অবশেষে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যে লেনদেন শুরু হলো রুপিতে। পরবর্তীতে এ সুবিধা মিলবে টাকাতেও। এতে একদিকে যেমন চাপ কমবে মার্কিন ডলার নির্ভর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর, তেমনি বাড়বে প্রতিবেশি দেশ দুটির আমদানি-রফতানি, যা কমাবে বিদ্যমান বড় অংকের বাণিজ্য ঘাটতিও।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) সকালে রাজধানী ঢাকার একটি হোটেলে রুপিতে লেনদেনের এ যাত্রা উদ্বোধন করা হয় এর মধ্যে দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যে লেনদেন শুরু হলো রুপিতে।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দুই দেশের অর্থনৈতিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই ভারতের সবচেয়ে বড় রফতানি গন্তব্য। নতুন এ উদ্যোগে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে, তেমনি বাড়বে আমদানি-রফতানি।
হিসাব বলছে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারত থেকে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ, যা চীনের পরেই সর্বোচ্চ (মোট আমদানি ব্যয়ের ১৮.১০ শতাংশ)। এর বিপরীতে দেশটিতে রফতানি করা হয়েছে মাত্র ১৯৯ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য। বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এবার সুযোগ এসেছে দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান বিশাল এ অংকের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ও বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) ব্যাংক এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেডিট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব ইন্ডিয়া (আইসিআইসিআই) ব্যাংক রুপিতে বাণিজ্য লেনদেনের নিষ্পত্তিতে অংশ নিচ্ছে।
বিশ্ব বাণিজ্যে একক শক্তিশালী মুদ্রা মার্কিন ডলার। করোনাকালীন ও করোনা পরবর্তী সময়েও লেনদেনে মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা ভোগাচ্ছে বিভিন্ন দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে। ডলার সংকটে কোনো কোনো দেশ বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে নিজস্ব মুদ্রার ব্যবহার করে লেনদেন শুরু করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশও উদ্যোগ নেয় ভারতের সঙ্গে টাকা-রুপি বিনিময়ের।
প্রাথমিকভাবে একপক্ষীয়ভাবে রুপির মাধ্যমে আমদানি-রফতানি শুরু হবে। পরবর্তীতে এ সুবিধা মিলবে টাকাতেও। এতে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেছেন, ‘আমরা ব্যাংকগুলোকে টাকা-রুপিতে লেনদেনের অনুমতি দিয়েছি। আমরা সেটিই উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। উভয় দেশের মধ্যে একটি বড় পরিমাণে বাণিজ্য হয়। কাজেই সেই বাণিজ্যিক কার্যক্রমের সুবিধাটি আমরা পারস্পরিক মুদ্রায় নিতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এলসি (ঋণপত্র) হবে ভারতীয় রুপিতে, যে রুপি আমাদের ভারতীয় ‘নস্ট্রো আকাউন্টে’ থাকবে, সেই রুপির মাধ্যমে আমদানি ব্যয় পরিশোধ হবে।’