নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার গন্ডা পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শ্রী নারায়ণ দত্তের ছেলে বিশ্বজিৎ দত্তের ওপর এক নির্মম হামলা চালানো হয়। মামলায় আসামি করায় স্থানীয় সন্ত্রাসী টিটুর নেতৃত্বে বিশ্বজিৎকে ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে তার কাছ থেকে তিনটি খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর আদায় করে। পাশাপাশি মোবাইল ফোন, ডিসকাভার ১০০সিসি মোটরসাইকেল এবং ৫০,০০০ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
হামলার শিকার হওয়ার পরও শ্রী নারায়ণ দত্তের পরিবার ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করতে পারেনি। ঘটনার পরপরই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা সমাধানের আশ্বাস দিলেও পরিবারটি আজও ন্যায়বিচার পায়নি। পরিবার থেকে ইতোমধ্যে এক হাজার ৪০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে নেতাদের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে। কিন্তু প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন অধরাই রয়ে গেছে। ফলে, পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতা ও হতাশায় দিন কাটাচ্ছে।
শ্রী নারায়ণ দত্তের পরিবারের এই করুণ পরিস্থিতি আমাদের সমাজের বিচারহীনতার একটি প্রতিফলন। মানবাধিকার কর্মী শাহ আলী তৌফিক রিপন বলেন, “ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সাধারণত বিচারপ্রার্থী হতে ভয় পায়। মামলা করলে তাদের ওপর আরও আঘাত আসার আশঙ্কায় তারা নির্যাতন সয়ে থাকে। কিন্তু এই প্রশ্ন সামনে আসে, তাহলে তারা কি ন্যায়বিচার পাবে না? ন্যায়বিচারের অভাব স্বাধীন সমাজের পরিপন্থী।”
এডভোকেট সঞ্জিত কুমার পন্ডিতের মতে, “এই ঘটনা কেবল নারায়ণ দত্তের পরিবারের সমস্যা নয়, এটি বিচারহীনতার একটি উদাহরণ। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।” তিনি আরও বলেন, সমাজের সচেতন নাগরিকদেরও উচিত এই ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে দাঁড়ানো, যাতে এ ধরনের নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়।
এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, “ঘটনাটি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। তবে এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি, পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়, বিচারহীনতার সংস্কৃতি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতা ও ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা নষ্ট করে দিচ্ছে। শ্রী নারায়ণ দত্তের পরিবারের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।