসছে।

তিন. খবরে ওয়াহিদ : যে হাদিসগুলোর বর্ণনাকারীদের সংখ্যা কোনো যুগে মুতাওয়াতির সংখ্যক বর্ণনাকারীদের সংখ্যা থেকে কমে যায়, যার কারণে তা ‘মুতাওয়াতির’ বা ‘মাশহুর’ পর্যায়ে পৌঁছায় না।

হাদিসের ওই প্রকারভেদের মাধ্যমে বোঝা যায় যে প্রথম প্রকার তথা ‘মুতাওয়াতির’ হাদিস প্রামাণ্যের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। কেননা তা এমন অকাট্যভাবে নিশ্চিতরূপে প্রমাণিত, তাতে সন্দেহ পোষণ করা অসম্ভব। আর দ্বিতীয় প্রকার তথা ‘মাশহুর’ হাদিস প্রামাণ্যের দিক দিয়ে ‘মুতাওয়াতির’ থেকে সামান্য নিচু হলেও প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।

আর তৃতীয় প্রকার তথা ‘খবরে ওয়াহিদ’ হাদিস প্রামাণ্যতা তার বর্ণনাকারীর সততা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য। যদি বর্ণনাকারীদের কারো যোগ্যতার মধ্যে সামান্য সন্দেহ হয়, তখন হাদিসের প্রামাণ্যতায়ও সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তবে সামান্য সন্দেহযুক্ত বর্ণনা যদি একাধিক বর্ণনাকারীর মাধ্যমে বর্ণিত হয়, তখন তার সন্দেহ দূর হয়ে যায়। আর যদি বেশি সন্দেহযুক্ত হয় অথবা বর্ণনাকারী অসৎ বা অযোগ্য হয় তখন সে বর্ণনা অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। (উসুলুল জাসসাস ৩/৩৫-৫৯)

খবর গ্রহণের এই মানদণ্ড আমরা অনেক ক্ষেত্রে দুনিয়াবি কর্মকাণ্ডেও বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে থাকি। তবে হাদিস গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বযুগের হাদিসবিশারদরা ওই মাপকাঠিতে কঠিনভাবে পরখ করে যাচাইয়ের মাধ্যমেই যুগে যুগে হাদিস বর্ণনার ধারা চলে আসছে। প্রত্যেক বর্ণনাকারী ও গ্রহণকারী রাসুল (সা.)-এর এই হাদিসটি মাথায় রেখেই হাদিস বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মিথ্যা কথা বা কাজ আমার দিকে সম্বন্ধ করে ইচ্ছাকৃত বর্ণনা করবে, সে যেন জাহান্নামে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নেয়। (বুখারি, হাদিস : ১১০)

 

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.