স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ
সপ্তাহ ব্যাপী সারাদেশে ননস্টপ ধর্ষণের প্রতিবাদে যশোরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার (১০ই মার্চ) সোমবার বেলা ১২ টায় যশোরের সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে যশোর প্রেস ক্লাবের সামনে এ প্রতিবাদী বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সুমাইয়া শিকদার ইলার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশ বক্তব্য রাখেন জান্নাতুল সুমি, সুরাইয়া শিকদার এশা, আশালতা, মুসলিমা আক্তার সেতু, সামিয়া বিশ্বাস, খন্দকার রুবাইয়া, জান্নাতুল ফেরদৌস অনন্যা, ইমরান খান, জিএম মুন্না, বাইজিদ রহমান প্রমুখ।
বক্তাগণ বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সাথে জড়িয়ে আছে নারী শ্রমিকদের নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আজীবনের সংগ্রামের ইতিহাস। কিন্তু বর্তমানে সাম্রাজ্যবাদ এবং তার দালাল শাসকগোষ্ঠীরা পালন করে উৎসবের দিন হিসেবে। যুগ যুগ ধরে নারীর উপর যে নির্যাতন নিপীড়ন চলে আসছে তার জন্য দায়ী সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ, ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ, পুরুষতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। কিন্তু বুর্জোয়া নারীবাদীরা নারীর প্রকৃত শত্রুকে চিহ্নিত না করে শুধুমাত্র পুরুষতন্ত্র ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদকে বিরোধিতা করে।
এর মূলে যে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, পুঁজিবাদ তা তারা নিজেদের শ্রেণিগত অবস্থানের কারণেই চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হন। আর অপরদিকে সংস্কারবাদীরা পুরোনো ব্যবস্থা অক্ষত রেখেই সংস্কারের নামে তাতে কিছু চুনকাম করে, যা কার্যত নারীমুক্তির অন্তরায়। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছরেরও বেশি সময়ে এমন এক রাষ্ট্র কায়েম রয়েছে যেখানে নারীদের জীবনের কোনো ধরনের নিরাপত্তা নেই।
গত জুলাই অভ্যুত্থানেও নারীরা অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখলেও সাম্রাজ্যবাদ-সম্প্রসারণবাদ নির্ভর এই পুরুষতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শ্রমিক-কৃষক- নারী- আদিবাসীসহ কোনো নিপীড়িত জাতির মুক্তি হবে না তা আবারও প্রমাণিত হল। নারী নিপীড়নের চিত্র ভয়াবহ থেকে ভয়াবহ মাত্রায় রূপ নিয়েছে। নারী ক্ষমতায়ন/উন্নয়নের গলাবাজী করলেও আদ্যাবধি জমি-সম্পত্তিতে নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে নি, পারেনি সকল শ্রমক্ষেত্রে সমশ্রমে সমমজুরি দিতে।
নারীদের জন্য সকল সেক্টরে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচালয়ের ব্যবস্থা পর্যন্ত করতে পারেনি। ধর্ষণ/গণধর্ষণের অধিকাংশ ঘটনায় দেখা যায় নারীর পোশাক, চাল-চলনের কথা বলে ধর্ষকের পথকে সুগম করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নারী শিক্ষার্থীর সাথে ঘটিত ওড়না কাণ্ডেও দেখা যায় তথাকথিত তৌহিদি জনতা নারীর পক্ষ না নিয়ে বরং হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দিয়ে নারীকে হেনস্থাকারীকে ফুলের মালা দিয়ে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনে।
এই ঘটনায় ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের সাথে প্রশাসনের নতজানু চরিত্র আরও পরিষ্কার হয়। আজ ঘরে বাইরে কোথাও নারী-শিশু নিরাপদ নয়। পুরো বিশ্বব্যাপী নারী নিপীড়নের চিত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বক্তাগণ বলেন, আফগানিস্তানে ধর্মবাদী তালেবান ফ্যাসিবাদী সরকার নারীদের শিক্ষার অধিকার দিচ্ছে না।
ইরানে সঠিকভাবে হিজাব না পড়লে মানসিক হাসপাতালে পাঠানোর আইন করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে অনার কিলিং এর অযুহাতে নারী অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে প্রধানভাবে বলির পাঠা হচ্ছিল নারীরা। কিন্তু এই নিপীড়নের পরও নারীরা বিভিন্ন ভাবে তাদের মুক্তির লড়াই লড়ে যাচ্ছেন।
বুর্জোয়া মিডিয়ার মারফত জানা যায় ভারত, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার নারী গেরিলারা মুক্তির লক্ষ্যে, সামগ্রিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে লড়াই সংগ্রাম করছেন। যাদের থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়ার আছে। বক্তাগণ বলেন, এই সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ নির্ভর পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা অক্ষত রেখে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করলেও নারী-শিশু নিপীড়ন-নির্যাতন- ধর্ষণ- হত্যা বন্ধ করা সম্ভব নয়। প্রকৃত অর্থেই নারী মুক্তির জন্য ও শ্রেণী বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন বর্তমানে চলমান সামগ্রিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করা।