ইসলাম মানবজাতিকে দিয়েছে সঠিক ও কল্যাণকর বিধিবিধান। সুন্দর পরিচ্ছন্ন ও উন্নত জীবনের পথ দেখায় মহাগ্রন্থ আল কুরআন। মানুষের কথা বলা থেকে শুরু করে চলাফেরা, দেখাশোনা, খাওয়া-দাওয়াসহ কোনো কিছুই বাদ যায়নি। সবই আলোচিত হয়েছে পবিত্র কুরআনে। প্রয়োজন শুধু তা পড়ে দেখার এবং বুঝে আমল করার। তবেই উন্নততর হবে মানুষের জীবনমান।
মানুষের জীবন ঘনিষ্ঠ কুরআনের উপদেশগুলো হলো-
১. সত্য ও মিথ্যার মিশ্রণ করা যাবে না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত করো না। এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪২)
২. সৎ কাজ নিজে করে অন্যকে করতে বলো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও, আর নিজেদের বিস্মৃত হও…?’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৪)
৩. বিবাদে লিপ্ত হয়ো না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘…দুষ্কৃতকারীরূপে পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৬০)
৪. কারো মসজিদে যাওয়ার পথে বাঁধা দিও না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তার চেয়ে বড় জালিম আর কে, যে আল্লাহর (ঘর) মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং এর বিনাশসাধনে প্রয়াসী হয়…?’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১৪)
৫. কারো অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তা তোমরা অনুসরণ করো; তারা বলে, না, বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদের যাতে পেয়েছি, তার অনুসরণ করব…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭০)
৬. প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করো না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করো…।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ১)
৭. অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভোগ করবে না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৮)
৮. সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘…সীমা লঙ্ঘন করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯০)
৯. আল্লাহর পথে ব্যয় করো।।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৫)
১০. এতিমদের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ তোমাকে এতিমদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, বলে দাও, তাদের জন্য সুব্যবস্থা করা উত্তম…।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২০)
১১. ঋতুস্রাবের সময় সহবাস পরিহার করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ঋতুস্রাবের সময় যৌন সঙ্গম করো না। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২২)
১২. শিশুকে দুই বছর বুকের দুধ খাওয়াও।
ইরশাদ হয়েছে, ‘শিশুকে পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩০)
১৩. সৎ শাসক নির্বাচন করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎ গুণ দেখে শাসক নির্বাচন করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৪৭)
১৪. ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নয়।
ইরশাদ হয়েছে, ‘দ্বিনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫৬)
১৫. মানুষের নিঃস্বার্থ উপকার করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রতিদান কামনা করে দান বিনষ্ট করো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬৪)
১৬. অন্যের বিপদে সাহায্য করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রয়োজনে সহযোগিতা করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৩)
১৭. সুদ পরিহার করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘সুদ গ্রহণ করো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)
১৮. অপারগ ব্যক্তির ওপর সদয় হও।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি ঋণগ্রহীতা অভাবগ্রস্ত হয়, তবে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮০)
১৯. হিসাব সংরক্ষণ করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘ঋণের বিষয় লিখে রাখো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮২)
২০. আমানত রক্ষা করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আমানত রক্ষা করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৩)
২১. পরনিন্দা পরিহার করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘কারো গোপন তথ্য অনুসন্ধান করো না এবং পরনিন্দা করো না।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৩)
২২. সব নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘সব নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৫)
২৩. আল্লাহ চেষ্টা অনুযায়ী প্রতিদান দেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সাধ্যের বাইরে কারো ওপর বোঝা চাপিয়ে দেন না। সে তা-ই পায় যা তার অর্জন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৬)
২৪. আল্লাহ বিচ্ছিন্নতা পছন্দ করেন না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)
২৫. সত্যের প্রতি আহ্বানকারী থাকা চাই।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের ভেতর এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা ভালো কাজের প্রতি আহ্বান জানাবে, সৎ কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৪)
২৬. কোমলভাষী হও।
ইরশাদ হয়েছে, ‘রূঢ় ভাষা ব্যবহার করো না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)
২৭. সৃষ্টিজগতে আল্লাহর অনুসন্ধান করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘এই বিশ্বের বিস্ময় ও সৃষ্টি নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)
২৮. নারী-পুরুষ সবাই তার কর্মফল পাবে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘নারী ও পুরুষ উভয়ই তাদের কৃতকর্মের সমান প্রতিদান পাবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯৫)
২৯. প্রাপ্তদের উত্তরাধিকারের সম্পদ বুঝিয়ে দাও।
ইরশাদ হয়েছে, ‘মৃতের সম্পদ তার পরিবারের সদস্যদের ভেতর বণ্টন করতে হবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭)
৩০. নারীদের উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করো না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘সম্পদের উত্তরাধিকারে নারীদেরও সুনির্দিষ্ট অংশ রয়েছে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭)
৩১. অনাথের সম্পদ আত্মসাত্ করো না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘অনাথদের সম্পদ আত্মসাত্ করো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০)
৩২. নিষিদ্ধ নারীকে বিয়ে করো না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘যাদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তাদের বিয়ে করো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৩)
৩৩. অন্যায়ভাবে সম্পদ হরণ করো না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভক্ষণ করো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৯)
৩৪. পুরুষ পরিবারের অভিভাবক হবে।
ইরশাদ হয়েছে, ‘পরিবারের অভিভাবকত্ব ও অর্থ ব্যয় পুরুষের দায়িত্ব।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৪)
৩৫. সদাচারী হও।
ইরশাদ হয়েছে, ‘অন্যের প্রতি সদাচারী হও।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)
৩৬. কৃপণ হয়ো না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘কার্পণ্য করো না এবং অন্যকে কার্পণ্য শিক্ষা দিও না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৭)
৩৭. বিদ্বেষ পরিহার করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘বিদ্বেষী হয়ো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৪)
৩৮. ন্যায়বিচার করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের প্রতি ন্যায়বিচার করো।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৫৮)
৩৯. মানুষ হত্যা করো না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘পরস্পরকে হত্যা করো না।’(সুরা : নিসা, আয়াত : ৯২)
৪০. বিশ্বাস ভঙ্গকারীদের পক্ষপাত করো না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ নিয়ে বিতর্ক করো না।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০২)
৪১. সত্যের ওপর অবিচল থাকো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৩৫)
৪২. অঙ্গীকার পূর্ণ করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ১)
৪৩. সৎকাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘সৎকাজ ও খোদাভীতির ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতা করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ২)
৪৪. সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে সহযোগিতা করো না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ২)
৪৫. সত্যের অনুগামী হও।
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে সাক্ষ্যদানের ক্ষেত্রে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৮)
৪৬. অপরাধীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও।
ইরশাদ হয়েছে, ‘পুরুষ চোর ও নারী চোর, তাদের হাত কেটে দাও। এটা তাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক দণ্ড।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩৮)
৪৭. পাপ ও অবৈধ জিনিসের পেছনে শ্রম ব্যয় করো না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদের অনেককেই তুমি দেখবে পাপে, সীমালঙ্ঘনে ও অবৈধ ভক্ষণে তৎপর। তারা যা করে নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৬২)
৪৮. মাদকদ্রব্য বর্জন করো।
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! নিশ্চয় মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৯০)
৪৯. জুয়া খেলো না।
ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! নিশ্চয় মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক তীর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৯০)