কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন: নেত্রকোনায় ফিল্মি স্টাইলে মাইক্রোবাস ছিনতাই এবং গাড়ির ড্রাইভার শাহীন আলমকে অপহরণের পর জিম্মি করে রাতভর নির্যাতনের পর গাড়ি বিক্রির চুক্তিনামা তৈরির অপচেষ্টার পর নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার চারজন। ভিকটিম ও ছিনতাইকৃত মাইক্রোবাস উদ্ধার করেছে পুলিশ।
একদিনের রিমান্ড শেষে বুধবার গ্রেফতারকৃত চারজনকে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এরআগে গত রবিবার ভিকটিমের স্ত্রী শারমীন সুলতানা বাদী হয়ে তার স্বামী শাহীন আলমকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবী ও মাইক্রোবাস ছিনতাইয়ের ঘটনায় ১৮৬০ পেনাল কোডের ৩৪৯/৩৪২/৩৭৯/৩৮৫/৩৮৭/৩২৩/৫০৬ ও ৩৪ ধারায় নেত্রকোনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলো- জেলার আটপাড়া উপজেলার লুনেশ্বর গ্রামের মোজাম্মেল হক ওরফে মজনু মিয়ার ছেলে আশিক মিয়া (২৫) এবং নেত্রকোনা পৌরশহরে নাগড়া এলাকার শামছদ্দিনের ছেলে সুমন মিয়া (২৬), বড় কাইলাটির এরশাদ মিয়ার ছেলে শাকিল মিয়া (২৪) ও কুরপাড় এলাকার হাসমত মোস্তফা হাসানের ছেলে পারভেজ হাসান (২৪)।
ভিকটিম শাহীন আলম জানান, গত শনিবার গৌরীপুর উপজেলার গাজীপুর কলতাপাড়া গ্রাম হতে বারহাট্টা উপজেলার ফকিরাবাজার এলাকায় ১৪জন যাত্রী নিয়ে তার নিজস্ব হায়েস মাইক্রোবাসটি নিজেই চালিয়ে আপ-ডাউন ভাড়া নিয়ে আসেন। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ফকিরাবাজার থেকে গৌরীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আনুমানিক সাড়ে ৬টার সময় নেত্রকোনা কুরপাড় কাইলাটি মোড়ে একজন যাত্রী সামান্য অসুস্থ হয়ে পড়লে রাস্তার পাশে গাড়িটি থামান। গাড়ী থেকে কিছু যাত্রীসহ নিজে নামেন। হটাৎ করে কিছু যুবক অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার গাড়িতে থাকা যাত্রীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে গাড়িটি ছিনতাই করে নিয়ে যায় এবং তাকে রাস্তার পাশেই একটা টিনের ঘরে আটকে রাখে। তার কাছে থাকা দুইটি মোবাইল ফোন, ম্যানিব্যাগ, ভোটার আইডি, গাড়ীর অতিরিক্ত একটি চাবী, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নগদ সাত হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
রাতভর ওই ঘরে আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও অস্ত্রের মুখে তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার থেকে স্ত্রী শারমিন সুলতানার মোবাইলে মুক্তিপণ দাবী করে। অপহরণকারীদের দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে গাড়ি এবং কাগজ-পত্র নিয়ে যাওয়ার শর্তে মুক্তি দিবে এমন শর্ত দেয়। তবে মুক্তির পর পুলিশকে যেন না জানানো হয় সেজন্য তাকে চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করতে হবে। অপহরণকারীদের শর্ত অনুযায়ী নেত্রকোনা আইনজীবী সমিতির নিচতলায় জনৈক এডভোকেট সাহেবের নিকট তাকে হাজির করা হয়। জনৈক এডভোকেট সাহেব জোরপূর্বক চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করানোর চেষ্টা করলে তিনি দেখেন তার হায়েস মাইক্রোবাসটি বিক্রয় চুক্তিনামা তৈরি করা হয়েছে। তখন তিনি উক্ত বিক্রয় চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করলে সেখান থেকে জোর করে এডভোকেট সাহেবের মোটরসাইকেলে উঠিয়ে কুরপাড় কাইলাটি মোড়ে সেই টিনের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং অস্ত্রের মুখে তার নিকট হতে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
অপহরণকারী ব্যস্ত থাকার সুযোগে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে একটি অটোরিকশায় উঠে জেলখানার সামনে একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নিয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নেত্রকোনা মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই (উপ-পরিদর্শক) ফরিদ তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে মডেল থানাধীন বলাইনগুয়া এলাকা হতে ছিনতাইকৃত মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো চ ১৫-৮১১২) উদ্ধার করে পুলিশ। ভিকটিমের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
নেত্রকোনা মডেল থানার ওসি মো. আবুল কালাম বলেন, মামলা রুজুর পরপরই পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় একটি চৌকস টিম কাজ শুরু করে দ্রুত সময়ের মধ্যেই ভিকটিমকে উদ্ধার, ছিনতাইকৃত মাইক্রোবাসটি উদ্ধার পূর্বক জব্দ এবং চারজন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করা হয়। আসামীদের আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করা হলে বিজ্ঞ আদালত প্রত্যেককে একদিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের পর বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে বিজ্ঞ আদালত আসামীদের জেল হাজতে প্রেরণ করেন বলে জানান তিনি।