তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো কোমর পানিতে ডুবে আছে নদী তীরবর্তী অঞ্চল ও প্রায় অর্ধ শতাধিক চরের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ । বানভাসি মানুষদের উঠানে পানি, ঘরে পানি, চারদিকেও থৈ থৈ করছে পানি আর পানি। ঠাঁইও নেই, পরিবেশও নেই উঁচু স্থানে বসবাস করার। সড়ক, মাটিকাটা বাঁধ, চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানের সব উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা পড়েছেন তীব্র খাদ্য সংকটে । বেশিরভাগ পরিবারের থাকার ঠাঁই নেই। শুধু তাই নয়, আছে চোর ডাকাতের ভয়। গরু-ছাগল ও ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে পারছে না অনেক পরিবার। তাই বাধ্য হয়েই বিভিন্ন স্থানের বানভাসি মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে নৌকায় পেতেছে বসতবাড়ি। ঘরের মধ্যে কোমর পানি হওয়ার খাটের নিচে বাঁশের উঁচু মাচা তৈরি করে সেখানেই চলছে রান্নাবান্না, , খাওয়া, । বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বন্যায় আক্রান্ত পরিবারগুলো প্রায় সপ্তাহ খানেক হলো কোমর পানিতে থেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেউ শুকনা খাবার, কেউ এক বেলা রান্না করে পার করছে দিনরাত। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গাইবান্ধা উপজেলা সদরসহ ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলগুলো জলমগ্ন থাকায় বিস্তীর্ণ জনপদে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাব। ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের দূর্গম পশ্চিম খাটিয়া মারির চরের ছকিনা বেগম জানান ,সাত মাস আগে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে নিজের বসতভিটা হারিয়ে কাশখড়ে আচ্ছাদিত যমুনার বুকে জেগে উঠা পশ্চিম খাটিয়া মারির চরে এসে নতুন ঘর তৈরি করি । এখানে এসেও পড়তে হয়েছে বন্যার কবলে । তিনি জানান গত এক সপ্তাহ হলো পানির নিচে আছি এক বেলা ভাত খেয়ে দিন কাটতে হচ্ছে । টিউবওয়েল ডুবে গেছে তাই পানি ফুটিয়ে খেতে হচ্ছে । রফিকুল ইসলাম নামের আরেকজন জানান , আমরা পানিতে ডুবে মরলেও আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না ।গত এক সপ্তাহ হলো পানিতে ডুবে আছি ত্রান নেওয়া তো দূরে থাক এখনো পর্যন্ত কেউই দেখতেই আসেনি । ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বাররা পর্যন্ত এখনো আমাদের দেখতে আসেনি । চায়না বেগম নামের এক নারী জানান , আমার ছোট একটা বাচ্চা আছে এখনো হাঁটা শেখে নাই ।সব সময় ভয়ে থাকি কখন যে বাচ্চা পানিতে পড়ে তাই সারাদিন রাত কোলে নিয়ে থাকি । ঘরে খাবার না থাকায় এই বাচ্চাটাকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছি । যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গত এলাকায় ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার। এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ বানভাসি মানুষের মাঝে জোটেনি একমুঠো ত্রাণের চাল। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে অনেক পরিবারের। এসব ঘরছাড়া মানুষগুলোর হাতে প্রায় ১ মাস থেকে কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করছে। নৌকাবিহীন পরিবারগুলো কেউ মাচা পেতে, কেউ রাস্তার উপর খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারি পর্যায়ে সীমিত ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও বিপুলসংখ্যক বানভাসির ভাগ্যে জুটছে না তা। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায় গাইবান্ধা জেলায় এ পর্যন্ত ৮০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৬ লাখ টাকা বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে এছাড়া গবাদি পশুর খাদ্য ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বানভাসি মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে । গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান জানান , এবছর আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ত্রান বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে । ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনও গন বানভাসি মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে । সরকারের কাছ থেকে আমরা পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেয়েছি ।আশা করছি একটি মানুষও এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত হবে না ।
আপনি যা যা মিস করেছেন
Add A Comment