শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে লিভার অন্যতম। শরীর সুস্থ থাকা অনেকটা নির্ভর করে এ লিভারের ওপর। এ লিভারে আক্রান্ত হওয়ার ফলে প্রাণ ঝরছে হাজার হাজার মানুষের।
লিভার সিরোসিস হলে স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে মানুষ। এই রোগে লিভার একেবারে অকেজো হয়ে পড়ে। লিভারের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত থেকে এই অসুখের জন্ম নেয়। অনেক ক্ষেত্রেই লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগী লিভার ক্যানসারেও আক্রান্ত হন।
লিভারের অসুখের শেষ পর্যায় হলো সিরোসিস। এই পর্যায়ে রোগ পৌঁছে যাওয়ার অর্থ হলো— সমস্যা অনেক গভীরে চলে গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লিভার সিরোসিস ধরতেই অনেকটা দেরি হয়ে যায়। আর যখন ধরা পড়ে, তখন আর কিছু করার থাকে না। তবে এই রোগ শরীরে থাবা বসালে কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়।
লিভার সিরোসিসের অন্যতম লক্ষণ জন্ডিস। ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা বেড়ে গেলে জন্ডিস দেখা দেয়। রক্তের লোহিত কণিকাগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই ভেঙে গিয়ে বিলিরুবিন তৈরি করে, যা লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে পিত্তরসের সঙ্গে পিত্তনালির মাধ্যমে পরিপাকতন্ত্রে প্রবেশ করে। তার পর তা শরীর থেকে নির্গত হয়। লিভারে ক্ষত তৈরি হলে লিভার শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। তখন এই অসুখ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
লিভার ঠিকমতো কাজ না করলে, শরীরের বিপাকীয় কাজগুলো ঠিকমতো সম্পন্ন হয় না। ফলে শারীরিক ক্লান্তি, দুর্বলতা ও অস্থিরতা দেখা দেয়।
লিভারের সিরোসিসের কারণে পেটে তরল জমা হতে পারে। ফলে পেট ফাঁপা এবং ব্যথা হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। পেট ফাঁপার সমস্যায় আমরা প্রায়ই ভুগি। সেই সময় পেটও ফুলে থাকে। তবে বেশ কয়েক দিন পর পর এই রকম সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই ডাক্তারের চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন।
লিভার দূষিত রক্তের কোষগুলোকে বৃদ্ধি পেতে দেয় না। লিভার ভিটামিনকে এর সাহায্যে এক ধরনের প্রোটিন উৎপাদন করে। এই প্রোটিন রক্তক্ষয় বন্ধ করে যে কোনো ক্ষত তাড়াতাড়ি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। তবে লিভার যদি খারাপ হয়, তখনই শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে কালশিটে দেখা দিতে পারে, কিংবা খুব সহজেই অনেকটা রক্তক্ষয় হয়ে যেতে পারে।
লিভার সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তপ্রবাহে টক্সিন জমা হতে পারে। যার ফলে মানসিক পরিবর্তন হয়। যেমন -বিভ্রান্তি, স্মৃতিশক্তির সমস্যা ইত্যাদি। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হলে লিভার ফেলিওর, লিভার ক্যানসর— এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।