ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বসত ঘর ভেকু মেশিন দিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী ও সহোদর ভাই সৌমেন্দ্র কিশোর চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এঘটনায় ভুক্তভোগী প্রভাত চন্দ্র জনি দে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের দেবস্থান গ্রামের ভবেস চন্দ্র দে পৈতৃক সুত্রে পাওয়া দেবস্থান মৌজার ৩৯ শতক জমিতে বাড়ি ঘর নির্মাণ করে বিগত প্রায় ১শ বছর যাবত বসবাস করে আসছিলেন। গত ২৫ জানুয়ারি বিকেলে বৃ-দেবস্থান গ্রামের বাসিন্দা মৃত রমেন্দ্র কিশোর চৌধুরীর পুত্র সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী ও সৌমেন্দ্র কিশোর চৌধুরী পূর্ব শত্রুতার জেরে মাটি কাটার ভেকু মেশিন দিয়ে সার্বজনীন কালি মন্দিরের পেছনের টিনের বারান্দা, তিনটি টিন সেট বসতঘর, একটি গোয়াল ঘর, একটি রান্না ঘর ও একটি সাবমারসেবল টিউবওয়েল ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়। এতে করে ভুক্তভোগী পরিবারের প্রায় আট লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়।
এতে পরিবারটি নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সম্প্রতি সুবীর কিশোর চৌধুরী চাকুরি থেকে অবসরে এসে পরিবারের মধ্যে জমি জমার বিরোধ অবসানের জন্য জমি মেপে সীমানা নির্ধারণ করে জমি দখলে নিতে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা শুরু করেন।
এ সময় প্রতিবেশী দুটি হিন্দু পরিবারের বাড়ির কিনারা ঘেঁষে মাটি কাটায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী সৈয়দ নজরুল ইসলাম জানান, সুবীর কিশোর চৌধুরী গত সরকারের আমলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চাকুরীর সুবাদে অনেক অবৈধ অর্থ উপার্জন করে বিদেশে পাচার করেছেন। কানাডায় বেগম পাড়ায় উনার বাড়ি রয়েছে। সেখানে তাঁর ছেলে মেয়েরা পড়াশুনা করছে। তিনি অবসরে এসেই তাঁর ভাইদের সাথে জমাজমি নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন।
তিনি আরো জানান, জনি দে এর বাড়ি ঘরের সাথে একটি মন্দিরেরও কিছু অংশ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেন। এমনকি তাঁর সচিবালয়ের প্রভাব খাটিয়ে জনিকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করার চেষ্টা করছেন। এটা অত্যান্ত দুঃখজনক। সচিবের চাচাতো ভাই সঞ্জয় কিশোর চৌধুরী জানান, তিনি ও তার পরিবার সচিবের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ। তাদের অনেক জমি দখল করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, “থুথু উপরে ফেললে নিজের শরীরেই পড়ে। তাই কিছু বলতেও পারছি না।”
তাছাড়া, এতোদিন প্রতিবেশীরা আমাদের জমিতে ছিল, এখন কেন তাদের বাড়ি ভেঙ্গে দিবে? এবিষয়ে জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী বলেন, ভেকু দিয়ে তাদের বসত ঘর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বরং অনেকদিন যাবত আমাদের জায়গা তাদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছিল। এখন আর দিতে চাচ্ছি না। তাই আমাদের জায়গা বেহাত হওয়ার আশঙ্কায় নিজের জায়গা জমি দখলে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ ছাড়া অন্য কিছু না।
এঘটনায় উপজেলা জামায়ের ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তানহার আলী জানান, ওই দিন রাজিবপুর একটি প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম। পরে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন তাদের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দিচ্ছি এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা কয়েজন গিয়েছিলাম। আমরা সচিব মহোদয়ের পরিবারকে বলেছিলাম এভাবে বাড়িঘর না ভেঙ্গে কয়েকদিন সময় দেয়ার জন্য কিন্তু তাঁরা সময় দেন নি।
তাঁরা বলেন পূর্বে সময় দেয়া হয়েছিল ভুক্তভোগীরা আমলে নেয় নি। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদুল আহমেদ জানান, ভুক্তভোগী পরিবারের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় তহশিলদারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ: সুবীর কিশোর চৌধুরী ১৩ আগস্ট ২০১৭ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব পদে যোগদান করেন।
এর আগে তিনি একই বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর পূর্বে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। এছাড়া, তিনি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন।
একই সাথে, তিনি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সর্বশেষ তিনি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে অবসর নেন। এছাড়া, সুবীর কিশোর চৌধুরীর বড় ভাই ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে তার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।