চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গলে চা-বাগানের ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে ফাগুয়া উৎসব। চা-শ্রমিকদের অন্যতম এই উৎসবে এবার নানা রঙ ছড়ালো মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া চা বাগানে।
ফাগুয়া উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আজ শনিবার বিকালে ফিনলে টি কোম্পানির ফুলছড়া চা বাগান মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রঙ খেলার পাশাপাশি নৃত্য-গীত সহকারে চা শ্রমিকদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাতে স্থানীয়দের পাশাপাশি অংশ নেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও। সবমিলিয়ে শতশত নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানস্থল এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
ফাগুয়া উৎসব পরব বা হোলি নামেও পরিচিত। প্রতিবছর ফাল্গুনের দোল পূর্ণিমা থেকে শুরু করে পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত থাকে এই উৎসবের ব্যাপ্তি। উৎসবকে কেন্দ্র করে শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসেন মেয়েরা। প্রতিটি চা-বাগানে তরুণ-তরুণীরা রঙিন সাজে সেজে নাচের দল নিয়ে বের হন। মাদলের তালের সঙ্গে পাহাড়ি গানের সুর তৈরি করে এক অন্য রকম আবহাওয়া। বাগান কর্তৃপক্ষ ফাগুয়া উপলক্ষে চা-শ্রমিকদের ছুটি ও উৎসব ভাতা দিয়ে থাকে। এদিন ফুলছড়া চা বাগানের মাঠে পরিবেশিত হয় স্থানীয় পত্রসওরা, নৃত্যযোগী, চড়াইয়ানৃত্য, ঝুমুরনৃত্য, লাঠিনৃত্য, হাড়িনৃত্য, পালানৃত্য, ডং ও নাগরে, ভজনা, মঙ্গলানৃত্য, হোলিগীত, নিরহা ও করমগীত।
অনুষ্ঠানে ঘন্টা বাঁজিয়ে ফাগুয়া উৎসব এর উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান ও ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার নীরাজ কুমার জয়সওয়াল- সিলেট।
শ্রীমঙ্গলের উপজেলা চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদারসহ বিদেশী লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
দেউন্দি চা বাগান থেকে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা তরুণী মাহাত্মা গোয়ালা বলেন, আমরা ফাগুয়া উৎসবে এসেছি চা বাগানের গান শুনবো এবং শুনাবো। আমাদের চা বাগানের কালচারগুলো তুলা ধরা হচ্ছে,এতে আমরা গর্বিত। আমি নিজে উদীচীর সঙ্গে জড়িত।’
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক রাজঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জী ও সদস্যসচিব কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা জানান, অনুষ্ঠানটি চা-শ্রমিকদের উদ্যোগে একটি বিশেষ আয়োজন। তিন বছর ধরে পালন করে যাচ্ছি। আগে ১৫দিন ব্যাপী ফাগুয়া উৎসব বাগানে বাগানে পালন হতো এখন ৪ দিনব্যাপী জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী ফাগুয়া উৎসব পালন করা হয়।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহ্সান বলেন, জেলার ৯২টি চা বাগানের কৃষ্টি-সংস্কৃতি যেন কোনোভাবে হারিয়ে না যায়, তার জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে গৃহনির্মাণসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাদের এই সুন্দর সংস্কৃতিকে ধরে রাখা সবার দায়িত্ব।’