ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের(ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনের প্রহসনের প্রতিবাদে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।সোমবার(২৮ জুলাই) সাড়ে ৩ টার দিকে প্রশাসন ভবন চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘সাজিদ তো কবরে, এরপর কি আপনি আমি?’ ‘ময়নাতদন্তের রিপোর্ট চাই!’ ‘লন্ডন কেমন দেখলেন স্যার?’ ‘প্রশাসনের প্রহসন মানি না মানবো না।’ ‘তুমি কে আমি কে সাজিদ সাজিদ।’ ‘তদন্তের অগ্রগতি কতদূর স্যার?’ ‘লাশ ভাসার দশ দিন পর আসায় ধন্যবাদ স্যার!’ ‘next tour কোথায় স্যার?’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্লাকার্ড দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যু স্বাভাবিক কোন মৃত্যু নয়। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে পুকুরে ডুবে তার মৃত্যু হয়নি। তাকে অবশ্যই হত্যা করা হয়েছে। সাজিদের লাশ দীর্ঘ সময় ভেসে থাকলেও সেখানে প্রশাসনের কাউকে পাওয়া যায়নি। তার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানোর সময়ও প্রশাসন লিখিত দিতে চায়নি। প্রশাসনের এই প্রহসন আমরা মেনে নিতে পারছি না। আমরা অতিদ্রুত সাজিদের মৃত্যুর ময়নাতদন্তের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানাই।’
তারা আরও বলেন, ‘ভিসি স্যার দেশের বাইরে ছিলেন। কিন্তু সেখানে বসেও তো তিনি সাজিদের পরিবার বা কাছের বন্ধুবান্ধবদের সাথে কথা বলতে পারতেন, শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে একটা ভিডিও বার্তা দিতে পারতেন। আমরা এটাও জেনেছি যে তার এই সফর কোন সরকারি সফর ছিলো না। তিনি চাইলেই তার সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসতে পারতেন। কিন্তু ভিসি স্যার এগুলোর কিছুই করেননি। প্রশাসনের আচরণে আমাদের এমনটা মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয়নি। প্রশাসনের এমন উদাসীন আচরণের প্রতিবাদে আজকে আমাদের এই মৌন অবস্থান কর্মসূচি।’
প্রশাসনের গঠিত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন জানান, ‘তদন্ত কমিটির কাজ চলমান রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা তদন্ত কাজ শেষ করবো।’
উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, ‘উপাচার্য ক্যাম্পাসে আসা মাত্রই তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানিয়েছি। তিনি আজকেই স্পটগুলো পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবেন। এই সপ্তাহের মধ্যেই ঘটনার আপডেট দেওয়ার জন্য তাকে ইঙ্গিত করেছি।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুলাই বিকেল সাড়ে ৬ টায় শাহ আজিজুর রহমান হল পুকুর থেকে আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ বর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর থেকে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। এই ঘটনাকে কেন্দ্র পরদিন ১৮ জুলাই জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি করে প্রশাসন। অন্যদিকে একইদিনে শহিদ জিয়াউর রহমান হল প্রভোস্ট ড. আব্দুল গফুর গাজীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করে হল প্রশাসন।উভয় কমিটিই ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
গত শনিবার (২৬ জুলাই) সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং ক্যাম্পাসে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিতে ফের বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে সাজিদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে চলতি সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।