শুধু শাড়ি পরিয়ে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন কলকাতার এক গৃহবধূ। নাম ডলি জৈন। যে ১২ হাত কাপড় সকাল-বিকেল অঙ্গে জড়ান এ দেশের মেয়েরা, ডলি সেই শাড়িই পরাতে কম করে ৩৫ হাজার টাকা নেন। স্টাইল যত বাড়ে, বাড়তে থাকে পরিষেবার মূল্যও। শাড়ি পরানোর বিনিময়ে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত নেন ডলি।
ডলির আঙুলের ছোঁয়ায় নাকি সাধারণ শাড়িও ভোল পাল্টে ফেলে! এমনই বিশ্বাস ফ্যাশন দুনিয়ায়। বলিউড তারকারা তাই ইদানীং নামী ব্র্যান্ডের ‘কুতুর’ গাউন ছেড়ে শাড়ি হাতে শরণাপন্ন হন ডলির।
কয়েক দিন আগে প্যারিসের কান চলচ্চিত্রোৎসবে শাড়ি পরে হাজির হয়েছিলেন বলিউডের নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রী সারা আলি খান। ভারতীয় ডিজাইনার আবু জানি এবং সন্দীপ খোসলার হাতে তৈরি সরু পাড় সাদা শাড়িটি তাঁকে কানের রেড কার্পেটের জন্য পরিয়ে দিয়েছিলেন এই ডলিই। এর আগেও কানে দীপিকা পাড়ুকোনকে রেড কার্পেটের জন্য শাড়ি পরিয়েছিলেন ডলি।
তবে গত কয়েক বছরে তারকারা তাদের বিয়ে বা বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্যও বার বার ডেকেছেন ডলিকে। কিছু দিন আগেই কিয়ারা আডবাণী এবং সিদ্ধার্থ মলহোত্রের বিয়েতে যেতে হয়েছিল তাকে। নায়িকাকে শাড়ি এবং লেহঙ্গায় পরানোর দায়িত্ব বর্তেছিল কলকাতার এই বৌমার উপরে। এমনকি, বলিউডের নায়ক সিদ্ধার্থকে উড়নিও পরিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই।
বিয়ের শাড়ি বা লেহঙ্গা যে পোশাকশিল্পীই বানিয়ে থাকুন, সেটি সুন্দর করে পরিয়ে দেওয়ার জন্য ডলির উপরেই ভরসা করেন বলিউডের নায়িকারা। প্রিয়ঙ্কা চোপড়াকে বিয়ের সাজে সাজিয়েছিলেন ডলি। দীপিকা পাড়ুকোনের বিয়ের শাড়িও ডলির পরানো। এমনকি, আলিয়া ভট্ট, ক্যাটরিনা কাইফ, নয়নতারাকেও তাঁদের বিয়ের দিনে শাড়ি পরিয়েছিলেন ডলিই।
তবে ডলির জনপ্রিয়তা শুধু বলিউডের গণ্ডিতে আটকে নেই। ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ অম্বানীর কন্যা ইশা অম্বানীকে বিয়ের শাড়ি পরিয়েছেন ডলি, শাড়ি পরিয়েছিলেন মুকেশের পুত্রবধূ শ্লোক মেহতা এবং হবু পুত্রবধূ রাধিকা মার্চেন্টের বাগদানের অনুষ্ঠানেও। আবার ভারতীয় ক্রিকেটার হার্দিক পাণ্ড্যর বিয়েতে তাঁর স্ত্রী নাতাশাকেও শাড়ি পরানোর জন্য ডাক পড়েছিল ডলির।
ফ্যাশন দুনিয়ায় মেট গালার বেশ নামডাক রয়েছে। গত বছর সেই মেট গালায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সেরাম ইনস্টিটিউটের কর্ণধার ভারতীয় শিল্পপতি আদর পুণাওয়ালার স্ত্রী নাতাশা পুণাওয়ালাকে। নাতাশা বরাবরই ফ্যাশন সচেতন। মেট গালার জন্য বেছে নিয়েছিলেন বাঙালি পোশাকশিল্পী সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের শাড়ি। আর সেই শাড়ি নাতাশাকে পরিয়েছিলেন কলকাতার ডলি।
