নিজস্ব প্রতিবেদক: দায়িত্ব অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতা, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেয়া, রোগীদের সঠিক সেবা না দেয়া, হাসপাতাল অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দুইটার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে পূর্বধলার সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন।
ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইগনুর সাদিক, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মাহফুজুল হাসান, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সাজু আহমেদ, যুগ্ম-আহ্বায়ক সোলেমান কবির, মো. আলী সিদ্দিক, কলেজ শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম, সংস্কৃতিকর্মী সাকিব খান, ব্যবসায়ী রুবেল শিকদার প্রমুখ।
বক্তারা জানান, মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান গত ২৪ এপ্রিল পূর্বধলায় যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছেন। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে রোগীদের ওষুধ, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, গজ-ব্যন্ডেজ, খাবারপথ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়ে টেন্ডার-বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে। তিনি তাঁর পছন্দের এক ঠিকাদারকে এ সংক্রান্ত কাজ পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে উপজেলার লক্ষ্মীপুর খলিশাপুর গ্রামের মাসুদ আলম নামের এক ব্যক্তি সহকারী জজ পূর্বধলা আদালতে টেন্ডার বাতিল করে পুনরায় টেন্ডারের জন্য মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেন। কিন্তু ইতিমধ্যে তিনি টেন্ডার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছাত্রদলের সদস্য সচিব সাজু আহমেদ বলেন, ‘ওষুধ, রোগীদের খাবার, গজ-ব্যান্ডেজসহ ৯টি কাজের দরপত্র আহবান করা হয়। কিন্তু আমরা জেনেছি এরমধ্যে ওষুধ ছাড়া অন্য চারটি কাজই ময়মনসিংহের ‘রুমান এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠানকে উৎকোচের বিনিময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান পাইয়ে দিয়েছেন। অথচ সর্বনিম্ন দরদাতাকে না দিয়ে চার নম্বরে থাকা রুমান এন্টারপ্রাইজ কাজটি কীভাবে পেল তা আমরা জানতে চাইলে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেনি। তিনি এখনো আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।’
আশরাফুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘মাহমুদুল হাসানের অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসার মান দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হয়না। রাতে জরুরি বিভাগে চিকিৎক থাকেন না। সাধারণ রোগী এলেও তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আমরা এসবের প্রতিকার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। বিধি মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে। কোন অনিয়ম-দুর্নীতি করা হচ্ছে না। আর আদালত থেকে এ ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি। আদালত শুধু জবাব দিতে বলেছেন। যেহেতু নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই টেন্ডার পক্রিয়া চালাতে সমস্যা হওয়ার কথা না।’
নেত্রকোনা সিভিল সার্জন অনুপম ভট্টাচার্য বলেন, ‘হাসপাতালে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠা বিষয়গুলো খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে টেন্ডারের বিষয়ে যতটুকু জানি এই প্রক্রিয়া একার পক্ষে সম্পন্ন করা যায় না। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট মূল্যায়ন কমিটি আছে। সবার সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যদি অনিয়ম হয়ে থাকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’