তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি: শুরু হয়েছে বর্ষা মৌসুম। প্রতি বছরই এ মৌসুমে গাইবান্ধার নদী বেষ্টিত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। তাইতো এবার বর্ষা শুরু কয়েকদিন আগে থেকেই নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে চলছে নৌকা তৈরির ধুম। সেইসঙ্গে মেরামত করা হচ্ছে পুরোনো নৌকা। ব্রহ্মপুত্র নদ তীরবর্তী নৌকার মাঝি, জেলে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে নৌকার ব্যবহার কমে যায়। তবে বর্ষা এলেই নদ নদী হয়ে ওঠে যৌবনা, টইটম্বুর। তখন নদী র্তীরবর্তী নৌকার মাঝি, জেলে, কৃষক ও বাসিন্দাদের প্রধান ভরসা হয়ে ওঠে নৌকা। তাই বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় নৌকার কদর। বেড়ে যায় পুরোনো নৌকা মেরামতের ধুম। গাইবান্ধা সদর উপজেলা ছাড়াও সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় নৌকা তৈরিতে ব্যস্ততা বেড়েছে কারিগরদের। এসব এলাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতাদের চাহিদামাফিক অর্ডার নেন কারিগররা। এখন সেসব চাহিদা মেটাতে নৌকা তৈরিতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। বর্ষার ভরা মৌসুম হওয়ায় দম ফেলারও ফুসরত নেই তাদের। বর্তমানে কাঠসহ নৌকা তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে নৌকা তৈরিতে খরচও বেড়েছে। তবে সে তুলনায় ক্রেতাদের কাছে নৌকার দাম বাড়েনি বলে জানান কারিগররা। তারা জানান, ৯ হাত লম্বা নৌকা ৩-৪ হাজার এবং ১২ হাত নৌকা ৫-৬ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তারা। গাইবান্ধা সদরসহ আশপাশ এলাকা থেকেও মানুষ এসে তাদের কাছ থেকে নৌকা তৈরি করে নিয়ে যায়। সদর উপজেলার পাঁচকুড়া গ্রামের এক নৌকা তৈরির কারিগর জানান, নিজস্ব পুঁজি না থাকার কারণে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে অনেক কারিগরকেই উপকরণ কিনতে হয়। যে কারণে তারা তেমন দাম পান না। প্রতিবছর বর্ষা আসার মাসখানেক আগে থেকেই তিনি নৌকা তৈরির কাজ শুরু করেন। এটি তার বাপ-দাদার পেশা। বর্ষায় নৌকা আর বছরের বাকি সময়টা বাসাবাড়ির আসবাবপত্র, দরজা-জানালা তৈরি করে চলে তার সংসার। তিনি বলেন ৩ টন ধারণ ক্ষমতার নৌকা মেরামতে বর্তমান সময়ে ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। একই নৌকা নতুন করে বানাতে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয় ।১০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নৌকা তৈরিতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। এ সময় নৌকা কারিগরদের দামও অনেক বেড়ে যায়। হাত হিসেবে নৌকা মেরামতের মজুরি নির্ধারণ হয়। প্রতি হাত নৌকা মেরামতে ১০০ টাকা দিতে হয়। এভাবে প্রতিটি বড় নৌকা মেরামতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা কারিগরদের মজুরি দিতে হয়। এমনকি চলতি মৌসুমে নৌকা মেরামত করে যাওয়ার সময় কারিগরদের আগামী মৌসুমের জন্য অগ্রিম টাকাও প্রদান করতে হয়।