দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

হজ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা বা সংকল্প করা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ পালনার্থে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্ধারিত তারিখে, নির্দিষ্ট স্থান তথা কাবা শরিফ ও তৎসংশ্লিষ্ট স্থানগুলো জিয়ারত করার সংকল্প করাকে হজ বলা হয়। হজ ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। হজে রয়েছে নানাবিধ ফায়দা ও শিক্ষা। তন্মধ্যে অন্যতম শিক্ষা হলো মুসলমানদের ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের শিক্ষা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাবাগৃহে যাতায়াতের জন্য (দৈহিক ও আর্থিকভাবে) সক্ষম প্রত্যেক মু’মিনের ওপর হজ করা ফরজ।’ (সূরা আলে-ইমরান-৯৭) রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘অনিবার্য প্রয়োজন কিংবা অত্যাচারী শাসক অথবা কঠিন রোগ যদি (হজে সামর্থ্যবান) কোনো ব্যক্তিকে হজ পালনে বিরত না রাখে, তবে সে যদি হজ পালন না করে মারা যায়, সে যেন ইহুদি ও নাসারার মতোই মৃত্যুবরণ করে।’ (দারেমি) সুতরাং যে ব্যক্তি হজব্রত পালন করল, সে স্রষ্টার নির্দেশ পালন করে নিজেকে ধন্য ও জান্নাতি মানবে পরিণত করল।

পবিত্র স্থানগুলো অবলোকন : পবিত্র মক্কা ও মদিনায় রয়েছে অগণিত পবিত্র স্থান। যেমন আল্লাহ তায়ালার ঘর, হাজরে আসওয়াদ, সাফা-মারওয়া, আরাফার মাঠ, মিনা, মুজদালিফা, মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী, প্রিয় নবী সা:-এর রওজা মোবারক, জান্নাতুল বাকি, জান্নাতুল মুয়াল্লা, জমজম কূপ ইত্যাদি। এসব স্থান দেখার ফলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। পবিত্র হজের মাধ্যমেই এসব স্থান দেখার সুবর্ণ সুযোগ লাভ হয়।

ঐক্যের প্রতীক : ইসলাম ঐক্যের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন- ‘হে মুু’মিনরা! তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো, পারস্পরিক বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সূরা আলে-ইমরান-১০৩) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাতের সাথে পড়া, জুমা ও ঈদের সালাত মুসলমানদের ঐক্যের প্রতি ইঙ্গিত করে। বিশেষ করে হজ মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক। এ ধরনের সম্মেলন অন্য কোনো ধর্ম বা জাতির মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় না। একমাত্র তৌহিদবাদী মুসলমানরাই পৃথিবীর দিগ্দিগন্ত থেকে ছুটে আসে কাবা পানে। এখানে বর্ণ ও ভাষার ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাই এক কাতারে দণ্ডায়মান হয়ে একই কণ্ঠে উচ্চারণ করেন- ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক।’ হজে সুন্নি, লা-মাজহাবি, আহলে হাদিস, বিভিন্ন পীরের মুরিদ, বিভিন্ন দলের অনুসারীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আরাফাতের মাঠে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অবস্থান করে। আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করে। সাফা-মারওয়া সায়ি করে। মিনায় কোরবানি করে। তদ্রুপ হজের পরও তাদের মধ্যে মতভেদ ও মতানৈক্য থাকা উচিত নয়। আমাদের পরিচয় হওয়া উচিত আমরা সবাই মুসলমান।

সমতার শিক্ষা : হজ থেকে লাভ করা যায় সমতার শিক্ষা। রাজা-প্রজা, ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সাদা-কালো ও নানা দেশের নানাভাষী মানুষ ইহরাম অবস্থায় ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সাদা কাপড় পরিধান করে একই কাতারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ইবাদত করার এ দৃশ্য মমতা ও অভিন্নতার শিক্ষা দান করে।

