তাকওয়ার শাব্দিক অর্থ ভয় করা, বেঁচে থাকা, আত্মরক্ষা ইত্যাদি। যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালনে সদা সতর্ক, যাদের অন্তরে আল্লাহভীতি কাজ করে তারাই মুত্তাকি বা তাকওয়াবান।আলেমদের মতে, লোক লজ্জায় গুনাহ থেকে বিরত থাকলে, সেটি তাকওয়া নয়। বরং তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় হলো একাকী নির্জনেও গুনাহের কাজ না করা। তাকে শুধু আখেরাতে নয়, দুনিয়াতেও পুরস্কার দিয়ে থাকেন আল্লাহ তাআলা।
দুনিয়াতে তাকওয়ার পুরস্কার:
১. বিপদাপদ থেকে বের হওয়ার রাস্তা আল্লাহ খুলে দেন এবং অকল্পনীয় রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে (বিপদাপদ থেকে) নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন”। (সুরা তালাক: ২-৩)
২. কাজ-কর্মসহ যাবতীয় বিষয়াদি আল্লাহ সহজ করে দেবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, “যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন”। (সুরা তালাক: ৪)
৩. বরকতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেন, “আর যদি সেই জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেজগারি অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও পার্থিব নেয়ামতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের কারণে”। (সুরা আরাফ: ৯৬)
৪. হক-বাতিলের মাঝে পার্থক্যকারী আকল দান করা হয়। “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করতে থাক, তবে তোমাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন এবং তোমাদের থেকে তোমাদের পাপকে সরিয়ে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ অত্যন্ত মহান”। (সুরা আনফাল ৮:২৯)
৫. আল্লাহ তার সঙ্গী হয়ে যাবেন। এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন, যারা পরহেজগার এবং যারা সৎকর্ম করে”। (সুরা নাহল: ১২৮)
৬. আল্লাহ তাকে দ্বীনি শিক্ষা দান করবেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, “আল্লাহকে ভয় কর তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আল্লাহ সব কিছু জানেন”। (সুরা বাকারা: ২৮২)
৭. যারা আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তাদেরকে কাফেরদের ক্ষতি ও ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করবেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহর ঘোষণা, “যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনো ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে, সবকিছুই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে”।
(সুরা ইমরান: ১২০)তাকওয়ার পরকালীন ফায়দা অশেষ। যে আল্লাহকে ভয় করে, ‘আল্লাহ তার পাপ মোচন করেন এবং তাকে মহাপুরষ্কার দেন’ (সুরা তালাক: ৫)। আল্লাহ তাআলার ঘোষণা- “পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশি থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত” (সুরা নাজিয়াত: ৪০-৪১)। সুরা রহমানে এসেছে, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে পেশ হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্যে রয়েছে দুটি উদ্যান” অর্থাৎ আল্লাহ তাকে দুটি জান্নাত দিবেন। (সুরা আর-রহমান: ৪৬)মূলত: আল্লাহকে ভয় করার মধ্যেই চূড়ান্ত সফলতা নীহিত। তাদেরকে এমন নেয়ামতরাজির মধ্যে রাখা হবে, যে নেয়ামতের শেষ হবে না। ‘উদ্যান, আঙ্গুর, সমবয়স্কা, পূর্ণযৌবনা তরুণী এবং পূর্ণ পানপাত্র” (সুরা নাবা: ৩১-৩৪)। “পরহেজগারদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে, তার অবস্থা নিম্নরূপ—তাতে আছে পানির নহর, নির্মল দুধের নহর, যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু শরাবের নহর এবং পরিশোধিত মধুর নহর। তথায় তাদের জন্যে আছে রকমারি ফল-মূল ও তাদের পালনকর্তার ক্ষমা। পরহেজগাররা কি তাদের সমান, যারা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে এবং যাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি, অতঃপর তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দেবে?” (সুরা মুহাম্মদ: ১৫)সুতরাং যেভাবে আল্লাহকে ভয় করা উচিত, আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেভাবে ভয় করার এবং ইখলাসের সঙ্গে যথাযথ আমল করার তাওফিক দিন। আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।