সাত মাস আগে যাদের বিপক্ষে হেরে স্বপ্ন ভেঙেছিল, সেই বায়ার্ন মিউনিখকে পেয়ে জ্বলে উঠলেন কিলিয়ান এমবাপে ও নেইমার। দুই তারকা ফরোয়ার্ডের নৈপুণ্যে জার্মান দলটিকে তাদের মাঠেই হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালের পথে এগিয়ে গেল পিএসজি।
আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় বুধবার রাতে রোমাঞ্চ ছড়ানো কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রথম লেগে ৩-২ গোলে জিতেছে পিএসজি। প্রথম আধা ঘণ্টায় এমবাপে ও মার্কিনিয়োসের গোলে পিছিয়ে পড়ার পর ঘুরে দাঁড়ায় গতবারের চ্যাম্পিয়নরা। এরিক-মাক্মিম চুপো মোটিং ব্যবধান কমানোর পর সমতা টানেন টমাস মুলার। পরে এমবাপের দ্বিতীয় গোলে জয় নিয়ে ফেরে ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা।
গত বছর অগাস্টে ২০১৯-২০ আসরের ফাইনালে পিএসজিকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করেছিল বায়ার্ন। ভাঙা হৃদয়ে মাঠ ছেড়েছিল পিএসজি। প্রতিশোধের মিশনে এক ধাপ এগিয়ে গেল তারা।
এতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন এমবাপে ও নেইমার। শেষ ষোলোর প্রথম লেগে বার্সেলোনার মাঠে হ্যাটট্রিক করে পার্থক্য গড়ে দিয়েছিলেন এমবাপে। এবার করলেন জোড়া গোল। দুটি গোলে অবদান রাখলেন নেইমার।
ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষের এই ‘ভয়ঙ্কর’ জুটির কথা আলাদা করে বলেছিলেন বায়ার্ন কোচ। তাদের ঠেকিয়ে রাখতে পরিকল্পনাও ছিল তার। কিন্তু তা কাজে এলো না। নেইমার-এমবাপের জুটিই দিল প্রথম ধাক্কা। অবশ্য গল্পটা ভিন্নও হতে পারতো। দ্বিতীয় মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো স্বাগতিকরা; কিন্তু চুপো মোটিংয়ের হেড ব্যর্থ হয় ক্রসবারে লেগে।
পাল্টা আক্রমণে পরের মিনিটেই এগিয়ে যায় পিএসজি। ডি-বক্সের মুখে ডিফেন্ডারদের ঘিরে থাকা অবস্থায় ডান দিকে বল বাড়ান নেইমার। জোরালো শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন এমবাপে। গোলে যথেষ্ট দায় আছে মানুয়েল নয়ারের। তার সোজাসুজিই ছিল বল কিন্তু থামাতে পারেননি। ঊরুতে লেগে বল খুঁজে নেয় ঠিকানা!
দ্বাদশ মিনিটে জালে বল পাঠান ইউলিয়ান ড্রাক্সলার; কিন্তু তাকে পাস দেওয়া ফরাসি ফরোয়ার্ড এমবাপে বল ধরার সময় অফসাইডে থাকায় মেলেনি গোল। খানিক বাদে পরপর দুই মিনিটে দুটি ভালো সুযোগ পায় বায়ার্ন। তবে লেয়ন গোরেটস্কার হেড ঠেকানোর পর বাঁজামাঁ পাভার্দের জোরালো শটও ঝাঁপিয়ে রুখে দেন গোলরক্ষক কেইলর নাভাস।
ব্যবধান দ্বিগুণ করা গোলেও দারুণ অবদান আছে নেইমারের। ২৮তম মিনিটে তার উঁচু করে বাড়ানো বল বাঁ পায়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে ডান পায়ের শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্কিনিয়োস।
৩৭তম মিনিটে সাবেক দলের জালে বল পাঠান চুপো মোটিং। ফরাসি ডিফেন্ডার পাভার্দের ডান দিক থেকে বাড়ানো ক্রসে লাফিয়ে জোরালো হেডে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ক্যামেরুনের এই ফরোয়ার্ড। গত অক্টোবরে পিএসজি থেকে বায়ার্নে যোগ দেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে নেইমারের কাছ থেকে নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন নয়ার। দুই মিনিট পর পাভার্দের শট ঠেকিয়ে দলকে এগিয়ে রাখেন নাভাস।
তবে বেশিক্ষণ ব্যবধান ধরে রাখতে পারেনি পিএসজি। ৬০তম মিনিটে ডান দিক থেকে জশুয়া কিমিচের ফ্রি কিকে চোখের পলকে এগিয়ে গিয়ে লাফিয়ে হেডে স্কোরলাইন ২-২ করেন মুলার।
৬৮তম মিনিটে আবারও দলকে এগিয়ে নেন এমবাপে। আনহেল দি মারিয়ার পাস ডি-বক্সে পেয়ে জায়গা বানিয়ে কাছের পোস্ট দিয়ে বল জালে পাঠান ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা।
শেষ ১০ মিনিটে প্রচণ্ড চাপ বাড়ায় বায়ার্ন। দুই মিনিটের ব্যবধানে দারুণ দুটি সুযোগও পায় তারা; কিন্তু সমতায় ফেরা আর হয়নি তাদের। ৮৬তম মিনিটে দাভিদ আলাবার কোনাকুনি শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে গেলে হারের হতাশায় মাঠ ছাড়ে দলটি।
ঘরের মাঠে হেরে যাওয়ায় টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে বায়ার্নের জন্য। আগামী মঙ্গলবার ফিরতি পর্বে প্রতিপক্ষের মাঠে কমপক্ষে দুই গোলের ব্যবধানে জিততে হবে তাদের। অন্যদিকে, ঘরের মাঠে ড্র করলেই যথেষ্ট হবে পিএসজির। এমনকি হারলেও সুযোগ থাকবে তাদের, কেননা তিনটি অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা তো থাকছেই।