লাগামহীন দ্রব্যমূল্য, মুদ্রাস্ফীতিতে মধ্যবিত্তের পকেট ফাঁকা। সঞ্চয় ভেঙ্গে সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছেন বেশিরভাগ মানুষকে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে মন্দায় তীব্র হয়েছে ডলার সংকট, টান পড়েছে রিজার্ভে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির দাম বেড়েই চলেছে। আমদানি কড়াকড়িতে চাপে পড়েছে পণ্য উৎপাদনও। দেশের সার্বিক অর্থনীতির এমন সংকটকালে স্মার্ট বাজেট নিয়ে আসছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবারের বাজেটের মূল দর্শন হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। স্মার্ট বাংলাদেশ চারটি মূল স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে।
এগুলো হচ্ছে-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি এবং স্মার্ট ইকোনমি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটটি হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে প্রথম বাজেট।
এর মধ্য দিয়ে ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে স্মার্ট যুগে নেওয়ার স্বপ্ন দেখাবেন অর্থমন্ত্রী। যদিও সেখানে পৌঁছতে রয়েছে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা। আগামী বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এ খাতে ১০০ কোটি টাকার একটি তহবিল রাখা হচ্ছে।
এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য, কৃষি, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অর্থবছরের পুরো সময় থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি এবং বাড়ানো হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা।
এছাড়া মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা সমন্বয়ের ঘোষণা থাকতে পারে। তবে বেতনভাতা বাড়ানোর কাজ শুরু হবে বাজেটের পর। ধারণা করা হচ্ছে, ওই সময় সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বেতন বাড়তে পারে, যা কার্যকরের সম্ভাবনা রয়েছে পহেলা জুলাই থেকে। কিন্তু এরপরও সাধারণ মানুষের বড় অংশই মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে আরও পিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। কারণ, এখনো সহনীয় মাত্রায় পৌঁছায়নি নিত্যপণ্যের দাম।
আগামী বাজেটে সবচেয়ে বড় চাপ আইএমএফ-এর ঋণ শর্ত। এই শর্ত পালন করতে গিয়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত কর আদায় করতে হবে জনগণের কাছ থেকে। এজন্য চালু করা হবে সর্বজনীন কর-ব্যবস্থা। অর্থাৎ, কমপক্ষে দুই হাজার টাকা কর প্রত্যেককে গুনতে হবে। স্বাভাবিক জীবনযাপনে ৪৪ ধরনের সেবা পেতে এই কর দিতে হবে। সরকারের আয় বাড়াতে করপোরেট কর কমানো হচ্ছে না এবার।
তবে মূল্যস্ফীতি থেকে লাঘব দিতে ব্যক্তি আয়করসীমা তিন লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা ধার্য করার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া প্লট, ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনার খরচ বাড়বে।
শঙ্কার জায়গা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে এপ্রিল-এই সময়ে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমেছে। এই নেতিবাচক ধারার মধ্যে আগামী অর্থবছরে কর রাজস্ব ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এটি চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৬২ হাজার কোটি টাকা বেশি। কিন্তু কোনো কারণে সেটি আদায় সম্ভব না হলে সরকারের ব্যয় মেটাতে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। আর ঋণ বেশি নেওয়া হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কম হবে। কারণ, ঋণপ্রবাহ কমবে বেসরকারি খাতে। এতে বিরূপ প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানের ওপর।