জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভারত থেকে আমদানিকৃত বিভিন্ন ফল, মাছ, টমেটো, পানসহ কয়েকটি পণ্যের ওপর শুল্ক আদায়ে ট্রাকের চাকার স্লাব নির্ধারণ করে দেওয়ায় বেনাপোলে কমেছে এসব পণ্যের আমদানির পরিমাণ। এর ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
ফলসহ এ সব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতীয় ৬ চাকার ট্রাকে ১৮ টন, ১০ চাকার ট্রাকে ২০ টন, ১২ চাকার ট্রাকে ২২ টন, ১৪ চাকার ট্রাকে ২৫ টন, ১৬ চাকার ট্রাকে ২৬ টন পণ্য ধরে শুল্কায়ন করা হয়, যা এনবিআর থেকে প্রজ্ঞাপন (এসআরও) দিয়ে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর নিচে আমদানির ক্ষেত্রে কোনও ধরনের দিকনির্দেশনা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ট্রাকের চাকার স্লাব ঘোষণার আগে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন ফল, মাছ, টমেটো, চাল, পান ইত্যাদি পণ্য প্রায় দেড়শ ট্রাক আমদানি হতো। সেই সময় সরকারের রাজস্ব আয় হতো ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা। আর স্লাব ঘোষণার পর এ জাতীয় পণ্য ২০ থেকে ২৫ ট্রাক আমদানি হচ্ছে। এখানে সরকারের রাজস্ব আয় হচ্ছে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা। এর আগে ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক এসব পণ্য আমদানি হতো। এ হিসাবে সরকারের প্রতিদিন ২০ থেকে ২২ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হচ্ছে
ওই আদেশে বলা হয়, এনবিআর তার নথির ৫(৪), শুল্কমূল্য বিবিধ বিষয়/২০১২/৫৭(১৫), তারিখ ২৭-১০-২০১৬ ঘোষণা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ছাড়া চাকা বেশির কারণে এ যাবৎ আমদানিকারকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত যে টাকা গ্রহণ করা হয়েছে সেই টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।রাজস্ব বৃদ্ধিতে এ উদ্যোগ বলছে বেনাপোল কাস্টমস
এই ঘটনার পর হঠাৎ করে ২০২৪ সালের ২৩ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আবারও একটি ঘোষণা দেয় বিভিন্ন ফল, মাছ, টমেটো, চাল, পান ইত্যাদি আমদানিতে ট্রাকের চাকার স্লাব পুনর্বহালের। এই নির্দেশনার পর আমদানিকারক বেনাপোলের ফেমাস ট্রেডার্সের ইমদাদুল হক আদালতে একটি রিট পিটিশন করেন। যা রায় ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
ফল আমদানিকারক আলেয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. তারেক হোসেন বলেন, ‘এনবিআর নতুন করে আবারও চাকার স্লাব নির্ধারণ করে দেওয়ার ফলে প্রতিট্রাকে অতিরিক্ত ট্যাক্স দেওয়া লাগছে। আর আমরা প্রতিনিয়ত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।’
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউর রহমান জানান, এনবিআরের বেঁধে দেওয়া ট্রাকের চাকার স্লাবের কারণে আমদানিকারকদের অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হচ্ছে। এতে করে আমদানিকারকরা প্রতিদিন মোটা অঙ্কের আর্থিক লোকসানের মধ্যে পড়ছেন। আমদানিকারকরা ফল আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’
এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার কামরুজ্জামান বলেন, ‘চাকার স্লাব সিস্টেম পুনরায় চালুর মূল উদ্দেশ্য হলো শুল্ক ফাঁকি রোধ করা, আমদানিকারকদের যথাযথ শুল্ক প্রদান নিশ্চিত করা এবং জাতীয় রাজস্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। শুল্ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে এবং অবৈধ বা কম শুল্কে পণ্য ছাড়ের প্রবণতা রোধে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।