ডলির অনুরাগীদের দাবি, শাড়ি পরানোর জন্য হয়তো একটু বেশিই দাম নেন ডলি। কিন্তু তাঁর আঙুল, কয়েকটি সেফটিপিন, আর সুচসুতোর কেরামতি ম্যাজিক দেখাতে পারে। বলিউড অভিনেত্রী রবিনা টন্ডন নাকি এক বার ডলিকে বলেছিলেন, ‘তোমার হাতে সেফটিপিনের যাত্রা নিয়ে একটা বই লিখে ফেলো তুমি।’ ডলির শাড়ি পরানোর প্রশংসা করে দীপিকাও বলেছিলেন, ‘তোমার হাতে পড়লে অবাধ্য শাড়িও বাধ্য হয়।’
কলকাতার গৃহবধূ ডলি অবশ্য নিজের পরিচয় দেন ‘ড্রেপিং আর্টিস্ট’ হিসাবে। ডলির দাবি, তিনি ১২ হাতের একটি কাপড়কে ৩৬০ রকম স্টাইলে পরাতে পারেন। তবে তার এই দক্ষতার কৃতিত্ব যত না তার নিজের, তার চেয়ে অনেক বেশি তার শ্বশুরবাড়ির।
জন্ম রাঁচীতে। বেড়ে ওঠা বেঙ্গালুরুতে। যদিও ডলির পরিবার রাজস্থানের বাসিন্দা। এ হেন ডলি একজন সাধারণ গৃহবধূ হয়েই থেকে যেতে পারতেন। কিন্তু ২০০৬ সালে কলকাতার এমন একটি পরিবারে বিয়ে হল ডলির, যেখানে শাড়ি ছাড়া অন্য কিছুই পরার অনুমতি নেই।
ডলি জানিয়েছেন, কলকাতায় এসে শাড়ি ছাড়া অন্য কিছুই পরতে পারতেন না তিনি। সেই শাড়িও পরতে রোজ ৪৫ মিনিট সময় লাগত তার। কিছুটা নিজের প্রয়োজনেই ডলির শাড়ি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু। সময় বাঁচাতে নানা রকম ভাবে শাড়ি পরতেন ডলি। তার সেই শাড়ি পরার স্টাইলের প্রশংসাও হতে শুরু করে। ডলি জানিয়েছেন, শাড়ি নিয়ে এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা ক্রমেই ভাল লাগার জায়গায় পৌঁছায় তার।
একটি সাক্ষাৎকারে ডলি বলেছেন, ছোট থেকেই পুতুলকে নানা রকম ভাবে শাড়ি পরাতেন তিনি। সেই পুরনো নেশা হঠাৎ পেয়ে বসে তাঁকে। একটি ম্যানিকুইন কিনে তাকে নানা ভাবে শাড়ি পরানো অভ্যাস করতেন ডলি। এমনও হয়েছে, মাঝরাতে নতুন কোনও শাড়ির স্টাইলের কথা মনে পড়েছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তা পরীক্ষা করেছেন তার ম্যানিকুইনের উপর।
নতুন ধরনের কোনও কায়দায় শাড়ি পরিয়ে তা পছন্দ হলে তার ছবি তুলে রাখতেন ডলি। নিজে পরেও দেখতেন। এ ভাবে সাড়ে তিনশোরও বেশি কায়দায় শাড়ি পরানোর কৌশল রপ্ত করেছেন ডলি।
এখন মণীশ মলহোত্র, আবু জানি-সন্দীপ খোসলা, সব্যসাচীর মতো পোশাকশিল্পীদের শাড়ি পরাতে বিভিন্ন ফোটোশুটে ডাক পড়ে তার। সম্প্রতিই মুকেশ-নীতা অম্বানীর কালচারালের সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হলিউড তারকা গিগি হাদিদকেও শা়ড়ি পরাতে ডাকা হয়েছিল তাঁকে।
প্রায় এক দশক ধরে এই কাজই করে আসছেন ডলি। সবচেয়ে দ্রুত শাড়ি পরার রেকর্ড রয়েছে তাঁর। সবচেয়ে দ্রুত ১২৫ রকমের কায়দায় শাড়ি পরানোর জন্য নাম উঠেছে লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে। ইতিমধ্যে বহু সম্মানও পেয়েছেন তিনি।