তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: রাস্তার মাঝখানে পাকা দেয়াল তুলেছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। দুর্ভোগে পড়েছে দেয়ালের বিপরীত পাশের কয়েকটি পরিবার। গত রোববার মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার গাজীপুরে রাস্তার মাঝখানে পাকা দেয়াল তুলেছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। দুর্ভোগে পড়েছে দেয়ালের বিপরীতে থাকা কয়েকটি পরিবার। গত রোববার মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রাস্তার মাঝখানে এক ব্যক্তি পাকা দেয়াল তুলে ফেলেছেন। এতে রাস্তার বিপরীত পাশের ১৫ পরিবারের লোকজন কয়েক মাস ধরে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঘটনাটি উপজেলার সদর ইউনিয়নের গাজীপুর এলাকার। এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদর ইউনিয়নের কুলাউড়া-গাজীপুর পাকা সড়ক থেকে পশ্চিমমুখী গাজীপুর গ্রামে প্রবেশে প্রায় ৫০০ মিটার দীর্ঘ একটি কাঁচা রাস্তা রয়েছে। ওই রাস্তা দিয়ে ৪০-৫০ বছর ধরে এলাকার লোকজন চলাচল করছিলেন। রাস্তার সামনের একাংশের মালিক স্থানীয় বাসিন্দা রিফাত চৌধুরী। পেছনের অংশের মালিক হেলাল আহমদ। এদিকে হেলালের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে কিছু লোক জমি কিনে সেখানে বাড়িঘর নির্মাণ করেন। আট-নয় মাস আগে রিফাত চৌধুরী তাঁর জায়গার সীমানায় রাস্তার মাঝবরাবর পাকা দেয়াল স্থাপন করে ফেলেন। দেয়ালের বিপরীত পাশে হেলালের কাছ থেকে কেনা জমিতে ১৫টি পরিবার বসবাস করে আসছে। এসব পরিবারের বেশির ভাগ লোক খেটে খাওয়া দিনমজুর। দেয়াল স্থাপন করায় তাঁরা চলাচলে দুর্ভোগে পড়ে যান। ভুক্তভোগী লোকজন এ সমস্যার প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের শরণাপন্ন হন। পরে চেয়ারম্যান উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে একটি সমঝোতার উদ্যোগ নেন। কিন্তু এখনো বিষয়টির সুরাহা হয়নি। ভুক্তভোগী লোকজন লিখিতভাবে বিষয়টি জানালে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার, ইউএনও সরেজমিনে গত রোববার সকালের দিকে দেখা যায়, দেয়ালের বিপরীত পাশের বাড়িঘরের লোকজন নিচু জমির কাদাজল মাড়িয়ে বিভিন্ন বাড়ির উঠান দিয়ে ঘুরে পাকা সড়কে যাচ্ছেন। দেয়ালের এক প্রান্তে ছোট ফাঁক রয়েছে। স্কুল ও মাদ্রাসাগামী কিছু খুদে শিক্ষার্থী ফাঁকা জায়গা দিয়ে কোনোমতে শরীর ঢুকিয়ে দেয়াল অতিক্রমের চেষ্টা চালাচ্ছে। ভুক্তভোগী গৃহবধূ তাছলিমা বেগম বাড়ির সামনের রাস্তা দেখিয়ে বললেন, ‘একসময় তো এইটা দিয়াই সবাই চলাচল করছি। ওয়াল দেওয়ায় বন্ধ হই গেল। অখন অন্য মানুষের বাড়ির ভেতর দিয়া চলি। বাচ্চারার স্কুল-মাদ্রাসায় যাইতে কষ্ট হয়। অসুস্থ মানুষকে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে নিতে কষ্টের সীমা থাকে না।’ রাস্তার শেষ প্রান্তে ৩০-৪০ বছর আগে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন আব্দুল মনাফ। তিনি বলেন, ‘রাস্তা মালিকানাধীন হইতে পারে। এক মালিকের সঙ্গে আরেকজনের কোনো বিষয়ে দ্বন্দ্ব থাকতে পারে। কিন্তু এইটার জেরে রাস্তা বন্ধ করে মানুষরে বিপদের মাঝে ফেলা ঠিক হইছে না।’ হেলাল আহমদ বলেন, রাস্তার শেষ প্রান্তে তাঁদেরসহ অনেকেরই জমি রয়েছে। এর মধ্যে তাঁরা কিছু জমি বিক্রি করেছেন। সেখানে লোকজন বাড়ি করে ফেলেছেন। রাস্তার সামনের একাংশের মালিক রিফাত মানুষকে কষ্টে ফেলতে দেয়াল তুলে অমানবিক আচরণ করেছেন। রিফাতের সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই দাবি করে হেলাল আহমদ বলেন, দেয়াল ভেঙে না দিলে তিনি নিজের জমির ওপর দিয়ে ১৫ পরিবারের চলাচলের বিকল্প রাস্তা করে দেবেন। রিফাত চৌধুরী বলেন, হেলালের জমিতে থাকা লোকজন তাঁদের মালিকানাধীন রাস্তা ব্যবহার করছিলেন। জমি বিক্রির সময় রাস্তা ব্যবহারের বিষয়ে হেলাল তাঁর সঙ্গে কোনো আলোচনা করেননি। তাই বাধ্য হয়ে সীমানায় দেয়াল তুলেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত মানুষের চলাচলের রাস্তায় এ রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করা যায় কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় দেয়াল তুলেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান মোছাদ্দিক আহমদ মুঠোফোনে বলেন, রাস্তায় দেয়াল নির্মাণের পর তিনি দুই পক্ষসহ স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে বৈঠক করেছিলেন। রিফাতের রাস্তা ব্যবহারে তাঁকে আট লাখ টাকা দিতে হেলালকে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি (হেলাল) কোনো সাড়া না দেওয়ায় বিষয়টির এখনো সমাধান হয়নি। হেলাল টাকা দিলে রিফাত দেয়াল সরিয়ে ফেলবেন। ইউএনও মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, ভুক্তভোগী লোকজন লিখিতভাবে বিষয়টি জানালে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনি যা যা মিস করেছেন
Add A Comment