সরকার ঘোষিত হজ প্যাকেজ ২০২৩ জনস্বার্থ পরিপন্থি কেন ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রিট শুনানির জন্য আজ হাইকোর্টের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) রয়েছে।

রিটটি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী মো. আশরাফ-উজ জামান। তিনি বলেন, ‘হজ নিয়ে রিটটি কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) রয়েছে। আজ সকালে আমরা কোর্টে মেনশন করবো। যাতে মামলাটি শুনানি করতে পারি।’

এর আগে গত ২৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ-উজ জামান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিশটি পাঠান।

ওইদিন আইনজীবী আশরাফ-উজ জামান বলেন, ‘হজের মোট খরচ ৪ লাখ টাকায় সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সেখানে সরকার সাধারণ হজ প্যাকেজ ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। আর বিশেষ প্যাকেজ ৯ লাখ ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হজের মতো একটি ফরজ ইবাদতের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করা বাধা সৃষ্টির নামান্তর। নোটিশ পাওয়ার পর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হাইকোর্টে রিট করা হয়।’

রিটে বলা হয়, ২০২৪ সালের হজ প্যাকেজ (হিজরি-১৪৪৫) এর হজযাত্রীপ্রতি খরচ অত্যন্ত অযৌক্তিক, যা মানুষের নাগালের বাইরে।

এতে বলা হয়, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটে মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ ৬৯ হাজার ৪১০ টাকা। যা অনেক বেশি। এতে বোঝা যায় যে, সরকার হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করে বাড়ির মালিকদের অনুকূলে বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করেছে।

এটা হজযাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা। আর জমজম কূপের পানির বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা খুবই আপত্তিকর। এই বরকতময় পানি বিক্রি করে কোনো সরকার আর্থিক সুবিধা নিতে পারে না।

রিটে আরও বলা হয়, সৌদির মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা এবং ‘ডি’ ক্যাটাগরির অধীনে মিনায় ফের পাঁচদিন থাকার জন্য সার্ভিস চার্জ বাংলাদেশি টাকায় ৬২ হাজার ২৭১ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা অতিরিক্ত। হজযাত্রীদের ওপর এ ধরনের অর্থ আরোপ প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ বা সৌদি সরকার মহান আল্লাহর মেহমানদের কাছ থেকে অর্থ উপার্জনে খুবই আগ্রহী।

তাছাড়া এ বছরের হজ প্যাকেজে বাংলাদেশি টাকায় ৯ হাজার টাকা ভিসা ফি, ইলেকট্রনিক সার্ভিস, গ্রাউন্ড সার্ভিস ফি, ক্যাম্প ফি নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সৌদি আরব সরকার এই ভিসা ফি আরোপ করতে পারে না। কারণ সব হজযাত্রী সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি তাদের পবিত্র দায়িত্ব পালনের জন্য পবিত্র মক্কা ও মদিনায় যাচ্ছেন।’

এতে আরও বলা হয়েছে, গেজেটে বিমান ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা। যেখানে ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে বর্তমান প্লেন ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় ৭৬ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। প্রতিবছর সরকার হজযাত্রীদের বিমান বাংলাদেশ এবং সৌদি এয়ারলাইন্স থেকে প্লেনের টিকিট কিনতে বাধ্য করে, যাতে ওই এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোকে অবৈধ সুবিধা দেয়। এতে হজযাত্রীদের স্বাধীনতা এবং পছন্দের ক্ষতি হয়। এছাড়াও প্রতি হজ গাইডের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকায় ১৩ হাজার ৫৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা অপ্রাসঙ্গিক। সরকার হজযাত্রীদের এই টাকা অযৌক্তিকভাবে পরিশোধ করতে বাধ্য করে।

রিটে উল্লেখ করা হয়েছে, বাড়ি ভাড়া, পরিবহণ খরচ, স্বাস্থ্যবিমা সার্ভিস চার্জ এবং জমজম কূপের পানিতে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা বেআইনি ও অনৈতিক। উভয় সরকারই হজযাত্রীদের ওপর এই ধরনের ভ্যাট আরোপ করতে পারে না। কারণ হজযাত্রীরা ভ্রমণকারী নন, তারা সর্বশক্তিমান আল্লাহর মেহমান।

রিটে বলা হয়, এটা স্পষ্ট যে এই হজ প্যাকেজ প্রকৃত তথ্য ও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়নি। এটা হজযাত্রীদের সেবার জন্য তৈরি হয়নি, বরং এটি মুনাফা অর্জনের নগ্ন স্বার্থে হজযাত্রীদের শোষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই প্যাকেজের এসব কর্মকাণ্ড থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশ ও সৌদি সরকার ইসলামি চেতনা ও নৈতিকতা বজায় না রেখে হজযাত্রীদের উসকানি দিয়ে বিপুল অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version