মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলে সরকার ঘোষিত দেশের একমাত্র মৎস্য অভয়ারণ্য বাইক্কাবিল ও জল ও বনভূমির পরিবেশ সুরক্ষায় উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া এ সংলাপ আজ রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে শেষ হয়। সংলাপটি সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের একটি অভিজাত কনফারেন্স হলে দুইদিনব্যাপী সংলাপ মোট ৩টি সেশনে অনুষ্ঠিত হয়। ‘বাইক্কা বিল স্হায়ী জলাভূমি অভয়ারণ্যের সমতা ও সহ-ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নীতি নির্ধারণী’ শীর্ষক এ সংলাপ আয়োজন করে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়ক সংস্হা USID, Chemonic ও Protibesh।
এতে সভাপতিত্ব করেন ক্যাপিটাল মার্কেটিং স্টেবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) এর চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান। আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেটচ্যাঞ্জ এন্ড ডেভোলাপম্যান্ট (আইসিসিসিএডি) এর পরিচালক প্রফেসর সেলিমুল হক এর সঞ্চানায় অনুষ্ঠিত পলিসি ডায়লগের সমাপনি সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন,শ্রীমঙ্গল এলাকার স্হানীয় সংসদ সদস্য ও সবেক চীফ হুইপ ড,উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহিদ ও পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্হায়ী কমিটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দুত সবের হোসেন এমপি।
নীতি নির্ধারনী সংলাপে দ্বীতিয় সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বন,পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ডক্টর ফারহিনা আহমেদ। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি পরিবেশ ও প্রতিবেশ নিয়ে আয়োজিত উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিদের সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।
আলোচনায় দেশ ও বিদেশের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ,সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের প্রতিনিধি,বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক সচিব,যুগ্ম সচিব,সংশ্লিষ্ট সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন দফতরের পদস্হ কর্মকর্তা,জনপ্রতিনিধিগন এতে অংশনেন।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা সরকার ২০০৩ সালে সরকার ঘোষিত দেশের একমাত্র মৎস্য অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বাইক্কা বিলে দেশী প্রজাতির মাছ ও মাছের প্রজনন ও জৈব বৈচিত্র রক্ষা, একইসাথে দেশ ও বিদেশে থেকে আগত পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে এর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে করণীয় নানা বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন। তারা বলেন,দেশ ও বিদেশে ব্যাপক পরিচিত নৈসর্গিক সুন্দরএ বাইক্কা বিলটি ব্যাবস্হাপনায় সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতা ও উদাসীনতাকে দায়ি করে এর সুষ্ঠু ব্যাবস্হাপনায় অনতিবিলম্বে জাতীয় এ সম্পদ সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের উপর গুরুত্বআরোপ করা হয়। এছাড়াও সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী হাকালুকি হাওর,টাঙ্গুয়ার হাওর সহ দেশের অন্যান্য হাওরে পরিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকার জৈব বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা করতে সুষ্ঠু ব্যাবস্হাপনার মাধ্যমে পুর্বের ঐতিহ্যে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
আলোচনায় উপাধ্যক্ষ ড, আব্দুস শহিদ এমপি বলেন,যুগের পরিবর্তনে দেশে একে একে হওর বিল বিলীন হয়ে যচ্ছে। বাইক্কা বিল আমার নির্বাচনী এলাকার ভেতরে এর অবস্হান। তিনি বলেন,এটি জাতীয় সম্পদ,মৎস্য ও পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যাক্ত করে তিনি এর সুষ্ঠু ব্যাবস্হাপনায় সরকার সহ সকল মহলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
আলোচনায় সাবের হোসেন চৌুরী এমপি পরিবেশ ও জলাবায়ুর বিষয়ে নানাদিক তুলে ধরে বলেন,বাইক্কাবিল দেশের একমাত্র স্হায়ী মৎস্য অভয়ারণ্য হিসেবে দৃষ্টান্ত হওয়ার কথা থাকলেও সেটা এখন ঝুকির মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রুপগল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ অর্জনে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষা করা খুবই জরুরী বিষয়। কোনভাবে পরিবেশের কোন ক্ষতি সাধন করা যাবেনা বলে উল্লেখ করে সাবের হোসেন বলেন,সারা বিশ্বের বৈশ্বিক পরিবর্তনের জরুরী এ প্রেক্ষাপটে সবাই মিলে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও এর সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিতে তিনি সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
সমাপনি অনুষ্টানে আরও বক্তব্য রাখেন,অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সিনিয়র সচিব মোঃ মফিজুল ইসলাম,সাবেক সচিব সুলতানা আফরোজ, বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের সভাপতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো,ফজলুর রহমান,ভুমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দেলওয়ার হোসেন,পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যাবস্হাপনা বিভাগের পরিচালক সৈয়দা মাছুমা খানম (যুগ্ম সচিব), আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্হা USAiD এর বাংলাদেশের টিম লিডার Bronwyn LIewellyn, প্রতিবেশ (protibesh) এর চীফ অব পার্টী Dr.Felix Gaschick প্রমুখ। সমাপনি অন অনুষ্টানের শুরুতে বাইক্কা বিলের উপর একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সংলাপে আগত অতিথি ও অংশগ্রহণকারীরা সরজমিনে বাইক্কাবিল পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য যে,সিলেট মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাইক্কাবিল ও সংলগ্ন হাইল হাওরের হারানো পরিবেশ ফেরাতে ২০০৩ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় প্রায় ২৫০ একরের বাইক্কা বিলকে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। তখন থেকে বিলে মাছ ধরা ও জলজ উদ্ভিদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। একপর্যায়ে বিলের পরিবেশ ফিরে এলে বাইক্কা বিল পাখিরও অভয়াশ্রম হয়ে ওঠে। আসতে থাকে পরিযায়ী পাখিরা। পাখির এই আনন্দমেলা দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকেরা এ বিলে ছুটে আসেন।