ত্যাগের শিক্ষা : আল্লাহর রাহে হজরত ইবরাহিম আ:, ইসমাইল আ: ও হাজেরা আ:-এর ত্যাগতিতিক্ষা, শ্রম, কোরবানি, আত্মসমর্পণ ও অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সুমহান ঐতিহ্য আল্লাহপ্রেমিক মানবের হৃদয়কে অনুপ্রাণিত করে। হজ ও কোরবানি এ ত্যাগের শিক্ষা দেয়।

ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা : মহানবী সা: বলেছেন, ‘সব মুসলমান ভাই ভাই। তার জ্বলন্ত নিদর্শন হজব্রত পালন। সবধরনের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আরাফার মাঠে সব একত্রিত হয়। যেন সবাই একই মায়ের সন্তান। একই ইমামের পেছনে সালাত আদায় করে একই স্রষ্টার কাছে দোয়া করে। হজ বিশ্বমুসলমানদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন জোরদার করে। হজ শেষ করে নিজ নিজ দেশে গিয়ে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করে।’

আল্লাহর নিয়ামত লাভ : হজব্রত পালনকারীদের ওপর আল্লাহর নিয়ামত বর্ষিত হয়।
মহানবী সা: বলেছেন, যখন হাজীরা আরাফাতে অবস্থান করে দোয়া ও কান্নাকাটি করতে থাকে, তখন আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে আসেন এবং ফেরেশতাদের বলেন- ‘আমার বান্দাদের দেখো, ওদের চুল এলোমেলো হয়ে আছে, পরিধেয় বস্ত্র ধুলাবালুতে মলিন। দেখো, ওরা এ অবস্থায়ই আমার কাছে চলে এসেছে।’ লোকেরা যখন আরাফাতে উপস্থিত হয়ে কান্নাকাটি করে, তখন আল্লাহর তরফ থেকে তাদের জন্য বিশেষ রহমত বর্ষিত হয়। আর আল্লাহ তায়ালার রহমতে আরাফার দিন অধিকসংখ্যক পাপীকে ক্ষমা করে দেয়ার ফলে শয়তান খুবই ব্যথিত হয়।

সামরিক প্রশিক্ষণ : হজের কার্যক্রম গভীরভাবে চিন্তা করলে মনে হবে যেন একদল চৌকস সেনাবাহিনীর সামরিক মহড়া। মিনায় তাঁবুজীবন, আরাফায় বিশাল প্রান্তরে অবস্থান, মুজদালিফায় রাত্রিযাপন, জামারায় কঙ্কর নিক্ষেপ, মিনায় পশু কোরবানি, আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া সায়ি ইত্যাদি কাজ যেন একদল প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর সামরিক মহড়া, যা কাফির, মুশরিক, নাস্তিক-মুরতাদ ও আল্লাহর শত্রুদের মনে ভয়ের সঞ্চার করে।

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সুযোগ : হজে উপস্থিত হয় বিশ্বের নানা দেশের মানুষ। এ সুযোগে তাদের সাথে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিষয়ে যোগাযোগ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। একে অন্যের সাথে মিশে ভাবের আদান-প্রদান করা যায় এবং সুখ-দুঃখের আলোচনা করা যায়। ফলে হজ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের একটি উত্তম ক্ষেত্র। হজ বিশ্বমুসলিমের বার্ষিক মিলনমেলা। আল্লাহ তায়ালা দিনে পাঁচবার জামাতে কিছুসংখ্যক লোকের, তারপর সপ্তাহে একবার জুমার দিনে আরো কিছু বেশি লোকের, তারপর বছরে দু’বার আরো কিছু বেশি লোকের, তারপর বছরে একবার হজে আরাফার মাঠে বিশ্বের সব মানুষকে একত্রিত করার সুব্যবস্থা করেছেন।

জান্নাতি হওয়ার সুযোগ : ইসলামে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহর পবিত্র ঘর দেখা থেকে শুরু করে বিদায়ী তাওয়াফ পর্যন্ত প্রতিটি কাজই আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ, বিশ্বমুসলিমের ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য ও সংহতির প্রশিক্ষণ। হজের মাধ্যমে একজন হাজী নিজেকে জান্নাতে যাওয়ার উপযোগী করে তোলেন। তাই মহানবী সা: বলেছেন, ‘মকবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়’। (বুখারি ও মুসলিম)

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version