কচি মন সেটাই ধারণ করে, যা তাকে গুরুত্বের সঙ্গে শেখানো হয়। আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চর্চা যদি শিশুকাল থেকে শুরু হয়, সে সম্পর্ক মজবুত থাকবে। তাই বাচ্চাদেরকে নিয়মিত মসজিদে নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত করা মুসলিম অভিভাবকের উচিত। এমনকি বাচ্চা দুষ্টুমি করলেও। বয়সের পরিক্রমায় আমরা যেমন দুষ্টুমি ছেড়েছি, তারাও ছেড়ে দেবে। তাই এটি বিব্রতকর কোনো বিষয় নয়। যারা বেশি দুষ্টুমি করে, তাদের কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে শোধরানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, হুমকি-ধমকি দিয়ে কচি মনে ভয়ের উদ্রেক করা যাবে না। এতে মসজিদভীতি তৈরি হতে পারে।মনে রাখতে হবে, শিশুদের যথাযথ নামাজ শেখানো সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) ছোটবেলার স্মৃতি বর্ণনা করে বলেন, ‘এক রাতে আমি নবী (স.)-এর পেছনে বাম পাশে নামাজে দাঁড়িয়েছিলাম। তিনি নামাজরত অবস্থায় আমাকে হাত দিয়ে টেনে নিজের ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দেন।’ (সহিহ বুখারি: ১/২৫৫)দুঃখজনক বিষয়, এখনও অনেক জায়গায় শিশুদের মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়। অথচ এটি সুন্নাহপরিপন্থী। হজরত আবু কাতাদা আল আনসারি (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (স.) তাঁর নাতনী উমামাহকে কাঁধে নিয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। উমামাহ হলো আবুল আস বিন রাবি ইবনে আবদে শামসের ঔরসে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর মেয়ে জয়নব (রা.)-এর সন্তান।রাসুলুল্লাহ (স.) সিজদায় যাওয়ার সময় উমামাহকে নামিয়ে রাখতেন এবং উঠে দাঁড়ানোর সময় পুনরায় কাঁধে উঠিয়ে নিতেন। (বুখারি: ১/১০৯)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, একদিন সিজদায় থাকা অবস্থায় রাসুলের (স.) নাতি হাসান ও হোসাইন এসে তাঁর পিঠে চড়ে বসে। কিন্তু তারা নেমে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি নিজে সরাননি। ফলে দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত তিনি সেজদারত থাকেন। নামাজশেষে দীর্ঘক্ষণ সেজদায় থাকার কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি জবাব দিলেন, ‘আমার নাতিরা আমার পিঠে চড়ে বসেছিল। আমি তাদের বিরক্ত করতে চাইনি।’ (সুনানে নাসায়ি: ১১৪১)
হাদিস থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, শিশুদেরকে মসজিদ থেকে দূরে রাখার কোনো কারণ নেই, বরং নামাজের মধ্যেও তাদের সুবিধার বিষয়টি মাথায় রাখা হতো। এমনকি শিশুর মায়ের কষ্টের বিষয়টিও খেয়াল করতেন বিশ্বনবী (স.)। এ বিষয়ে আল্লাহর নবী (স.) বলেছেন—আমি নামাজে দাঁড়ানোর পর তা দীর্ঘায়িত করার ইচ্ছা করি। কিন্তু কোনো শিশুর কান্না শোনার পর নামাজ সংক্ষিপ্ত করে ফেলি—এই ভয়ে যে, শিশুটির মা হয়তো কষ্ট পাচ্ছে। (বুখারি: ১/১৪৩)তবে, যে শিশুর মধ্যে এখনও প্রস্রাব-পায়খানার ব্যাপারে বোধ তৈরি হয়নি, তাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। রাসুল (স.) এমন শিশুদের মসজিদে আনতে নিষেধ করেছেন। ওয়াসিলা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) ইরশাদ করেন—‘তোমরা মসজিদ অবুঝ শিশু ও পাগলদের থেকে দূরে রাখো।’ (ইবনে মাজাহ: ৭৫০)
নামাজে কোন সারিতে শিশুরা দাঁড়াবে?
এ ব্যাপারে অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত যে, নাবালেগ শিশুদেরকে বড়দের কাতারে দাঁড় করালে পেছনের মুসল্লির নামাজে ত্রুটি হয়। বরং, যদি (নাবালেগ) শিশু একজন হয়, তাহলে তাকে বড়দের কাতারেই একসঙ্গে দাঁড় করানো সুন্নত। আর শিশু একাধিক হলে, প্রাপ্তবয়স্কদের পেছনে আলাদা কাতারে দাঁড় করাতে হবে। তবে, আলাদা কাতারে দাঁড় করাতে গেলে হারিয়ে যাওয়া বা দুষ্টুমি করার আশঙ্কা থাকলে, বড়দের কাতারে দাঁড় করানো যাবে। (আলবাহরুর রায়েক: ১/৬১৮, আদ্দুররুল মুখতার: ১/৫৭১)
মসজিদে শিশুদের সঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আচরণের বাস্তব নমুনা ছিল এমনই। তাই প্রত্যেক নবী-প্রেমিকের উচিত মমতাময়ী নবী-আদর্শ অনুসরণ করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক বিষয়ে সুন্নাহ অনুযায়ী সমাজ গঠনের তাওফিক দিন। আমিন।