মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪

অধিক লাভজনক ফসল এলাচ, বিঘা প্রতি আয় ১০ লাখ টাকা

যা যা মিস করেছেন

ঔষুধ হিসাবে ছোট এলাচ (সবুজ এলাচ) একটি মশলা, চর্বণসংক্রান্ত এবং, ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এলাচ চাষে ১ বিঘা জমি থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। যা এখন পর্যন্ত এমন কোন ফল বা ফসলবাংলাদেশে নাই যাতে প্রতি বিঘায় আয় হবে।
এলাচ চাষে ১ বিঘা জমি থেকে ১০ লাখ টাকা আয় লেখাটি লিখেছেন মোঃ মাশরেফুল আলম ,কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার।এলাচ একটি মসলা জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছের ফল মসলা হিসেবে খাওয়াহয়। এলাচ খাবার এবং পানীয় উভয় প্রকারে স্বাদ এবং রান্না মশলা হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এলাচের বর্তমান বাজার মূল্য ১৩০০ টাকা/ কেজি (যদিও এখন প্রায় তিনগুণ)। যদি পাইকারী দামে এলাচ বিক্রয় ধরা হয় ১০০০ টাকা, তবে বিঘা প্রতি উৎপাদান হয় সর্বনিম্ন ৬০০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ কেজি।সেই হিসাবে বিঘা প্রতি ১০০০×১০০০=১০,০০,০০০/ (দশ লক্ষ টাকা) আয় করা সম্ভব। এলাচের (Cardamon ) চাষের জমিঃ উর্বর মাটি এবং হালকা রোদ্র-ছায়া যুক্ত জায়গায় এলাচ গাছ ভালো জন্মায়। ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় ছায়ার মধ্যে এলাচ গাছের ফলন ভালো হয়। এলাচ চাষের ক্ষেত্রে আলাদা কোনোজমির প্রয়োজন হয় না। অন্য গাছের ছায়ার নিচে অর্থাৎ মেহগনি, আকাশমনি বা এ জাতীয় বাগানের ভিতর (গাছের ছায়াযুক্ত স্থানে) অথবা বাড়ির আঙ্গিনা অথবা ফলদ বৃক্ষের বাগানে এলাচ চাষ করলে এলাচের ভালো ফলন হয়। অন্য ফসলের মাঠে এলাচ চাষ করলে ফলন ভালো পাওয়া যায় না। চারা রোপনের হারঃ শতক প্রতি ১৪ টি এলাচের চারা লাগে অর্থাৎ বিঘা প্রতি( ৩৩ শতকে ) ৪৬০ টি চারা রোপণ করা যায়। চারা রোপণের দূরত্বঃ এলাচের চারা লাইনে রোপণের জন্য চারা থেকে চারার দুরত্ব হবে ৪ হাত এবং লাইন থেকে লাইনের দুরত্ব হবে ৩.৫ ( সাড়ে তিন) হাত। এই রোপণ দূরত্ব অনুসারে এলাচের চারা রোপণ করা ভালো। জমি তৈরি ও সার ব্যবস্থাপনাঃ এক বিঘা বা তার উপরে জমি তৈরি করতে হলে অবশ্যই মাটির ৩ ধরনের পরীক্ষাকরে নিতে হবে । প্রতিটি জেলায় সরকারি মাটি পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে মাটি পরীক্ষা করএ নিতে হবে। কৃষক পর্যায়ে মাটির প্রতিটি পরীক্ষার জন্য ৩০ টাকা ফি দিতে হবে। সেই হিসাবে ৩ টি পরীক্ষায় মোট ৯০ টাকা খরচ হবে।

