রংপুর প্রতিনিধিঃ
রংপুরের তারাগঞ্জ ও/এ সরকারি কলেজের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত বর্তমান অধ্যক্ষের অনুমতি ছাড়াই সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল বারি মন্ডল তার আমলের (বিগত কয়েক অর্থ বছরের) আয় ব্যয়ের বিল ভাউচারসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র দিনদুপুরে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (১২ জুন) ২০২৫ইং সকাল আনুমানিক ১১ টায় উক্ত প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারি কাম-কম্পিউটার অপারেটর মোঃ মেনহাজুলের উপস্থিতিতে ও সহযোগিতায় এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানা যায়।
এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠনের অফিস সহকারি মেনহাজুল বলেন, আমি গত ১২ জুন সকাল আনুমানিক ১০ টায় ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের এইচএসি পরীক্ষার্থীদের এ্যাডমিট কার্ড রেজিস্টিারভুক্ত করার জন্য অফিসে গিয়েছিলাম। অফিসে দাপ্তরিক কাজ করার সময় আনুমানিক ১১ টায় সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল বারি মন্ডল স্যার অফিসে আসেন। অফিস কক্ষে আগে থেকেই তার রক্ষিত সিলগালা করা একটি আলমিরা থেকে বেশকিছু দাপ্তরিক নথিপত্র নিয়ে যান।
কিন্তু অফিস সহকারি ঘটনার দিন (১২ জুন) থেকে (১৭ জুন) পর্যন্ত বর্তমান দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস ছবুরকে এ বিষয়ে অবগত না করা এবং অধ্যক্ষ দেরীতে জেনেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জনমনে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন সময়ে বর্তমান অধ্যক্ষের অনুমতি না নিয়ে, গত ২০২৩ সালে অবসরে যাওয়া সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল বারি মন্ডলের এভাবে অফিস নথিপত্র নিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে যোগসাজশ বলে দাবি করছেন অনেকে। সাবেক এই অধ্যক্ষ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারে আমলে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলেও দাবি করেন।
তার দুর্নীতির প্রমাণ লোপাট করতেই তিনি চুরির ঘটনা ঘটিয়েছেন। এদিকে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অফিস থেকে দিনে দুপুরে আলমিরা খুলে নথি চুরি হওয়ার ঘটনায় সমাজের সচেতন মহল চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। কী ভাবে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অফিস থেকে নথিপত্র এভাবে চুরি যেতে পারে? তাহলে সাধারণ মানুষের “জীবন ও সম্পত্তির” নিরাপত্তা কোথায়? একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কত ধরনের প্রয়োজনীয় নথিপত্রই না থাকে! এ ঘটনায় সচেতন মহলের দাবি অতিদ্রুত কলেজের সার্বিক বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
প্রসঙ্গত- বর্তমান অধ্যক্ষকে না জানিয়ে অফিসের নথিপত্র নিয়ে যাওয়ার কথা সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুল বারি মন্ডল মোবাইল ফোনে স্বীকার করেছেন। তবে তিনি অডিটের কাজে প্রয়োজনীয়তার স্বার্থে তিনি তার নিজের সীল গালা করে রেখে যাওয়া আলমিরাতে কলেজে তার সময়ের পরীক্ষা খাত সহ বিভিন্ন আর্থিক খাতের প্রয়োজনীয় হিসেবের বিল ভাউচারের কাগজগুলো নিয়ে যান। প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অধ্যক্ষ মোঃ আব্দুস ছবুর মুঠোফোনে বলেন, কলেজ ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে বন্ধ ছিল। চলতি মাসের গত ১২ জুন সাবেক অধ্যক্ষ কর্তৃক অফিসের নথিপত্র নিয়ে যাওয়ার ঘটনা আমি ১৭ জুন জেনেছি। আমাকে বলা হয়নি, আমি অফিস আলোচনায় শুনেছি।
পরে বিষয়টি গুরুত্ব দেই এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করি এবং অফিস সহকারীকে এ ঘটনায় কারণদর্শাই। এ সময় তিনি কৌশলগত এই চুরির ঘটনায় অফিসকারীকে সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত বলে দাবি করেন। প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনায় থানায় কোন অভিযোগ না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি থানায় গিয়েছিলাম আমার অভিযোগ নেয়নি। এ ঘটনায় তারাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এমএ ফারুক বলেন, চুরির বিষয়টি জেনেছি।
তবে এ ঘটনায় কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় উজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রুবেল রানা বলেন, কলেজের ঘটনাটি শুনেছি। এ বিষয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষকে, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানানোর জন্য বলেছি। এখনো লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি। আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করবো।