একটি সমাজ এগিয়ে চলে মূলত যুব সমাজের কাঁধে ভর করেই। যুবকরা হয় সমাজের সবচেয়ে বেশি উদ্যমী আর কর্মঠ সদস্য। তবে এ যুবকরা যদি সমাজের কাঁধে চেপে বসে তাহলে সেই সমাজ মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। আমাদের এই উন্নয়নশীল দেশকে দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীর সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে হলে যুবসমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে এই যুবসমাজেরই বড় একটা অংশ আসক্ত হয়ে পড়েছে অনলাইন জগতে৷ ফলে ধীরে ধীরে নিজেদের জ্ঞ্যান এবং কর্মক্ষমতা লোপ পাচ্ছে৷ নেট দুনিয়া থেকে বেরিয়ে এসে তাদের পদচারণা করতে হবে বাস্তব জীবনে। বর্তমানে আমাদের যুবসমাজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। সমাজের বড় একটি অংশ রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন গেমিং এ আসক্ত।
বর্তমানে মোবাইল ফোনের আসক্তি এত বেড়েছে যে, যুবকরা জ্ঞান চর্চা সবচেয়ে বড় হাতিয়ার বইয়ের কথা প্রায় ভুলতে বসেছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হবে জ্ঞানপিপাসু, জ্ঞান অন্বেষণের জন্য মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছুটে বেড়াবে, নানা রঙের নানা জ্ঞানের বই পাঠ করে নিজের মস্তিষ্ককে করবে আরও উর্বর, নিজেকে করবেন আরো সমৃদ্ধ। সেখানে তারা মোবাইলের টাচ স্ক্রিনে নিজেদের সীমাবদ্ধ করে ফেলছেন। এই মোবাইল ফোন ও ডিভাইসের জালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পাশাপাশি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও ব্যাপকভাবে আচ্ছন্ন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ১২ কোটি ৬১ লাখের বেশি। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক বেড়েছে ২০ লাখ। দেশের বড় সংখ্যক শিশু-কিশোর এখন পাবজি, ফ্রি-ফায়ার, ক্লাস অব ক্লান, কমব্যাট স্ট্রাইক গো ইত্যাদি অনলাইন গেমে আসক্ত। আর বাকি অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটাচ্ছে দিনের বেশিরভাগ সময়। এভাবে তারা পর্যবসিত হচ্ছে এক অন্ধকার জগতে।
অপরদিকে, ডিভাইসের এই আসক্তির প্রভাব গ্রাম,গঞ্জ,শহর, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবখানেই পড়েছে। বই থেকে তাদের চোখ সারাদিন ফোনেই কেটে যাচ্ছে। এভাবে ধীরে ধীরে যুবসমাজের একটা বড় অংশ নিজেদের তথা দেশের উন্নয়নে কোনো কাজে আসছেনা। ফলে দেশের অর্থনৈতি ও শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।সর্বোপরি মাদকের কারণে দেশ ও সমাজের তৈরি হচ্ছে অস্থিতিশীলতা, নষ্ট হচ্ছে ভারসাম্য।এই সংকটাপন্ন যুবসমাজকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে দেশের সরকার ও সুশীল সমাজকে ।গ্রহণ করতে হবে আরও নতুন নতুন পরিকল্পনা এবং সেগুলোর বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে যুবকরা সুষ্ঠু মানসিকতা সম্পন্ন, শিক্ষিত ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে দেশের সার্বিক উন্নয়নের সহায়তা করতে পারে। সরকারি অনুদানে অন্ততপক্ষে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে একটি করে পাবলিক লাইব্রেরী ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধানের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে সামাজিক সচেতনতা, করতে হবে নিয়মিত সচেতনামূলক সভা-সমাবেশ। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সুশীল সমাজেকে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে।
মূলত একজন জ্ঞানসমৃদ্ধ মানুষ ও দক্ষ নাগরিক গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হওয়া উচিত একজন ব্যক্তির শৈশব থেকেই। এই ক্ষেত্রে পরিবার ও শিক্ষকদের ভূমিকাই মুখ্য। প্রতিটি পরিবারের দায়িত্ব সন্তানকে শৈশবে থেকেই স্ব-স্ব ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করা, সমাজের আচার ব্যবহার ও রীতিনীতি সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া। যাতে তার মধ্যে নৈতিকতা জাগ্রত হয় সৃষ্টি হয় পরিমিতি বোধ। সেই সাথে শিক্ষকদের দায়িত্ব ডিভাইসের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানদানের মাধ্যমে তাদেরকে আরো সমৃদ্ধ এবং প্রোডাক্টিভ করে তোলা।
শত হতাশার মধ্যেও আশার বাণী হলো অনলাইনে আসক্ত যুবসমাজের বাইরেও অনেক যুবকের হাতে রয়েছে জ্ঞ্যানের আলোর মশাল। সেই মশাল দিয়ে তাঁরা নিজেকে আলোকিত করছেন, আলোকিত করছেন এই সমাজকে। তাঁরাই আমাদের সমাজের তথা দেশের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এই সম্পদকে কাজে লাগাতে হলে তাদের নানাবিধ উপায়ে দক্ষ করে তুলতে হবে। যেন অনলাইন আসক্তি থেকে দূরে থেকে তাদের মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে পেতে পারি একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, সৎ, শিক্ষিত ও দক্ষ যুবসমাজ।
মোঃ রবিউল আওয়াল পারভেজ
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়