(ক) মাটির পিএইচ
(খ) মাটিতে বলি বা স্যান্ডের পরিমাণ
(গ) মাটিতে জৈব উপাদানের পরিমাণ – এই ৩ টি তথ্য অবশ্যই জানতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক পরিমাণ মতো থাকলে এলাচ উৎপাদনে তেমন কোন খরচ হয় না। শুধু মাত্র প্রথম বছরে চারা কেনার খরচ হয়, তবে পরের বছরগুলোতে আর চারার টাকা লাগে না। মাটিতে পিএইচ এর পরিমাণ ৬ এর বেশি হলে মাটিরসাথে পরিমাণ মতো চুন মিশাতে হবে। যদি এটেল মাটি হয় এবং জমিতে বালির পরিমাণ কম থাকে তাহলে অতিরিক্ত বালি মেশাতে হবে। কিন্তু দোআঁশ মাটিতে কোন কিছু করতে হবে না। মাটিতে জৈব উপদানের পরিমাণ কম থাকলে পচা গোবর বা কেঁচো কম্পষ্ট সার অতিরিক্ত প্রয়োগ করতে হবে।এছাড়াও জমি তৈরির সময় চাষের সঙ্গে টিএসপি, প্রতি শতকে মাটিতে ৫০০ গ্রাম, পটাশ প্রতি শতকে ৫০০ গ্রাম। দানাদার কীটনাশক যেমন (ফুরাডান বা কার্বফুরান) ১ বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ২ কেজি পরিমাণ প্রয়োগ করতে হবে। তারপর ১ দিন পর সেচ দিয়ে জমি ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।যেন জমির সাথে সারগুলো ভালোভাবে মিশে যেতে পারে। ভালো ফলন পেতে হলে এর ১৪ দিন পরে ২ ফিট চওড়া ও দেড়ফিট গভীর গর্ত করে গোবর সার বা জৈব সার প্রয়োগ করে সাথে দানাদার কীটনাশক ( প্রতি গর্তের গোবরের সাথে ২০০ গ্রাম ) অবশ্যই দিতে হবে।এছাড়াও চারা রোপণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে একই হারে ইউরিয়া- পটাশ সার দিতে হবে। তবে পরবর্তীতে কেবল ডিএপি সার প্রযোজ্য।পরিচর্যাঃ চারা রোপণের ৩ বছর পর শীতকালে এলাচ সংগ্রহের পর পুরাতন গাছ ছাটাই করতে হবে। অবাঞ্চিত মরা গাছ,পাতা ছাটাই না করলে ভালো ফলন হয় না। শীতকালে এলাচ গাছে ফুল ও ফল হয় না। তাই শীতকালে মরা গাছ ও দূর্বল গাছ ছাটাই করাই উত্তম। এলাচ গাছে যে স্থানে ফল ধরেঃ বর্তমানে বাংলাদেশে এলাচের যে জাতগুলো আছে সেগুলোর সবগুলোই গাছের গোড়ায় মাটি সংলগ্ন হয়ে গুচ্ছাকারে ফুল গজায়। পরে সেই ফুল গুলো থেকে গুচ্ছ আকারে ফল হয়ে থাকে। পুর্বে বাংলাদেশে অনেকএলাচের গাছ দেখা যেত সেগুলোতে সেগুলোতে ২-৩ বছরের মাথায় ফুল আসত গাছের শাখায় কিন্তু যুগের পর যুগ কেটে গেলেও কখনও ফল ধরতে দেখা যেত না সেসব এলাচ গাছে। সেগুলো ছিল বন্য প্রজাতির গাছ। এখনও দেশের আনাচে কানাচে এই বন্য প্রজাতির গাছ মাঝে মাঝে দেখা যায়। ফলে উৎপাদনকরী কৃষক এসব জাতের গাছ লাগিয়ে বঞ্চিত হতো। এ কারণেই হয়তো সঠিক জাতের অভাবে আমাদের দেশে এতদিন এলাচ চাষ সম্প্রসারণ করতে পারেনি। গাছ প্রতি ফলনঃ এলাচের চারা রোপণের ২য় বৎসরে কিছু গাছে এলাচ ধরা শুরু করলেও

রোপণের ৩য় বৎসর থেকে এলাচের গাছে ফলন দেওয়া শুরু হবে। প্রায় প্রতি ঝোপ থেকে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম এমনকি ১ কেজির উপরে ফলন পাওয়া যাবে। ৩ বৎসর পরে ১ বিঘা বা ৩৩ শতক জমি থেকে ৯০০ থেকে ১০০০ কেজি বা ১ টন ফলন পাওয়া যাবে। সেই হিসাবে ১ বিঘা জমি থেকে বছরে ১০ লক্ষ টাকার এলাচ উৎপাদন করা সম্ভব। ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণঃ বাংলায় আষাঢ় মাসে এলাচের এই জাতগুলোর ফুল আসে এবং ভাদ্র ও আশ্বিন মাসের শেষের দিকে এলাচ পরিপক্ক হয়। তখন বাগান থেকে কাঁচা এলাচ সংগ্রহ করে রোদে শুকাতে হয় অথবা বেশি পরিমাণে উৎপাদন করলে ড্রায়ার মেশিনের সাহায্যে শুকাতে হয়। বর্ষাকালে হয়ে থাকে বলে এলাচ না শুকিয়ে ঘরে রাখলে পচনধরার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এলাচ ফল পরিপক্ক হলে ফলগুলো দেখতে কিছুটা সবুজের উপর লালচে হবে। টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে এলাচের চারা উৎপাদনঃ এলাচ হলো মসলার রাণী। সুগন্ধযুক্ত এই মসলাটির প্রচুর চাহিদা বাংলাদেশে। রান্নায় স্বাদ বাড়ানো ছাড়াও এলাচের রয়েছে প্রচুর ঔষুধিগুণ। কিন্তু আমাদের দেশে কাংখিত এলাচের জাত না থাকায় প্রতি বছর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় প্রায় দেড়শ কোটি টাকার এলাচ। আমদানি নির্ভর এই মসলাটির সম্প্রতি আমাদের দেশে ব্যাক্তিগত উদ্যেগে অল্প পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। প্রাকৃতিকভাবে চারা উৎপাদন ক্ষমতা অপ্রতুল হওয়ায় স্বল্প সময়ে কাংখিত জাতের বিস্তৃতি ঘটাতে টিস্যু কালচার পদ্ধতি হতে পারে একটি কার্যকরী সমাধান।
এলাচ (Cardamon ) চাষে সতর্কতাঃচারা রোপণের পর জমিতে সেচ দিতে হবে। তবে জমিতে পানি জমে থাকতে দেওয়া যাবে না। অতিরিক্ত পানি জমিতে জমে থাকলে ড্রেনের ব্যবস্থা করে পানি নিস্কাশন করতে হবে।
ঘন বর্ষায় চারা লাগানো যাবে না। চারা রোপণের পর পর কার্বান্ডাজিম ( গোল্ডাজিম )গ্রুপের ছত্রাকনাশক পানির সাথে পরিমাণমতো মিশিয়ে গাছের একেবারে গোড়ায় স্প্রে করতে হবে। গোল্ডাজিম এলাচ গাছের জন্য ভালো কাজ করে। এলাচ চাষে ১ বিঘা জমি থেকে ১০ লাখ টাকা আয় শিরোনামে সংবাদের লেখাটি লিখেছেন মোঃ মাশরেফুল আলম ,কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, রংপুর সদর, রংপুর।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security