কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন (স্টাফ রিপোর্টার) : কৃষকের কান্নায় ক্রমশ ভারী হয়ে উঠছে নেত্রকোনা জেলার হাওরাঞ্চল হিসেবে খ্যাত খালিয়াজুরী, মদন ও মোহনগঞ্জ উপজেলা। রবিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কয়েক মিনিটের কালবৈশাখী গম ঝড়ো বাতাসে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন মূহুর্তে বিলীন হয়ে গেছে। শীষে ধান নেই, জমিতে শুধু ধান গাছ দাড়িয়ে রয়েছে। সোমবার সকাল থেকে হাওরাঞ্চলে চলছে কৃষকদের বিলাপ করা কান্না।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে খালিয়াজুরী উপজেলায় ১৯ হাজার ৯ শত ৫০ হেক্টর, মদনে ১৭ হাজার ৩ শত ৪০ হেক্টর ও মোহনগঞ্জ উপজেলায় ১৭ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে বলে আশা ছিলো কৃষকদের। বেশির ভাগ জমির ধানই পাকতে শুরু করেছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে ব্রিআর-২৮ জাতের ধানের পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের ধান কাটা শুরু হতে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে আগে লাগানো কিছু কিছু জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। সারা বছরের একমাত্র হাড় ভাঙ্গা কষ্টে ফলানো সোনার ফসল ঘরে তুলতে অনেকেই বিভোর সময় পার করছে। জমিতে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেছে। কিন্তু গত রবিবার সন্ধ্যার আগ মূহুর্তে মাত্র কয়েক মিনিটের কালবৈশাখী ঝড়ের গরম বাতাস যেন কৃষকদের স্বপ্ন বিলীন করে দিয়েছে। ধার-দেনা করে এক ফসলী জমির ফসল হারিয়ে পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই কৃষকের।
মদনের তিয়শ্রী ইউনিয়ের বাগজান গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া, খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দীপুর গ্রামের একজনের ৮একর নষ্ট হওয়া জমির মালিক মঞ্জিল চৌধুরীসহ মোহনগঞ্জ উপজেলার হাটনাইয়া গ্রামের হাসেম মিয়া, মদনের গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া, নজরুল ইসলাম ও মজিবুরসহ অনেকেই বিলাপের সুরে বলেন, গত রবিবারের গরম বাতাসে আমাদের সোনার ফসল ধান ক্ষেত সাদা হয়ে গেছে।
এছাড়াও অনেকে বলেছেন, ঋণ করে জমিতে ফসল উৎপাদন করেছিলাম। এখন সারা বছর খাবো কি? আর কি দিয়ে ঋণ পরিশোধ করবো? সরকারের সাহায্য কামনা করা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।
মদন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা রায়হানুল হক জানান, গত রবিবার সন্ধ্যায় কালবৈশাখী ঝড়ে কৃষদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য এখনো বলা যাচ্ছে না।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপÍরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান জানান, খবর পেয়ে স্থানীয় কৃষি অফিসারদের নিয়ে মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল পরিদর্শন করছি। হাওরের যে সমস্ত জমিতে এখনও ধান পাকে নাই সেসব জমির ধান গরম বাতাসের কারণে চিটা হতে পারে। আমাদের লোকজন মাঠে আছে। ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমান নিরূপনে কাজ করছে।