২৯ জুলাই ২০২৪। নোয়াখালী ছিল উত্তাল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ত্রাসের যুবশক্তি ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়া ছিল শহরজুড়ে। তবে থেমে থাকেনি কুমিল্লার ছাত্র-জনতা। তারাও সমানভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল।
কারাবন্দি সমন্বয়কদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি, দমন-পীড়ন বন্ধ, কারফিউ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া এবং হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সবার পদত্যাগের দাবিতে ২৯ জুলাই বিকেল ৩টায় নোয়াখালী জিলা স্কুলের সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্র জনতার মুহুর্মুহু প্রতিবাদী স্লোগান স্বৈরাচারের ভিতকে নাড়িয়ে দেয়। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ ঘোষিত এক দফা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয় নোয়াখালীর মানুষ।
সেদিন নোয়াখালী জিলা স্কুলের সামনে মাইজদী প্রধান সড়কে ‘দফা এক দাবি এক, খুনি হাসিনার পদত্যাগ’ স্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়। ছাত্র জনতার আন্দোলনে নোয়াখালীর তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন ও সুধারাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর জাহিদুল হক রনির নেতৃত্বে বারবার আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার ও গুলি করার হুমকিও দেওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। কিন্তু সকল বাধাকে উপেক্ষা করেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সবাই আন্দোলন চালিয়ে যায়।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহীদ আবু সাঈদের ছবি এঁকে তা প্রদর্শন করে স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা।
নোয়াখালী জেলার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী মো. আরিফুল ইসলাম সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বাসসকে বলেন, ‘যখন সারাদেশ থেকে আমাদের সহযোদ্ধাদের মৃত্যুর সংবাদ আসতে লাগলো, তখন আমরা ভেবেছি আমাদের আর পিছু হটার সময় নেই। ‘হয় মুক্তি, নয় মৃত্যু’ এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই আমরা মাঠে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। দিন যতই যাচ্ছে আমাদের উপর নির্যাতন নিপীড়নের মাত্রাও ততই বাড়ছিল। তারপরও সব ভয়কে উপেক্ষা করে আমরা আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দেওয়াসহ সারাদেশে গণহত্যা বন্ধ করা, সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আন্দোলন থেকে প্রত্যাহারের দাবি এবং স্বৈরাচার হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে আমরা অনড় ছিলাম। যদি ৫ই আগস্ট এদেশে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার পতন না হতো তাহলে হয়ত আমাদের অনেকের লাশ ও খুঁজে পাওয়া যেত না।’