বাংলাদেশের উপরে মিথেন গ্যাসের আস্তরণ শনাক্ত করেছে অন্তত তিনটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা। নিউইয়র্কভিত্তিক আর্থিক ও ডেটাসেবা প্রদানকারী এবং মিডিয়া কোম্পানি ব্লুমবার্গ তাদের একটি প্রতিবেদনে এই গ্যাসকে ‘রহস্যময়’ বলে উল্লেখ করেছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের কোম্পানি কায়রোস এএএস চলতি বছর বাংলাদেশের উপরে ১২টি সর্বোচ্চ মিথেন নিঃসরণের হার শনাক্ত করেছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আকাশে মিথেনের উপস্থিতিকে ‘রহস্যময়’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে যেসব দেশ রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। কিন্তু এ দেশটিই এখন বাতাসে মিথেন নিঃসরণে বড় ভূমিকা রাখছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বছর প্যারিসভিত্তিক কোম্পানি ক্যারোস-এসএএস নামের একটি প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি মিথেন গ্যাস নিঃসরণের সর্বোচ্চ ১২টি হার শনাক্ত করেছে। যার সবগুলোই ঘটেছে বাংলাদেশে। যদিও স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণক্ষমতা থাকা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান জিএইচজিস্যাট ইনকরপোরেশনের প্রেসিডেন্ট স্টেফানি জার্মেইন বলেন, আমরা সবচেয়ে টেকসই মিথেন নিঃসরণ দেখতে পেয়েছি। তবে এর উৎস স্পষ্টভাবে শনাক্ত করতে পারিনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে ব্লুফিল্ড টেকনোলজিস ইনকরপোরেশন। গত বছরের মে মাসে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ওপরেও প্রচুর পরিমাণ মিথেনের মেঘ দেখতে পায়। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশের আকাশেও ঘন মিথেনের আস্তরণ শনাক্ত করে। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইয়োতাম এরিয়েল বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়- বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মিথেন নিঃসরণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ বিষয়টি স্যাটেলাইটেই শনাক্ত করা যায়।’
বাংলাদেশের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের একটি সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন।
তিনি বলেন, ‘এটি সম্ভবত ধানখেত থেকে আসছে। যখন কৃষকেরা তাদের খেত সেচের পর ভাসিয়ে দেন, তখন জলাবদ্ধ মাটির ব্যাকটেরিয়া বিপুল পরিমাণ গ্যাস তৈরি করতে পারে। আরেকটা উৎস হচ্ছে ল্যান্ডফিল গ্যাস। আমরা এটি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’
যুক্তরাষ্ট্রে গবেষকেরা আগেই সতর্ক করে বলেছেন, মিথেন গ্যাসের ছড়িয়ে পড়ার হার যদি কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা না যায়, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ করার জন্য বর্তমানে যেসব লড়াই সংগ্রাম চলছে, তাতে খুব একটা ফল পাওয়া যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও গবেষক রবার্ট জ্যাকসন বলছেন, ‘জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকানোর জন্য বর্তমানে যেসব কর্মসূচি চালানো হচ্ছে তাতে কার্বন ডাই অক্সাইডের ওপরেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এর পেছনে যথেষ্ট কারণও আছে। তবে আমরা যদি এখন এই মিথেন গ্যাসের দিকে নজর না দেই, তাহলে সেই ঝুঁকিটা থেকেই যাবে।’
মিথেনের গ্রিনহাউজ এফেক্ট বা বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও বেশি।
কার্বন ডাই অক্সাইডের তুলনায়, মিথেন গ্যাস, বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রা এক শতাব্দী কাল সময়ব্যাপী ৩০ গুণ বেশি ধরে রাখতে পারে।