নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাঁচ বছর আগেও তিনি ছিলেন পাথর শ্রমিক। আর বাবা মোশাহিদ আলী ছিলেন একজন দিনমজুর। তবে দিন পাল্টে গেছে। বারকী শ্রমিক শামসুদ্দিন ওরফে সাম কালা এখন সিলেটের শীর্ষ চোরাকারবারি। প্রতিদিন হাতে আসছে কাড়ি কাড়ি টাকা। সেই টাকায় এখন গোয়াইনঘাটের শীর্ষ ধনাঢ্যদের একজন তিনি। বলছি শীর্ষ চোরাচালানী শামসুদ্দিন ওরফে সাম কালার কথা।
তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের হাতির খাল গ্রামের দিনমজুর মোশাহিদ আলীর ছেলে।পাঁচ ভাই দুই বোনের মধ্যে কালা দ্বিতীয়।
জন্মসূত্রে দারিদ্রতার করাঘাতে বেড়ে উঠা সাম কালা এখন কলকাঠি নাড়েন সর্বত্র।পশ্চিম জাফলং একটি সীমান্তবর্তী এলাকা। যেখানে বারকী শ্রমিক হিসেবে কাজ করার সুবাধে কালা মিয়ার সখ্যতা গড়ে উঠে ছিচকে চোরাকারবারিদের সাথে। এই সখ্যতাই জীবনে পাল্টে দেয় সাম কালা। ঘুরতে থাকে ভাগ্যের চাকা।
প্রথমে নিজে উপস্থিত থেকে চোরাচালানকৃত মালামাল চোরাকারবারিদের কথামতো অন্য জায়গায় পৌঁছে দিতেন কালা। এখন শুধু কালা মিয়াই নয়। সহযোগী করেছেন নিজের স্ত্রীকে। বৌকে দিয়ে প্রশাসনের এক কর্তাব্যক্তিকে ভাই বানিয়ে কাজ চালাচ্ছেন সাম কালা।
আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি তাকে। নিজেকে আড়ালে রেখে তার সহযোগী আলামিন, লনি মসাহিদকে দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে রামরাজত্ব।
গত সোমবার (৮ জুলাই) রাতে গোয়াইনঘাট থানার রাধানগর জলুরমুখ এলাকায় গোয়াইন নদীতে ভারতীয় চোরাই পণ্যসহ একটি নৌকা আটক করে জেলা ডিবি পুলিশ। এসময় নৌকায় থাকা মাঝিসহ চোরা কারবারীরা পালিয়ে যায়।
আটক করা নৌকায় কসমেটিক্স (কিট) ও ফুচকা সামগ্রী সহ ৭০০ বস্তা চিনি ছিল। জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) উত্তর জোনের এসআই নোটন ও এসআই ইয়াকুব সহ সঙ্গীয় ফোর্স এ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযোগে প্রকাশ, আটকের পর ডিবির জাফলং পয়েন্টের লাইনম্যান শ্যাম কালা তৎপর হয়ে ওঠে। তার মধ্যস্ততায় তাৎক্ষণিক ১২০ বস্তা চিনি বিক্রি করে দেওয়া হয়। পরে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে লাইনম্যান শ্যামকালা নিজে ডিবি অফিসে এসে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে কসমেটিকস (কীট) ও ফুচকা সহ ৫৩৩ বস্তা চিনি ছাড়িয়ে নেয়। পরে ৭০০ বস্তার পরিবর্তে মাত্র ৪৭ বস্তা চিনি দিয়ে মামলা রুজু হয়েছে বলে গোয়াইনঘাট থানাসূত্রে জানা গেছে।
ডিবি’র লাইনম্যান শ্যাম কালা প্রায়ই ডিবির অভিযানকালে চোরা কারবারীদের পক্ষে টাকার বিনিময়ে জব্দ করা ভারতীয় চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য ছাড়িয়ে নেয়। এমন অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
কালা যে ঘরে আগে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো সেই ঘরে এখন আলীশান অবস্থা। বিগত তিন বছরে কালা মিয়া ওরফে সাম কালা’র আঙ্গুল ফুলে রাতারাতি কলাগাছ হয়ে গেছে। দুই বছরের মধ্যে কয়েক কোটি টাকার মালিক এখন শামসুদ্দিন ওরফে সাম কালা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের সূত্রে জানা যায় চোরাকারবারিদের মালামাল পরিবহনের পর কালা নিজেই ডিবি পুলিশের লাইনম্যান হয়ে গড়ে তোলে তার এক বিশাল চোরাকারবারি সিন্ডিকেট ও নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চোরাকারবারি হাতির পার গ্রামের জুবেরের মাধ্যমে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে তার চোরাচালান বাণিজ্য। এহেন কোন ভারতীয় পণ্য নেই যা অবৈধভাবে পাচার করে না কালা সিন্ডিকেটের সদস্য জুবের।
ভারতীয় শাড়ি, কসমেটিক্স, মোটরসাইকেল, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, মদ, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ ভারতীয় সবকিছুই পাঁচারের সাথে জড়িত শামসুদ্দিন ওরফে সাম কালা সিন্ডিকেট।
এলাকাবাসীর অভিযোগ এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গেও জড়িত কালা সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্য। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলংএর সোনারহাঁট সীমান্তকে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে কালা সিন্ডিকেট। এ ধরনের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ।
আদতে জামায়েত বিএনপি’র রাজনীতির সাথে জড়িত হলেও কালা বর্তমানে স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে তার ক্ষমতা দেখাচ্ছে ও চোরাচালান বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে কালা বাহিনীর কথাতেই চলে সবকিছু।তার এহেন অবৈধ কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলেই এলাকার লোকজনের উপর অত্যাচার শুরু করে কালা’র লাঠিয়াল বাহিনী। তার শশুর ছিলো সেচ্ছাসেবকদলের ইউনিয়ন সভপতি কাউয়া মালেক বলে সর্বমহলে পরিচিত।
এলাকার অনেকেই অভিযোগ করে বলেন যে বা যারাই কালা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তাদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে এই চক্র।কখনো ডিবি পুলিশ দিয়ে, নতুবা মিথ্যা মামলা দিয়ে, নতুবা তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে।
সবচাইতে অবাক করা বিষয় হচ্ছে গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের সোনারহাট সীমান্তের কুখ্যাত চোরাকারবারি শামসুদ্দিন ওরফে সাম কালা ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায় স্থানীয় প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সহ একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কালা খুব অন্তরঙ্গ ছবি তার ফেসবুক প্রোফাইলের টাইমলাইনে ঝুলছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন হচ্ছে একজন চিহ্নিত চোরাকারবারির সাথে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ছবি কিসের ইঙ্গিত বহন করে?
এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে শামসুদ্দিন ওরফে সাম কালার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন–ভাই এসব লিখে কি করবেন? আমি সিলেটে আপনাদের অফিসে এসে এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলব।আপনারা দয়াকরে কোন সংবাদ ছাপাবেন না।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version