তাসলিমুল হাসান সিয়াম গাইবান্ধা প্রতিনিধি : পুরনো জিনিস অনেকের কাছেই প্রিয়। বিশেষত যারা এটি সংগ্রহ করেন । পুরনো দিনের জিনিস নিয়ে পৃথিবীর সব দেশের মানুষের মধ্যে আগ্রহ দেখা যায় । আমাদের দেশের এমন অনেক জিনিসপত্র আছে যেগুলো এক সময় আভিজাত্যের প্রতীক ছিল কিন্তু কালের বিবর্তনে এসব জিনিস পত্র বিলুপ্ত হয়ে গেছে । বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া তৈজসপত্রের মধ্যে অন্যতম হলো অ্যান্টিক । এই অ্যান্টিক কথাটির সাথে জড়িয়ে আছে পুরনো দিনের ঐতিহ্যের কথা , আর পুরনো বলেই কিন্তু তা বাতিল হয়ে যায় না। পুরনো কোনো জিনিস কোথাও স্থান পেলে তখন সেই পুরনোই জিনিসটিই নতুন করে নজর কাঁড়ে সবার। আর পুরনো দিনের হারানো জিনিসের প্রতি এমন ভালো লাগা থেকেই শত বছরের পুরনো হাজারের বেশি তৈজসপত্র সংগ্রহ করেছেন গাইবান্ধার মোঃ সুমন মিয়া ।তবে তিনি নিজের ঘর সাজানোর জন্য নয় নিতান্তই শখের বশে ও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এসব ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই নিজের বাড়িতে তৈরি করেছে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া শতাধিক তৈজসপত্রের এক বিশাল সংগ্রহ শালা । গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ঢোলভাঙ্গায় বেড়ে ওঠা মোঃ সুমন মিয়া ছোট বেলা থেকে দেখে আসছিল তার বাবার সংগ্রহে ছিল বিভিন্ন দেশের মুদ্রা । পুরাতন জিনিসের প্রতি বাবার এমন নেশা সুমনকেও একসময় প্রভাবিত করে । পড়াশোনার ফাঁকে যেটুকু সময় পেত তখনই বেড়িয়ে পড়ত পুরাতন জিনিসের সন্ধানে । ২০১০ সালে পুরাতন জিনিসের সন্ধান শুরু করলেও ২০১৫ সালে গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে সংগ্রহশালার পরিধি বাড়াতে মনোনিবেশ করে।শুরুতে নিজের গ্রামে ও আত্বীয়স্বজনদের কাছ থেকে এসব জিনিস সংগ্রহ করলেও পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সে পুরাতন এসব জিনিস সংগ্রহ করে । তবে নিজের শখকে বাস্তবায়ন করা সহজ ছিল না তার পক্ষে কাজ করতে গিয়ে নানা জনের নানা রকম কটুক্তির শিকারও হয়েছেন । বর্তমানে তার সংগ্রহে রয়েছে ব্রিটিশ শাসন আমল ও পাকিস্তান আমলের অ্যান্টিকের তৈরি কয়েকটি মুর্তি , ফুটবল ট্রফি , থালাবাটি, গ্লাস, পাতিল, চামচ, গামলা, কাঁসার গ্লেস, বাটি, ফুলদানি, চামচ, রেকাব শানকে, গামলা, বেলিবগি, পানদানি, থালা, পিতলের টব, কলসি, বালতি, কড়াই, পানের থালা, ধূপদানি, তামার কলস, হাঁড়িপাতিল, পুষ্পপাত্র কাঁচের বোতল , ইত্যাদি। পুরাতন জিনিসপত্র সংগ্রহের বিষয়ে সুমন মিয়া জানান , ছোট বেলা থেকেই পুরাতন ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করা আমার শখ ছিল । বর্তমানে শখ নেশায় পরিনত হয়েছে কোথাও পুরাতন জিনিসের সন্ধান পেলে ছুটে যাই সেখানে । এমন অনেক জিনিস আছে যেগুলো ক্রয় করতে জমানো টাকা শেষ হলেও এই কাজের মধ্যে আমি আনন্দ খুঁজে পাই । আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা তাদের অতীত ঐতিহ্যকে ভুলতে বসেছে এসব জিনিস সংরক্ষণের অভাবে । সব প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে তাই নিজ উদ্যোগেই অতীত ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছি । এসময় তিনি আরো জানান , সরকার যদি উদ্যোগী হয়ে পুরাতন জিনিসের সংগ্রাহকদের সহযোগিতা করে প্রদর্শনীর আয়োজন করে তাহলে নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের অতীত ইতিহাস তুলে ধরা সম্ভব হবে ।
আপনি যা যা মিস করেছেন
Add A Comment