তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি ও তারুণ্যের শক্তি। আর এ তারুণ্যের শক্তি ব্যবহার করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ সমৃদ্ধ স্মার্ট দেশের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাবে বাংলাদেশ।
এজন্য তথ্য প্রযুক্তির অবারিত খাতগুলো ব্যবহার করে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। সরকার এরই মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দুই হাজার ২০০ কলেজের ৫০ লাখ শিক্ষার্থীকে তথ্য প্রযুক্তি খাতে দক্ষ করে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে। তাই দেশের এক লাখ নয় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত গতির অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের ইন্টারনেট সংযুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে, যোগ করেন প্রতিমন্ত্রী।
বুধবার (২৪ মে) দুপুরে নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে রাজশাহী বিভাগীয় বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) সামিট বাংলাদেশ ২০২৩ এর উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞার সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী পলক আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মাটি আর মানুষের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়তে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এদেশের মানুষকে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করার পদক্ষেপ নেন শেখ হাসিনা।
অপার সম্ভাবনাময় তথ্য প্রযুক্তি খাতের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। সারাদেশে ১৩ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
বিকেন্দ্রীয়করণের মাধ্যমে রাজধানীর বাইরে হাই-টেক পার্ক, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারসহ বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। ‘হার পাওয়ার’ প্রকল্পের মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানান পলক।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা জনগণের সেবক হিসেবে সততা, দূরদর্শিতা আর সাহসিকতা দিয়ে স্বল্পোন্নত বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছেন। এখন আমাদের গন্তব্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’র পথে। আমাদের লক্ষ্য, অপার সম্ভাবনাময় দেশের পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীকে তথ্য প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা, দক্ষতা সৃষ্টি করা। তারুণ্যের এ শক্তি পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। এ শক্তিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ ২০৪১ সাল নাগাদ সমৃদ্ধ স্মার্ট দেশের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ করোনা মহামারি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দিশেহারা হয়ে গেছে। শ্রীলংকা দেউলিয়া হয়ে গেছে, পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক সংকটে পড়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেধাবী নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি সমৃদ্ধির পথে। এ অগ্রযাত্রায় বর্তমানের তরুণ প্রজন্মকে বুদ্ধিদীপ্ত, সাহসী, সৃজনশীল এবং দেশপ্রেমিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, মোট ২৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিংড়ার শেরকোল এলাকায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইউকিউবেশন সেন্টার, হাই-টেক পার্ক এবং টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। উন্নয়ন বঞ্চিত সন্ত্রাসের জনপদ চলনবিল এখন আর পিছিয়ে নেই। সিংড়াকে ডিজিটাল সিটি হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। এ সিটিকে আমরা চলনবিলের সব জেলার শিক্ষার্থীদের আইটি হাব হিসেবে গড়ে তুলব, যোগ করেনতিনি।
বিপিও সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশনে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি নাজনীন নাহার, ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল বাহার জাহিদ, ‘বাক্য’র সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ হোসেন, ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার, সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা খাতুনসহ অনেকে।
মঙ্গলবার (২৩ মে) রাজশাহী কলেজে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং কর্মশালার মাধ্যমে এ সম্মেলন শুরু হয়। বুধবার সিংড়ায় সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্যারিয়ার কর্মশালা শেষে বিপিও শিল্পে কর্মসংস্থান তৈরিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ১০টি স্টলের মাধ্যমে সিভি সংগ্রহ করা হয়। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।